0 দীপু মনি’র বিশ্বরেকর্ড

মিজানুর রহমান: প্রস্তুত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার দপ্তরের কর্মকর্তাদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। বুকিং ছিল বিমান টিকিট ও হোটেলের। কুয়েত সিটি, জেদ্দা আর রিয়াদে ৬ দিন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর লাগেজ খোলা হয়নি। অপেক্ষায় ছিলেন কখন ডাক আসে সৌদি আরব থেকে। দেশটির একজন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বাকি রেখেই জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় ফিরেছিলেন দীপু মনি। কথা ছিল, অ্যাপয়েনমেন্ট হওয়া মাত্রই মন্ত্রী আবার রিয়াদ যাবেন! গত ২৩শে জুন, রোববার। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনের ঘটনা এটি। মধ্যপ্রাচ্যের দু’টি দেশ সফর শেষে বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র দপ্তরে যান মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আগে থেকেই তার দপ্তরে বসা ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বৈঠক সেরে মন্ত্রী তার দাপ্তরিক কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অধস্তনরা জানান, রাতেই আবার মন্ত্রীকে সৌদি আরব যেতে হতে পারে। সেভাবেই সব প্রস্তুত। সৌদি সরকারের ইনটেরিয়র মিনিস্টারের অ্যাপয়েনমেন্ট পেতে দেরি হওয়া ও ঢাকায় সংসদ অধিবেশন সহ অন্য কর্মসূচিতে যোগদানের বাধ্যবাধকতা থাকায় মন্ত্রী ফিরেছেন। অ্যাপয়েনমেন্ট হলেই তাকে আবার রওনা হতে হবে। রবি ও সোম দু’দিনেও সৌদি মন্ত্রীর অ্যাপয়েনমেন্ট না পাওয়ায় তৃতীয় দিনে (২৫শে জুন) তিনি প্যারিসের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গত সাড়ে ৪ বছর এভাবেই কাটিয়েছেন। দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শহীদ মিনার উদ্বোধন, পুরস্কার গ্রহণ, সভা-সেমিনার, সিম্পোজিয়াম কিংবা একান্ত বৈঠক যে কোন দাওয়াতেই ছুটে গেছেন। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা হলেও স্বামীর বাঁশি শুনতে দিল্লি সফরটি বাতিল করা ছাড়া কখনওই তা গায়ে মাখেননি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত একই ভাবে চালিয়েছেন তিনি। গত ৩ মাসে ৫৫ দিন দেশের আকাশ ও স্থল সীমানার বাইরে কাটিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে লন্ডনে ৩ দিন এবং বেলারুশে দেড় দিন ছাড়া বাকি সময় তিনি তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়েই ছিলেন। সাম্প্রতিককালে তার সবচেয়ে আলোচিত ছিল আজারবাইজান টু যুক্তরাষ্ট্র ভায়া সুইজারল্যান্ড যাত্রা। ১৩ই জুন নিউ ইয়র্কে ইউনেস্কোর উদ্যোগে সংস্কৃতি মন্ত্রীদের ওই আয়োজনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে একমাত্র তিনিই হাজির ছিলেন। সর্বসাকুল্যে ২০ মিনিটের একটি ফটো সেশনের জন্য বাকু থেকে টার্কিশ এয়ারের ফ্লাইটে সেখানে ছুটে যান তিনি। পড়ন্ত বিকালে জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে হালকা খাবার গ্রহণ করে সুইস এয়ার যোগে জেনেভার পথে রওনা হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই উড়াল কূটনীতি নিয়ে তার অনুপস্থিতিতে সংসদে তুমুল আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঢাকায় নাস্তা, দিল্লিতে লাঞ্চ আর নিউ ইয়র্কে ডিনার করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী অহেতুক বিদেশ সফরে গিয়ে জনগণের অর্থের অপচয় করছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের বাজেট কর্তনের দাবিও উত্থাপন করা হয়েছে গত বাজেট অধিবেশনে। দীপু মনির দপ্তর, তথ্য অধিকার আইনে প্রদত্ত বিবরণী ও ঘোষিত সফরসূচি মতে, প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে (২০০৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশ সফর শুরু করেন) গত ৫৪ মাসে (১০ই জুলাই, ২০১৩ পর্যন্ত) ১৮৭টি সফর করেছেন তিনি। এই সময়ে প্রায় ৬০০ দিন দেশের বাইরে কাটিয়েছেন দীপু মনি। বিদেশ সফরে প্রতিবেশী কোন রাষ্ট্র তো নয়ই, এশিয়া, ইউরোপ আমেরিকার প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ভারতের সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা কিংবা পাকিস্তানের হিনা রব্বানি খার কেউই বিদেশ সফরে ১০০ পার হতে পারেনি। সদ্য বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চার বছর মেয়াদে ১১২ দেশ সফরে গিয়ে ৩০৬ দিন বিদেশের মাটিতে কাটিয়েছেন। তার পূর্বসূরিদের অনেকে ২৫-৩০ দিন পর্যন্ত একটানা বিদেশ সফর করলেও কারই ৪০০ দিনের বেশি বিদেশে কাটানোর রেকর্ড নেই। এক মেয়াদে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশ সফর করে সবার রেকর্ড ভেঙেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নয়া রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন মহাজোটের চমক মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য ডা. দীপু মনি!
রহস্যজনক ভ্রমণ বিল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী শামীন হোসেন তার গবেষণার কাজে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশ সফরকারী দীপু মনির সফরের বিস্তারিত বিবরণ (উদ্দেশ্য ও ব্যয়সহ) চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিলেন। গত বছরের শুরুর দিকে তিনি আবেদনটি করেন। বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে মধ্য জুনের দিকে তা হাসিল করতে সমর্থ হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মাধ্যমে ওই গবেষককে একটি বিবরণী সরবরাহ হলেও সেখানে প্রতিটি ভ্রমণে মন্ত্রীর সঙ্গে ক’জন সফরসঙ্গী ছিলেন, তাদের পেছনে রাষ্ট্রের কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। ওই বিবরণীতে শুধুমাত্র মন্ত্রীর (২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে ২০১১-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৭৫টি প্যকেজ ট্যুর (সিঙ্গেল হিসাবে ১১২টি সফর)-এর হিসাব দেয়া হয়। ওই তিন বছরে বিমান ভাড়া, হোটেলের স্যুইট ভাড়া ও অন্যান্য ভাতা বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে মন্ত্রীর একাউন্টে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫৯ টাকা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১২’র জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ১০ই জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রী আরও ৭৫টি সফর করেছেন। মন্ত্রণালয়ের বাজেট বিভাগ সূত্রের দাবি, সফরের মোট হিসাব মন্ত্রীর  দপ্তরে সংরক্ষণ করা হয়। বিল-ভাউচার জমা দেয়ার জন্য এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া আছে। নতুন অর্থ বছরের বিলগুলো ছাড়া সমুদয় বিল স্ব স্ব অর্থবছর থেকে সমন্বয় করা হয়েছে জানিয়ে বাজেট বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী এ পর্যন্ত কত দেশ ভ্রমণ করেছেন, সফরসঙ্গীর মোট সংখ্যা কত, তাদের যাতায়াত, আবাসন, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ইত্যাদিতে রাষ্ট্রের কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তার খাতওয়ারি তথ্য চেয়ে একজন গবেষক আবেদন করেছেন। এর একটি হিসাব বিবরণী তৈরি হচ্ছে। বাজেট বিভাগের ওই কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক কোন হিসাব দিতে পারেননি। তবে তিনি গত মাসে মন্ত্রীর আলোচিত আজারবাইজান টু যুক্তরাষ্ট্র ভায়া জেনেভা ট্যুরের বিলের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ত্রিদেশীয় এ ট্যুরে মন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা প্রত্যেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা করে বিল দেখিয়েছেন। চারজন সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে ছিলেন। তাদের প্রত্যেকের জন্য ইকোনমি ক্লাস ও হোটেলের সাধারণ রুম ছিল। কর্মকর্তা কিংবা অন্য সফরসঙ্গীদের চেয়ে মন্ত্রী কয়েক গুণ বেশি সুবিধা পান। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, বিমানের ফার্স্ট ক্লাসে ভ্রমণ (না পেলে বিজনেস ক্লাস) ও হোটেলে মডারেট স্যুইট (প্রতি রাতের জন্য ২৯৫-৪২০ ডলার) ছাড়াও নগদ ভাতা, হাতখরচ, ট্রানজিট ভাতা, টার্মিনাল ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, প্রতিনিধি দলের দলনেতা হিসেবে আনুষঙ্গিক ভাতা, বিমানবন্দর কর বরাদ্দ দেয়া হয়। ত্রিদেশীয় এ ট্যুরে মন্ত্রীর তরফে প্রায় ১৬ লাখ টাকা বিল করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এমন বিল প্রতি মাসে দু’তিনটি হয়। কাছাকাছি দেশে ভ্রমণের বিল তুলানামূলক কম হয় জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রীর একেকটি প্যাকেজ ট্যুরে (সফরসঙ্গীসহ) ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিল হয়। এসব বিল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে পুরোপুরি রহস্য। পছন্দের এক ট্রাভেল এজেন্সি থেকে সব সময় মন্ত্রী ও তার সফর সংশ্লিষ্টদের টিকিট কেনা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে লাক্সারি বিমান এমিরেটস তার প্রথম পছন্দ। দীর্ঘ দিন এমিরেটসের রিজারভেশনে কাজ করেছেন এমন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, সরকারি বিধি মতে মন্ত্রী বা পদমর্যাদার ব্যক্তিদের যেভাবে টিকিট করা হয় সেখানে একবার লন্ডন যেতে (ঢাকা থেকে বিজনেস ক্লাস, দুবাই থেকে হিথ্রো ফার্স্ট ক্লাস) ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। রুট ভেদে ফার্স্ট ক্লাস প্রিমিয়াম স্যুটের ভাড়া ৮-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় বলেও জানান এমিরেটস এর ওই কর্মকর্তা। এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হোটেল স্যুইটের ভাড়া মওসুম ভেদে কমবেশি হলেও তার কোন ছাপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা তার সফরসঙ্গীদের ভ্রমণ বিলে পাওয়া যায় না বলে দাবি করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা। তথ্য অধিকার আইনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম ৩ বছরের ভ্রমণের যে হিসাব প্রকাশ করেছেন সে প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বাজেট বিভাগে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন এমন এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, তা একান্ত তার নিজস্ব খরচ। তার বহরে থাকা দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের কর্মকর্তা, নির্বাচনী এলাকার লোক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের বিল সমপূর্ণ আলাদা। সব বিল এক সঙ্গে করলে তা ৪০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। ক্ষমতা ছাড়া পর্যন্ত এই অবস্থা  অব্যাহত থাকলে তা ৫০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা দেন তিনি।
শেষ সময়ে সফর-ব্যয় বেড়েছে: দায়িত্ব গ্রহণের ২২ দিন পর থেকে বিদেশ সফর শুরু করেন দীপু মনি। প্রথম যান জেনেভায়। ২০০৯ সালে ৩৪ বার সফরে বের হন তিনি। পরের দুই বছরে এ সংখ্যা আরও বাড়ে। তৃতীয় বছরে তা ৪৪-এ গিয়ে দাঁড়ায়। চতুর্থ বছরে ৪৬। আর চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২৯টি সফর সেরে ফেলেছেন। এখনও প্রায় তিন মাস সময় তার হাতে আছে। আগামী ২৫শে জুলাই প্রাইভেট ভিজিটে ৩ দিনের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন তিনি। এটি তার ১৮৮তম সফর। সফরটির বিষয়ে মন্ত্রীর পিআরও মনিরুল ইসলাম কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঘোষিত সিডিউল মতে, দিল্লি থেকে ফেরার পর তার সৌদি আরব, চীন, ইউক্রেন, মিয়ানমার (ভিভিআইপি), কোস্টারিকা, জাতিসংঘের ৬৮তম অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত সফরের কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বাজেট বিভাগে কর্মকর্তাদের মতে, শেষ সময়ে সফর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি ব্যয়ও বাড়ছে।
দ্বিপক্ষীয় সফর হাতেগোনা: বিগত সাড়ে চার বছরে মাত্র ১৭টি দ্বিপক্ষীয় সফরে গেছেন দীপু মনি। সর্বশেষ জুনের তৃতীয় সপ্তাহে দ্বিপক্ষীয় সফর করেছেন কুয়েত ও সৌদি আরবে। অবশ্য পশ্চিম ও মধ্যপ্রাচ্য অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, আজারবাইজানে একটি সম্মেলনে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে মন্ত্রীর সফরটি হলেও সেখানে দ্বিপক্ষীয় উপাদান ছিল। এর আগে গত ৪ঠা জুন রিয়াদ সফরটিও দ্বিপক্ষীয় ছিল বলে দাবি তাদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছর অনেক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আসে। যেগুলোতে মন্ত্রীপর্যায়ের অংশগ্রহণ তেমন জরুরি নয়। কিন্তু মন্ত্রী কারও পরামর্শ না নিয়েই তাতে যোগ দেন। এতে অনেক ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কোথায় মন্ত্রীর যাওয়া উচিত আর কোথায় অনুচিত তা পররাষ্ট্র সচিব ও সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালকদের ঠিক করার রেওয়াজ। কিন্তু দীপু মনি তা একেবারেই মানেন না। তিনি নিজের সিদ্ধান্ত বরাবরই নিজে নেন। বিগত দিনে যে অনুষ্ঠানে যেতে চেয়েছেন তা চূড়ান্ত করে অধস্তনদের জানিয়ে দিয়েছেন। আর যেখানে যেতে চাননি তার জন্য পরামর্শ করে অন্য কাউকে পাঠিয়েছেন কিংবা বাদ দিয়েছেন।    
ফাইলও বিদেশ ঘুরে, সিদ্ধান্ত পেতে রজনী পার: বিদেশ সফরে ব্যস্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফাইল দেখার সময় নেই। বিমানবন্দর থেকে বাসায় অফিস কিংবা বাসায় আস-যাওয়ার সময়টুকু বরাবরই কাজে লাগান কর্মকর্তারা। রেওয়াজ মতে, পররাষ্ট্র সচিব ও দেশে থাকা মন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তাদের তার আগমন ও প্রস্থানকালে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর  কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতকৃত সারসংক্ষেপ কিংবা নিয়োগ-বদলি, পদায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো আগে থেকে পররাষ্ট্র সচিবের স্বাক্ষর নিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়। যাতায়াত পথে, বাসায় কিংবা বিমানবন্দরে তাতে সই নেয়া নয়। ঘনিষ্ঠরা জানান, কোন কারণে দেশে ফাইল দেখা সম্ভব না হলে মন্ত্রী তা সঙ্গে নিয়ে যান। সে ক্ষেত্রে তার ফেরত আসা পর্যন্ত ফাইল বিমানে বিমানে ঘোরে। এদিকে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহাপরিচালকরা তাকে বিভিন্ন কাজে সরাসরি মেইল করে সিদ্ধান্ত চান। এ ক্ষেত্রেও ভোগান্তি পেতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রী মেইলেই সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য মন্ত্রীর বিমান থেকে নেমে হোটেলে পৌঁছা এবং ফ্রেশ হয়ে মেইল চেক করা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। সময়ের ব্যবধান থাকায় বেশির ভাগ সময় মধ্যরাতে জবাব মেলে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত শেষ রাত কিংবা রজনী পার হয়ে যায় বলেও জানান এক কর্মকর্তা।
অর্জনের ঝুলি শূন্য: সরকারের সাড়ে চার বছরে ২০ বার লন্ডন সফর করেছেন দীপু মনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘সুনির্দিষ্ট’ কোন কর্মসূচি ছিল না সেখানে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে গেছেন দু’বার। বাকি সময় প্রইিভেট ভিজিট। তবে সবচেয়ে বেশি সময় গেছেন তার সন্তানকে সঙ্গ দিতে। অবশ্য তার দপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তার (বর্তমানে বিদেশ মিশনে পোস্টিংয়ে) দাবি, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে মরিয়া জামায়াত-শিবিরের যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রচারণা ঠেকাতে তিনি বার বার লন্ডন সফর করেছেন। মন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাওয়া নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, হাতেগোনা ক’টা দ্বিপক্ষীয় সফর করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে গেছেন ৪৪টি ভিভিআইপি সফরে। এর মধ্যে চলতি বছরে প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে রাশিয়া, থাইল্যান্ড, লন্ডন ও সর্বশেষ পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্ট গত আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন দফা চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে গেছেন। বেশ ক’দিন বিদেশের মাটিতে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেও কোথাও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখা যায়নি। এই দিনগুলোতেও তার সফর থেমে ছিল না। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ১৬বার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন দীপু মনি। ওবামা প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। সিনেট কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠকেও গেছেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এক চুলও এগোয়নি বরং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের রোষানলে থাকায় বরাবরই ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র। হিলারি ঢাকায় এসেও উদ্বেগ জানিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের শ্রমমান ও শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ছিল এবং আছে। বিষয়গুলো নিয়ে বার বার সতর্কতা ও নোটিশ করার পর সমপ্রতি দেশটির বাজারে বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। এবার ইউরোপের বাজার নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও দীপু মনির সমপ্রতি জেনেভা সফরে ইইউ’র তরফে শর্ত জুড়ে দিয়ে শ্রমমান উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা এসেছে। কেবল এই ইস্যু নয়, এর আগেও ১১ বার সুইজারল্যান্ড, ৪ বার জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সিরিজ সফর করেছেন দীপু মনি। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাই প্রোফাইল সফর বিনিময় ছাড়াও কমপেক্ষে ৯ বার এককভাবে ভারত সফরে গেছেন দীপু মনি। বাংলাদেশের বড় উদ্বেগ সীমান্ত হত্যা আজও বন্ধ হয়নি। দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত সীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের বাস্তবায়ন তো দূরে থাক লোকসভার অনুমোদনও আজ পর্যন্ত মিলেনি। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে ভারতের তরফে কোন সাড়া না পেলেও বরাবরই দীপু মানি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সম্পাদনের বিষয়ে আশাবাদী। সব প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার পর আগামী সপ্তাহে ‘ইনফরমাল ডিপ্লোমেসি’ করতে তিনি নয়া দিল্লি যাচ্ছেন। শোনা গেছে, প্রাইভেট ভিজিট হলেও তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছেন। বিশ্বের খুব কম দেশই বাদ গেছে দীপু মনির সফর তালিকা থেকে। ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক মিয়ানমার, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মিশর, চীন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, পর্তুগাল, ভুটান, ইতালি, জাপান, ইরান, কাজাখস্তান, নেদারল্যান্ডস, ভিয়েতনাম, নরওয়ে, কোবা, সাউথ আফ্রিকা, সিরিয়া, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ডেনমার্ক, মরিশাস, ফিলিপাইন, নেপাল, তাজিকিস্তান, জিবুতি, ব্রাজিল, উগান্ডা, বেলজিয়াম, স্পেন, কানাডা, লিথুয়ানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ওমান, তুর্কমেনিস্তান, ব্রুনাই দারুস সালাম, লাটভিয়া- কোথায় যাননি তিনি। ন্যূনতম একবার ঊর্ধ্বে ৪-৫ বার পর্যন্ত গেছেন একেকটি দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তিনি রীতিমতো চষে বেড়িয়েছেন। মিশন কর্মকর্তারা তার খেদমতে অর্থকড়ি ও সময় ব্যয় করেছেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, জনশক্তি রপ্তানি কিংবা কাঠামোগত সংস্কার বা অর্জন- কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জনশক্তি রপ্তানির নতুন বাজার সৃষ্টি তো নয়ই, পুরনো বাজারও হাতছাড়া হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সৌদি আরবে আকামা পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার। তবে ভিসার জন্য কবে উন্মুক্ত হবে তা কেউই জানে না। এত সফরের পরও অর্জনের ঝুলি শূন্য থাকার অভিযোগ মানতে নারাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা। তাদের মতে, দীপু মনি পথ দেখিয়েছেন। তার দেখানো পথ ধরেই সফলতা আসবে। সেই পর্যন্ত দেশবাসীকে অপেক্ষায় থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।    
সংসদ না ভাঙলে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে: চলতি বছরেই দীপু মনির বিদেশ সফরের ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মতে, আগামী ২৪শে অক্টোবর সংসদ ভেঙে দেয়া হবে। ওই দিন মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করবেন। যদি তা না হয় তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিদেশ সফরের ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে ১১ই নভেম্বর। খসড়া সিডিউল মতে, ২০০তম সফরে ওই দিন এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম)-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে তিনি দিল্লি যাবেন। অবশ্য তার আগে আরও এক ডজন সফর করবেন দীপু মনি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজি হননি।

0 হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির(?) নাতি-নাতনিদের অবাঙালি বিধর্মী বিয়ে





মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৩ সদস্যের বহর নিয়ে লন্ডন সফরে রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় খরচে এই সফর। সফরে তার বোন রেহানার মেয়ে টিউলিপের বিবাহ-উত্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিবাহ-উত্তর অনুষ্ঠান উপলক্ষেই মূলত এই সফরের আয়োজন। এই বিয়ের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বোনের পরিবারও বিধর্মীদের সঙ্গে আরও একটি আত্মীয়তায় প্রবেশ করল। শেখ রেহানার ছেলেও বিধর্মী মেয়েকে বিয়ে করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় বিয়ে করেছেন একজন বিধর্মীকে। প্রধানমন্ত্রী মাত্র কয়েক দিন আগে তার ছেলের বউ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বলে জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে উল্লেখ করেন। এই পুত্রবধূ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই গর্ববোধ করেন। তিনি ফতোয়া দিয়েছেন খ্রিস্টানরা আহলে কিতাবি। আহলে কিতাবিদের বিয়ে করা জায়েজ রয়েছে। হয়তো প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বা বোনের মেয়ের জন্য উপযুক্ত বাঙালি কোনো বর, কনে খুঁজে পাননি বা বাংলাদেশের প্রতি তাদের দরদ বেশি! এজন্য বিদেশি ও বিধর্মীদের বিয়ে করে আত্মীয়তার সম্পর্ক সম্প্রসারণ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে পুতুলের জামাতাও বাংলাদেশের ফরিদপুরের বিখ্যাত রাজাকারের নাতি। অর্থাত্ বাঙালি না কেউ-ই। প্রধানমন্ত্রী ও তার বোনের বেয়াই পরিবার হয় বিধর্মী না হয় অবাঙালি। কারণ রাজাকার তো আর বাঙালি হতে পারেন না। এটা হতেই পারে। ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে বেশিকিছু বলা উচিতও নয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির(?) নাতি-নাতনিরা অবাঙালির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলেন। দেশপ্রেমের কথা বলে তারা মানুষের কাছে ভোট চাইতে যান। এজন্যই আসলে কথাগুলো বলা। সেটা যাক।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে রাষ্ট্রীয় টেলিফোনে ব্যক্তিগত কথা বলার কারণে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিবাহ-উত্তর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাষ্ট্রীয় খরচে ৪৩ জনের বহর নিয়ে যুক্তরাজ্য সফর করেন।
এই সফরে বিয়ে অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করছেন ব্রিটিশ কর্তাদের সঙ্গেও। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে।
আসার পর পরই তিনি ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলের সরকার ও নির্বাচনের উদাহরণ দিয়েছেন। বৈঠকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন। অবাধ নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্রিটিশ সরকার দেখতে চায়। এটাই হচ্ছে ব্রিটিশ সরকারের বক্তব্য। জবাবে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলের সরকারের উদাহরণ দেন। ব্রিটেনে বিদায়ী সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ব্রিটেনে ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই গণতন্ত্রের প্র্যাকটিস চলছে। তাদের নাগরিকদের রয়েছে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা। পুলিশ মানবাধিকারকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। মানবাধিকার হরণ নয়, মানবাধিকার রক্ষার জন্য পুলিশ সতর্ক থাকে। ব্রিটিশ সরকারি অফিস-আদালতগুলো চলে তাদের নিজস্ব রুলস্্ অনুযায়ী। আদালতের স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায় সেটা রয়েছে ব্রিটেনে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আদালত আইনের মূল্যায়নে রায় দেয়। এজন্যই মূলত গ্রেট ব্রিটেন।
বিপরীতে বাংলাদেশের আইন-আদালত, পুলিশ পুরো উল্টা অবস্থানে। সরকারি ইশারায় বাংলাদেশে আইন চলে। আদালত আইনকে সরকারের ভাষায় ব্যাখ্যা করে। বাংলাদেশে আইন আদালত নিজস্ব গতিতে চলে না। নাগিরকদেরও কার্যত কোনো অধিকার নেই। সব অধিকার হরণ করেছে সরকার। সুতরাং ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলে পার্লামেন্ট নির্বাচন বাংলাদেশে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
শুধু কি তাই? প্রশ্ন হচ্ছে ব্রিটেনের রাজনীতিবিদ বা প্রধানমন্ত্রী কি সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করেন? ব্রিটেনে কি রাজপথে গণহত্যা চালানো হয়! হত্যাকাণ্ডের পর কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন যে রাস্তায় প্রতিবাদীরা রঙ মেখে শুয়ে ছিল! এখানে নির্বাচনের আগে মিথ্যা কথা বলার কারণে মন্ত্রিত্ব চলে যায়। বর্তমান ব্রিটিশ সরকারেও এ ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির মতো কি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ করেছে? ব্রিটেনে কি শেয়ার মার্কেট লুটপাট হয়! হলমার্কের মতো অখ্যাত কোম্পানিকে কি ব্রিটেনের কোনো ব্যাংক হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে লুটপাটের সুযোগ দেয়? ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগের পর ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশ সফরে যান? বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সৈয়দ আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরে রয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগে যার মন্ত্রিত্ব চলে গেছে, সেই সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী দেশপ্রেমিক হিসেবে সার্টিফিকেট দেন, সঙ্গে বিদেশ সফরে নেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলে সরকারের উদাহরণ দিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, এখানে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেরকম-ই হবে। ব্রিটেনে যেমন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অথচ মাগুরার উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৯৯৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বাংলাদেশে মাসের পর মাস জ্বালাও-পোড়াও চালিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তার দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বসানোর জন্য রাস্তায় লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। গত সপ্তাহে কিশোরগঞ্জে বর্তমান রাষ্ট্রপতির ছেড়ে দেয়া আসনে উপনির্বাচন মাগুরার উপনির্বাচনকে হার মানিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের-ই বিদ্রোহী প্রার্থী। জনগণের ভাষা প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায় না। কারণ কান বিশেষজ্ঞ প্রাণ গোপালের তথ্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কানে সমস্যা রয়েছে। এজন্যই হয়তো জনগণের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয়। চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর সর্বশেষ গাজীপুরেও পরাজয় বরণ করতে হয়েছে সরকারদলীয় প্রার্থীর। এই গণরায় থেকেও প্রধানমন্ত্রী কোনো শিক্ষা নিচ্ছেন না। ১৯৯৫-৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়কের জন্য গো-ধরেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে তার পছন্দের তত্ত্বাবধায়কপ্রধান বানানোর জন্য কী না করেছিলেন সেটা দেশের মানুষ-ই সাক্ষী। এবার তার অধীনে নির্বাচনের জন্য আবার উল্টা গো-ধরেছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের, কষ্ট বাড়ছে দেশের মানুষের।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল পৌনে ৫টায় তিনি লন্ডনে পৌঁছেন। যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছেন সেই হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তার আগমন উপলক্ষে কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি নিয়েছিল ১৮ দলভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। কালো পতাকার সঙ্গে অনেকেই বাড়তি জুতাও নিয়ে আসে। লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীকে প্রদর্শন করা। ব্রিটেনে ইসলামি দলগুলোর অবস্থানও অনেকটা শক্তিশালী। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামা, সেফ বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের রয়েছে অনেক শক্ত অবস্থান। বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মীরা হাজির হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহর থেকে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশী এবং রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা প্রদর্শন করে স্বাগত জানানোর জন্য। জুতাও প্রদর্শন করা হয়েছে কালো পতাকার সঙ্গে। এই কর্মসূচি পালনের জন্য হোটেলের সামনের রাস্তায় তারা অবস্থান নেন। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জড়ো হয়েছিলেন এখানে।
দুই পক্ষই পাশাপাশি অবস্থান নেয়ায় সাময়িক উত্তেজনা ছিল হোটেলের সামনের রাস্তায়। কিছুটা হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। আওয়ামী লীগ ও বিরোধী জোটের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা পুলিশের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্রিটিশ পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। ব্রিটেনের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হয়তো ব্রিটিশ পুলিশকে এরকম পুরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় না কখনও। গত সাড়ে ৬ মাসের নির্বাসিত জীবনে ব্রিটেনের স্থানীয় রাজনীতির পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি কখনও চোখে পড়েনি। পত্রিকার পাতায়ও দেখিনি এরকম কোনো ঘটনা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ব্রিটিশ পুলিশকে তত্পর থাকতে দেখেছি বহুবার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তাপ উত্তেজনা রয়েছে এখানেও। বাংলাদেশে কোনো কিছু হলেই পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের কমিটি রয়েছে ব্রিটেনে। এখানে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা কাজের ফাঁকে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই মূলত রাজনীতি নিয়ে প্রবাসীদের ব্যস্ত থাকা। সবাই থাকেন দেশ নিয়ে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ রয়েছে ব্রিটেনজুড়ে। কিন্তু বাংলাদেশীদের মতো এত রাজনৈতিক উত্তাপ নেই কোনো দেশের মানুষের মধ্যে। সেই উত্তাপ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সফরেও ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ মানুষ কালো পতাকা, জুতা নিয়ে আসেন প্রতিবাদ জানাতে। অন্য কোনো দেশের নাগরিকের মধ্যে এরকম প্রবণতাও নেই। এটাকে আমি মনে করি আমাদের জাতির জন্য একটি লজ্জাও বটে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তারা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন না বাংলাদেশের শাসকরা। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমতকে প্রাধান্য দেয়া হলে হয়তো এরকম হতো না। ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলে সরকার পরিচালনা করলে তো আর এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হোটেলে প্রবেশ করিয়েছেন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। কালো পতাকা এবং জুতা প্রদর্শনের জন্য যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্রিটিশ পুলিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হোটেল-কক্ষে পৌঁছায় পেছনের দরজা দিয়ে। যারা এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের অনেকের কাছেই আমি প্রশ্ন করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর সফরে আপনারা জুতা প্রদর্শন করলেন কেন? উত্তরে একটাই জবাব তাদের। যে দেশে আলেম-ওলামাকে হত্যা করা হয়, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামা হত্যার পর সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেন, লাল রঙ লাগিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীরা রাস্তায় শুয়ে ছিলেন বলে হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করেন, সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আসলে তো কালো পতাকা এবং জুতা ছাড়া আর কিছু দেখানো যায় না। তারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। উপস্থিত সবাই মনে করেন প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্যই তাকে কালো পতাকা এবং জুতা প্রদর্শন করা হয়। ব্রিটেনের পুলিশ এবং যারা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছিলেন সবাই বাংলাদেশের নাগরিকদের এই রকম বিক্ষোভ দেখলেন। তাদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ল না কমল সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। তবে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ বিরাজ করছে সেটা স্পষ্ট। পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই কালো পতাকা কর্মসূচিতে বাড়তি জুতা নিয়ে এসেছেন অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা দলমত নির্বিশেষে স্বাগত জানালে দেখতে ভালো লাগতো। কিন্তু সেটা হয়নি। হওয়া সম্ভবও নয়। কবে বাংলাদেশের মানুষ নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে বিদেশে স্বাগত জানাবে সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সেই অপেক্ষায় থেকেই আজকের লেখা শেষ করলাম।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
nomanoliullah@yahoo.com

0 এইটা যদি সম্পূর্ণটা না পড়েন, কছম জিবনে চরম ১টা জিনিস মিস করবেন...!!



ivwk` wiqvR: mvfv‡i ivbv cøvRv a‡mi 17 w`‡bi gv_vq Mv‡g©›U Kg©x †ikgv‡K D×vi K‡i †mbvevwnbxi RIqvbiv| G wb‡q mviv we‡k¦ ˆn ˆP c‡o hvq| wKš‘ ïiæ †_‡KB wgwWqvi Kv‡iv Kv‡iv m‡›`n n‡Z _v‡K †ikgvi ci‡bi Kvco, Av½y‡ji †QvU bL, ¯^vfvweK `„wó I Zv‡K †ek †d«k _vKvq| Gici †ikgv‡K wmGgGBP nvmcvZv‡j wPwKrmv †`qvi ci wejvmeûj †nv‡Uj I‡qw÷‡b PvKwi †`qv nq| †mB †ikgv GLb Zvi MÖv‡gi evwo †M‡jI Zvi Pvicv‡k m‡eŸ©v”P mZK©Zv i‡q‡Q †hb †Kv‡bv mvsevw`K Zvi m‡½ K_v ej‡Z bv cv‡i| 

BwZg‡a¨ Avgvi †`k AbjvBb ms¯‹i‡Y †ikgv‡K wb‡q GK AbymÜvbx cÖwZ‡e`‡b `vwe Kiv n‡q‡Q ivbv cøvRv febwU a‡mi cÖ_g w`bB †m †ei n‡q Avm‡Z cv‡i| Gbvgyj bv‡gi GK jvBbg¨v‡bi m‡½ †m †ei n‡q Av‡m| wPwKrmv †bqvi ci †m P‡j hvq mvfvi K¨v›Ub‡g›U| Gici mvRv‡bv nq 17 w`b ci †ikgv‡K †di D×vi bvUK| Avgvi †`k AbjvBb ms¯‹i‡Yi cÖwZ‡e`bwU‡Z Gbvgyjmn ivbv cøvRvi †ek K‡qKRb MvW© I Kg©Pvixi mvÿvZKvi †bqv n‡q‡Q|

gvbeRwgb cwÎKvi cÖavb m¤úv`K gwZDi ingvb †PŠayix e‡j‡Qb, Avgiv mewKQy Ki‡Z cvwi bv| mZ¨ I ev¯—e K_v ej‡Z cvwi bv| wZwb e‡jb, ÔAvR‡K ejv n‡”Q †ikgv‡K wb‡q †Kv‡bv msev` cÖPvi Kiv hv‡e bv| Zv‡K GLb cv‡R‡iv Mvwo‡Z K‡i evmvq †cŠu‡Q †`qv n‡”Q K‡Vvi wbivcËvq| GUv †Kb Kiv n‡”Q G¸‡jv Avgiv ej‡Z cvwi bv|Õ kwbevi  gvbevwaKvi msMVb AwaKvi Av‡qvwRZ ÔMYgva¨‡gi ¯^vaxbZvÕ kxl©K A¨vW‡fv‡Kwm mfvq wZwb G gš—e¨ K‡ib|

gwZDi ingvb †PŠayix e‡jb, AvU eQi a‡i UK‡kv Kwi| Avwg †Kv‡bv K_v ewj bv| †evevi gZ e‡m _vwK| †KD wg_¨v Z_¨ w`‡jI cÖwZev` Kwi bv| KviY, Zvn‡j Avgv‡K cÖwZc¶ wn‡m‡e wPwýZ Kiv n‡e| A_P ZviciI wewfbœ gnj Avgv‡K UK‡kv †_‡K miv‡bvi †Póv Pj‡Q|

wZwb e‡jb, ÔAvwg wb‡R †R‡j hvIqvi fq Kwi bv| Z‡e mnKg©x‡`i Rb¨ Avgv‡K K‡¤úÖvgvBR Ki‡Z nq| Gfv‡e K‡¤úÖvgvBR Ki‡Z Ki‡Z Avgv‡`i wcV †`qv‡j †V‡K †M‡Q|Õ

gwZDi ingvb †PŠayix e‡jb, gvngy`yi ingvb‡K ejv nq nVvr m¤úv`K n‡q‡Qb| †Kb wZwb nVvr m¤úv`K n‡Z cvi‡eb bv KÕRb m¤úv`K Av‡Qb nVvr m¤úv`K bb A‡bK m¤úv`K Rxe‡b GK Kjg wj‡Lbwb, wKsev `jxq Ggwc wbe©vPb K‡i‡Qb| ZvivI †Zv m¤úv`K n‡q‡Qb| GLb GbwRIi gvwjKI m¤úv`K n‡q‡Qb|

m¤úv`Kiv gvngy`yi ingv‡bi gyw³i Rb¨ wee…wZ w`‡q mvnmx f~wgKv cvjb K‡i‡Qb e‡jI gš—e¨ K‡ib wZwb| Z‡e wZwb GI e‡jb, Avwg gvngy`yi ingv‡bi gZ mvnmx bB|

GLb †ikgv I‡qw÷b KZ…©c‡ÿi bRie›`x ejv hvq| MZ 6 Ryb I‡qw÷b Av‡qvwRZ GK mvsevw`K m‡¤§j‡b †ikgv‡K wR‡Ám Kiv nq ivbv cøvRv a‡mi ci wZwb jvBbg¨vb Gbvgy‡ji m‡½ †ei n‡q Avmvi ci wZwb Gbvg nvmcvZv‡j wPwKrmv wb‡q‡Qb Kx bv| G cÖ‡kœ Pg‡K †h‡q †ikgv wPrKvi K‡i  e‡jb, Kx ej‡jb? Avevi Zv‡K cÖkœ Kiv nq, Avcwb †h Mv‡g©‡›U KvR Ki‡Zb, IB Mv‡g©‡›Ui jvBbg¨vb Gbvgyj‡K †Zv Avcwb †P‡bb, Zv-B bv? Rev‡e Ôn¨vÕ A_ev ÔbvÕ †Kv‡bv wKQzB bv e‡j cÖm½ cvwë‡q †ikgv e‡jb, Ô Avwg †hLv‡b wQjvg, †mLv‡b Avcwb wQ‡jb bv| ZvB Avgvi †h Kx Kó n‡q‡Q, Avcwb Rv‡bb bv| Avcwb fzj K_v ej‡Qb|Õ Gici I‡qw÷b KZ…©cKÿ †ikgv‡K †Kv‡bv e¨w³MZ cÖkœ Ki‡Z wb‡la K‡i|   

†ikgv‡K cy‡iv cwievimn Av‡gwiKvq wb‡q hvIqvi cÖ‡Póv ïiæ n‡q‡Q| Zv‡K D×v‡ii ci ciB cÖavbgš¿x †kL nvwmbv mvfv‡i hvb Ges †ikgvi wPwKrmvq hv‡Z †Kv‡bv iKg e¨vNvZ m„wó bv nq †m R‡b¨ mvsevw`K‡`i Zvi m‡½ K_v bv ejvi Aby‡iva K‡ib| †ikgv D×vi nevi ciciB cÖavbgš¿x‡K †`L‡Z Pvb| Z‡e mvsevw`K gywbœ mvnv ZLb cÖkœ Zz‡jwQ‡jb, ÔI‡K (†ikgv) GZ †d«k jvM‡Q †Kb? 

hw` †ikgv‡K D×v‡ii welqwU mvRv‡bv NUbv n‡q _v‡K Zvn‡j Gi `vqfvi Kvi? †mbvevwnbxi fveg~wZ© welqwUi m‡½ RwoZ| GQvov mvivwe‡k¦ wgwWqvq †ikgv‡K wb‡q †h †Zvjcvo m„wó n‡qwQj GLb Zv wg‡_¨ n‡j Gai‡bi Av‡qvR‡bi R‡b¨ †`‡ki fveg~wZ© webó n‡e wb:m‡›`‡n| Gai‡bi Ggb A‡bK cÖkœ †Zvjcvo m„wó K‡i‡Q mvaviY gvby‡li g‡b|  

¯’vbxq mgq : 1559 NÈv, 23 Ryb 2013

0 রানা প্লাজা ট্রাজেডি : রেশমা ‘উদ্ধার’ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সাভারের রানা প্লাজা ধসের প্রথম দিনেই বের হয়ে এসেছিলেন আলোচিত গার্মেন্ট কন্যা রেশমা। সামান্য আহত রেশমা এরপর সাভারের একটি হাসপাতালে চিকিত্সাও নেন। আমার দেশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন রেশমার সঙ্গে বের হয়ে আসা নিউ ওয়েব স্টাইল গার্মেন্টের লাইনম্যান এবং রেশমার এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী।
মাত্র চারটি বিসু্কট ও এক বোতল পানি খেয়ে রেশমার দিনের পর দিন বেঁচে থাকা এবং পরিপাটি নতুন পোশাকে উদ্ধার হওয়ার ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক রহস্য সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার সত্যাসত্য সম্পর্কে জানার জন্য অনুসন্ধান চালায় আমার দেশ।
ঘটনাস্থল সাভার, রেশমার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর প্রথম দিনই ভবনের ভেতর থেকে আহত অবস্থায় বের হয় রেশমা। তাকেই আবার কথিত ১৭ দিন পর ‘উদ্ধার’ করা হয়। ‘উদ্ধার’ হওয়া ‘অলৌকিক কন্যা’ রেশমাকে নিয়ে শুধু দেশের মিডিয়াই নয়, আন্তর্জাতিক মিডিয়াও বেশ মাতামাতি করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেশমা উদ্ধারের কাহিনী ছিল একটি সাজানো নাটক। কিন্তু রেশমাকে নিয়ে কেন সাজানো হলো এই নাটক?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই সময়ে হেফাজতের ওপর গণহত্যা, বিরোধীদল দমন-পীড়ন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নিন্দা, উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতাসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন ইস্যু চাপা দিতেই এ নাটক সাজানো হয়।
বিনিময়ে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন দিন আনে দিন খাওয়া রেশমাকে তার হতাশাপূর্ণ জীবনের অধ্যায় শেষ করে আমেরিকা যাওয়া অথবা দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পছন্দের একটিতে ৬০ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়েছে এবং এরই মধ্যে তাকে লোভনীয় বেতনে একটি পাঁচতারা হোটেলে চাকরি দেয়া হয়েছে।
রেশমাকে উদ্ধারের প্রকৃত ঘটনা জানতে তার মা জোবেদা, বোন আসমা, তার গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী, সাভারে ভাড়াটিয়া বাসার মালিক দম্পতি, সেখানকার প্রতিবেশী, রেশমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রুমা, নিউওয়েভ স্টাইল গার্মেন্টের তৃতীয় ফ্লোরের লাইনম্যান এনামুল, ভবনের পাশের ক্যান্টিন মালিক আলম, রানা প্লাজার কয়েকজন দারোয়ান, নিউওয়েভ স্টাইলের তিনতলা ও ৭ তলার শ্রমিক রাজা, ময়না, জসিমসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক, উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া স্থানীয় বহু লোক এবং রানা প্লাজার পাশের মজিদপুরের বহু বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে আমার দেশ।
গত ১০ মে রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষ থেকে রেশমাকে উদ্ধারের দাবি করা হয়। এ ঘটনা সারাবিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। তাত্ক্ষণিকভাবে এমন ‘অলৌকিক ঘটনা’য় বাংলাদেশসহ পুরো দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ বিমোহিত হয়ে পড়েন। একটি জীবনের ‘জয়গানে’ তারা ভুলে যায় ১১২৭টি তাজা প্রাণের লাশ হয়ে যাওয়ার দুঃখ! সর্বত্র চলে হই-হুল্লোড়।
এভাবে অল্প কিছুক্ষণ চললেও সচেতন লোকেরা মোহ কাটিয়ে উঠতে থাকে খুব দ্রুতই। তারা বিশেল্গষণ শুরু করে দেন ‘উদ্ধার’ অভিযানের ঘটনা। খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের পর ওইদিনই ভার্চুয়াল জগতে রটে যায়, ‘রেশমার উদ্ধার একটি নাটক’! ১১শ’ লাশের দুঃখ ভুলিয়ে দিতে আবেগপ্রবণ বাঙালির জন্য এটি মঞ্চস্থ করা হয়েছে!
তাত্ক্ষণিকভাবে এই সন্দেহবাদীদের কথা অনেকে উড়িয়ে দিলেও তাদের তুলে দেয়া কিছু প্রশ্নের কোনো উত্তর কেউ দিতে পারেনি। এসব উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধান শুরু করে দৈনিক আমার দেশ। এরপর থেকেই বের হতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
উদ্ধার হওয়া মেয়েটি কী ‘রেশমা’ না ‘জয়া’, নাকি ‘ফাতেমা’?: ‘উদ্ধার হওয়া রেশমার নাম নিয়েও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। মা বলেছেন নিউওয়েভ গার্মেন্টে তার কার্ডে নাম ছিল জয়া। বোন বলেছে তার নাম জয়া নয়। তার কার্ডে নাম ছিল ফাতেমা। অফিসের লাইনম্যান জানিয়েছেন তার নাম জয়া। রেশমার ভাড়া বাসা বাড়ির মালিক জানেন রেশমা নামে। কিন্তু সেনাবাহিনীর উদ্ধার কর্মীর একটি দল জানায়, তার নাম ‘রেশমা’। কিন্তু তার মা জোবেদা বেগম এবং গ্রামের লোকজন বলেছেন, তার আসল নাম ‘জয়া’।
তাহলে রেশমা নাম এলো কী করে? এ প্রশ্নের জবাবে তার মা বলেন, রেশমা ডাকনাম। কিন্তু ভবন ধসের পর মা ও বোন মিলে প্রকৃত নামেই (জয়া) কার্ড ছাপিয়ে সাভারে গিয়ে তাকে খুঁজেছেন। ওই কার্ডের ছবিও আমার দেশ সংগ্রহ করেছে। তবে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকার ভাড়াটিয়া বাসার মালিক নুরু মিয়া ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম ‘রেশমা’ হিসেবেই তাকে চেনেন।
আবার ‘রেশমা’র বড় বোন আসমা, যিনি তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ স্টাইলে চাকরি জোগাড় করে দেন, তিনি আমার দেশ-কে জানিয়েছেন, ‘রেশমা’ ‘ফাতেমা’ নামে এখানে কাজ নেয়। তার নাম জয়া নয় বলেও জানান আসমা। কারণ হিসেবে জানান, গার্মেন্টেসে জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট দরকার ছিল যা রেশমার ছিল না। তাই অন্য এক ফাতেমার নাম দিয়ে সে ওই গার্মেন্টে কাজ নেয়।
কিন্তু রহস্যজনকভাবে আসল নাম ‘জয়া’ এবং গার্মেন্টে এন্ট্রি করা নাম ‘ফাতেমা’র কথা কেউ বলেননি। এনাম মেডিকেলে ২৪ তারিখ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত আহতদের তালিকায় ফাতেমা নামে একজনের ভর্তি হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। ওই নাম তালিকার প্রথম দিকেই রয়েছে।
২৪ এপ্রিলই রানা প্লাজা থেকে এনামুলের সঙ্গে বের হয়ে আসেন রেশমা : রেশমা তিনতলার যে কোম্পানিতে (নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড) কাজ করতেন, ওই প্রতিষ্ঠানেরই ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গার এনামুল। এনামুল জানান, এ ঘটনার পর থেকেই বাড়িওয়ালার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তবে ভবন ধসে পড়ার পর সে কিছুটা আহত অবস্থায় বের হয়ে আসে। দু’দিন এনাম হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়ে সে গাইবান্ধায় চলে যায়। ১০ মে রেশমা ‘উদ্ধার’ ঘটনার পরে ভেতরে থাকা রহস্যের ব্যাপারে জানার জন্য বহু চেষ্টা করেও এনামুলকে ঢাকায় আনা যায়নি। বিভিন্ন মোবাইল থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। অবশেষে ‘রানা প্লাজায় নিখোঁজ রেশমা নামক একজনের বোন’ পরিচয়ে বেশ কয়েকদিন তার সঙ্গে কথা বলা হয়। যোগাযোগের একপর্যায়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলে অনেক বিষয়ে (মোবাইল নং- ০১৭৭৮০০০৩৩৪) কথা বলেন এনামুল।
একপর্যায়ে নিজের বের হয়ে আসার ঘটনাসহ রেশমার ব্যাপারেও তথ্য দেন। এ সময় এনামুল জানান, তিনি এক রেশমাকেই চেনেন। তার আসল নাম ‘জয়া’ (যাকে ‘১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে’)। এনামুল স্বীকার করেন, এ রেশমা ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের ঘটনার সময় তার পেছন পেছন বের হয়ে আসেন। এ সময় রেশমাও আহত অবস্থায় এনাম হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত এনামুল দুদিন পরে হাসপাতাল ছাড়ার সময় আর রেশমাকে খুঁজে পায়নি। এরপর তার সঙ্গে রেশমার বাড়িওয়ালার যোগাযোগ হয়। বাড়িওয়ালা ফোনে রেশমাকে হাসপাতালে পেয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন এনামুলকে। এনামুলের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তিনি জানান, দুদিন রেশমা এনাম মেডিকেলে ভর্তি ছিলেন। তারপর ওখান থেকে ক্যান্টমেনটে চলে যায় বলে শুনেছি। এরপর আর রেশমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।
কিন্তু এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শুরু করলে সে ফোন কেটে দেয়। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সে ক্ষিপ্ত হয়। আলাপচারিতায় প্রথম পর্যায়ে এনামুল দাবি করে রেশমার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে বিবাহিত জানার পর আর পাত্তা দেয়নি। এনামুলের সঙ্গে এসব কথোপকথনের সব রেকর্ড রয়েছে আমার দেশ-এর হাতে।
অক্ষত গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকেই ‘উদ্ধার’ করা হয়েছিল রেশমাকে : রানা প্লাজা ধসের ঘটনার শুরু থেকে উদ্ধার অভিযানের শেষ পর্যন্ত অক্ষত ছিল গ্রাউন্ড ফ্লোর। গ্রাউন্ড ফ্লোরের চারপাশটা ধ্বংসস্তূপে ঢাকা ছিল মাত্র। তাই ঘটনার দিনই মালিক সোহেল রানাকে আর এস টাওয়ারের ভেতর থেকে জানালা ভেঙে গ্রাউন্ড ফ্লোর দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই একই জায়গা থেকে ১৭ দিন পর রেশমাকেও ‘উদ্ধার’ করার দাবি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, পুরো ৯ তলার ৮টা ফ্লোরের ধ্বংসস্তূপ একসঙ্গে ধসে পড়েনি। তিনতলা পর্যন্ত অক্ষত ছিল কয়েকদিন। পরে বাকি ফ্লোর ধসে পড়লেও গ্রাউন্ড ফ্লোরের ছাদ সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। তাই তিনতলা থেকে কারও বেজমেন্টে পড়ার সুযোগ নেই। এমনকি মসজিদের সঙ্গে সিঁড়ির পথ ধ্বংসস্তূপের কারণে একেবারেই বন্ধ থাকায় কেউ ওই পথে যেতে পারেনি। তাই সিঁড়ির পথ দিয়েও গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে আসার মতো ব্যাপারটিও অবিশ্বাস্য।
শুধু তাই নয়, গ্রাউন্ড ফ্লোরের ছাদ অক্ষত থাকায় উদ্ধার অভিযানের সময় এলাকাবাসী রানা প্লাজার দুপাশের আর এস টাওয়ার ভবন ও গুদামঘর থেকে অক্ষত গ্রাউন্ড ফ্লোর পর্যন্ত সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে নিয়েছিলেন। অথচ রেশমাকে উদ্ধারের পর তাত্ক্ষণিকভাবে বলা হয়, তাকে বেজমেন্টের মসজিদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও বলা হয়, রেশমা ধসের সময় তিনতলায় ছিল। পরে দ্বিতীয় ও গ্রাউন্ড ফ্লোর ধসার পর সে বেজমেন্টের মসজিদে পড়েছিল।
কিন্তু রানা পল্গাজার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা এবং উদ্ধার অভিযানে প্রথম থেকেই অংশ নেয়া স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিক রাজা, আলম, রবিউল, জসিম, মিলনসহ অনেকে জানান, গ্রাউন্ড ফ্লোর ধসেনি। তাই তিনতলা থেকে পড়ে বেজমেন্টের মসজিদে কারও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রেশমাকেও কথিত উদ্ধারের সময় আর এস টাওয়ারের ভেতর থেকে বের করা হয়েছে।
রেশমা উদ্ধারের তিনদিন আগে রানা প্লাজার তিনদিকে ছিল অঘোষিত ‘কারফিউ’: রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনার তিনদিন আগে থেকে ছিল অঘোষিত কারফিউ। ওই তিনদিনে রানা প্লাজার চারপাশে কাউকে ঘেঁষতে দেয়া হয়নি।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিপুলসংখ্যক র্যাব, বিজিবি সদস্য এবং সেনাসদস্য ওই এলাকা ঘিরে রাখে। রানা প্লাজার চারপাশের বাড়িঘরের সামনে গেটে নক করে সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করা এবং কোনোভাবেই বের না হওয়ার জন্য হুশিয়ার করে দেয় তারা।
রানা পল্গাজার সামনে (উত্তর দিকে) ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। পূর্ব-পশ্চিম দিকে মার্কেট ও দোকানপাট এবং দক্ষিণ দিকে মজিদপুর আবাসিক এলাকা। ১০ মে বিকাল সাড়ে চারটায় রেশমাকে উদ্ধারের আগে ৭ তারিখ থেকে রানা প্লাজার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দোকানপাটগুলো সন্ধ্যার পরপরই বন্ধ করে দেয়া হতো। আর দক্ষিণ দিকের আবাসিক এলাকায় সবচেয়ে কাছে থাকা হোসনে আরা বেগমের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দাদের ৭ তারিখ সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। হোসনে আরা বেগমের বাড়ির লোকজনসহ কয়েকটি বাড়ির মালিক জানান, কোনো কারণ ছাড়াই নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন এসে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে ৫-৬ দিনের জন্য এলাকার বাইরে গিয়ে থাকার আদেশ দেন। ফলে তারা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান। ফিরে আসেন রেশমা উদ্ধারের ঘটনার ২ দিন পর। কি কারণে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বলা হয়েছিল সে ব্যাপারেও তাদের জানার কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।
রানা প্লাজার ৩০০ গজ দূরত্বের পর থাকা মজিদপুরের অনেক বাড়ির গেটে সন্ধ্যার পর থেকেই দুজন করে সেনাবাহিনীর সদস্য অবস্থান নিয়ে বাসিন্দাদের দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকার নির্দেশ দেয়। ৮ ও ৯ মে একইভাবে চলে। কিন্তু ১০ মে বিকালে রেশমা উদ্ধারের পর আর কোনো নিরাপত্তা টহল ছিল না ওইসব এলাকায়।
মজিদপুরের ‘কাশেমের দোকান’র মালিক কাশেম মিয়া, ক্যান্টিন মালিক আলম, হোসনে আরা বেগমের বাড়ির লোকজনসহ আরও অনেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর এ ধরনের আচরণে তারা মনে করেছিলেন যে রাতের অন্ধাকারে ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে গাড়ি ভর্তি লাশ গুম করার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে। কারণ শাহীনার ঘটনার পর থেকে দিনের বেলায় লাশ উদ্ধার করার কোনো নজির নেই। সব লাশ উদ্ধার করা হয়েছে রাতের অন্ধকারে।
স্বামীর মারধরের কারণেই রেশমার হাতে দাগ : রেশমাকে উদ্ধারের পর এএফপির ছবি দেখিয়ে অনেককে বলতে শোনা গেছে, ‘এটা নাটক হলে হাতে এতো দাগ থাকত না। ধ্বংসস্তূপ থাকার কারণে হাত থেতলে গিয়ে এমন হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে ২২ মে সকাল ১০টায় দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট এলাকায় রানীগঞ্জ বন্দরের কুশিগাড়ি গ্রামে রেশমার বাড়ি যান স্থানীয় সাংবাদিক মো. মোখলেসুর রহমান সওদাগরসহ আমার দেশ-এর তিন প্রতিবেদক। মাটির দেয়াল ও ছনের চালাবিশিষ্ট ঘরের সামনে বসেছিলেন রেশমার মা জোবেদা বেগম ও খালাসহ স্থানীয় কিছু নারী-পুরুষ। তার আগের দিন সকালে অর্থাত্ ২১ মে রেশমার মা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময় রেশমার মা জোবেদা বেগম তার মেয়ে জামাই কিভাবে মেয়ের ওপর নির্যাতন চালাতো সেসব ব্যাপারে তুলে ধরেন।
অন্যদিকে তার আগে সাভার ব্যাংক কলোনিতে রেশমার ভাড়া বাসার মালিক নুরু মিয়া জানান, স্বামী রাজ্জাকের অমানুষিক নির্যাতনে বাধ্য হয়ে তাকে ডির্ভোস দেয় রেশমা। নুরু মিয়া বলেন, রেশমার হাতে যত দাগ আছে সেগুলো তার স্বামীর সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ। নুরুর স্ত্রী হাজেরা বেগম আরও জানান, রেশমার এক হাতে লম্বা একটা কাটার দাগ আছে, সেটিও রাজ্জাকের নির্যাতনের চিহ্ন। রেশমার স্বামীর নির্যাতনের বর্ণনার ব্যাপারে রেশমার মা ও বাড়িওয়ালার কথার মিল রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের সময় রেশমার হাতে অনেক আগের পুড়ে যাওয়া সিগারেটের দাগ দেখা গেছে। জোবেদা বেগমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রেশমার স্বামী আবদুর রাজ্জাকের বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলার বিরামপুরের ইউনিয়নের মণ্ডপপাড়া গ্রামে। সেখানে সরেজমিনে গেলে আবদুর রাজ্জাককে পাওয়া যায়নি।
বেজমেন্টে কোনো দোকান ছিল না : রেশমার ‘নতুন’ ড্রেস পরার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সেনা কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেখানে সে পড়েছিল সেখানে কয়েকটি কাপড় ও খাবারের দোকান ছিল। ১৭ দিন ধ্বংসস্তূপে থাকার কারণে তার গায়ের কাপড় ছিঁড়ে যাওয়ায় উদ্ধারের আগে সে ওইসব দোকানের একটি থেকে কাপড়গুলো সংগ্রহ করে রেশমা নিজেই গায়ে দেয়।’ কিন্তু রানা পল্গাজার গার্ড রবিউল, আবদুল মজিদ, সাততলার সিকিউরিটি গার্ড মীর দেব, ক্যান্টিন মালিক আলম, স্টোর শ্রমিক সরোয়ার,এবং ভবনে কাজ করা অন্য জীবিত শ্রমিকরা জানান, বেজমেন্টে কোনো দোকান ছিল না। সেখানে ছিল গাড়ি পার্কিং, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার এবং মসজিদ। সাভারের অন্যান্য বহুতল ভবনগুলো ঘুরে দেখা গেছে ওই এলাকায় কোথাও বেজমেন্ট ফ্লোরে দোকান রাখার প্রচলন নেই। আলম জানান, রানা প্লাজা নির্মাণের পর থেকে তার এই ক্যান্টিন। তিনি প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী বেইজমেন্টে কোনো খাবারের দোকান এবং কাপড়ের দোকন ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, একাধিকবার জামা পরিবর্তন করেছেন রেশমা। এমনকি রেশমার দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী তিনি যখন প্রথম তিনতলায় আটকে ছিলেন তখন তার সামনে মাত্র ১০ ইঞ্চি ফাঁকা ছিল। ওই ফাঁকার মধ্যে রেশমার ম্যাচিং করা ড্রেস পড়া অসম্ভব। তাছাড়া তিনতলায় কোনো দোকান ছিল না। ছিল শুধু গার্মেন্ট, যেখানে এ ধরনের পোশাক তৈরি হয় না।
শাহীনাকে উদ্ধারে ব্যর্থতার পর উদ্ধারকারীদের ভিন্ন আচরণ : গার্মেন্ট শ্রমিক শাহীনাকে জীবিত উদ্ধারে ব্যর্থতা নিয়ে মিডিয়ায় সমালোচনা ও এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। ঘটনার পর প্রথমে বলা হয়েছিল, ৭২ ঘণ্টা পর জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় উদ্ধার অভিযান বন্ধ করা হবে। কিন্তু এরপর বিশেষ বিবেচনায় অভিযান চলার সময় ঘটনার ১০৮ ঘণ্টা পরে শাহীনা নামক জীবিত এক মহিলার সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর তাকে জীবিত উদ্ধারের জন্য ২৯ ঘণ্টা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় উদ্ধারকারী দল। ব্যর্থ হওয়ায় এলাকার স্থানীয় উদ্ধারকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় দু’পক্ষ থেকেই ইটপাটকেল ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানান, এর পর থেকেই নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণ অন্যরকম হয়ে যায়। তারা কাউকেই আর ধ্বংসস্তূপের আশপাশে ঢুকতে দেয়নি। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকেও তারা ফেরত পাঠিয়ে দেয়। কোনো কারণ ছাড়াই রানা প্লাজার সঙ্গে গুদামঘর-লাগোয়া মজিদপুর রোডটি বন্ধ করে দিয়ে গুদামঘরের গেট তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়।
শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, রেশমাকে গুদামঘর থেকে ঢোকানো হয়েছে। উদ্ধার দেখিয়ে আরএস টাওয়ার থেকে বের করা হয়েছে। রেশমাকে যাতে কেউ না দেখে সেজন্য সবার দৃষ্টির আড়ালে আগেভাগেই তারা নাটকের মঞ্চ তৈরি করে রাখেন।
এসব ঘটনার সময়ে কোনো সাংবাদিককে রানা প্লাজার ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেয়া হয়নি। দূর থেকে ফুটেজ ও ছবি নিতে হতো।
রেশমাকে উদ্ধারের পর স্থানীয় অনেকে এই প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করেছেন, শাহীনাকে উদ্ধারের ব্যর্থতা ভোলাতে নিরাপত্তা বাহিনী রেশমাকে ‘উদ্ধার’ করেছে।
শুধু রাতের অন্ধকারে উদ্ধার অভিযান নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ : শাহীনার ঘটনার পর থেকে সরকারের উদ্ধারকারীরা দিনের বেলায় কোনো উদ্ধার অভিযান চালায়নি। রাতের অন্ধকারে উদ্ধারকাজ চালানোয় স্থানীয়া ক্ষুব্ধ ছিল। উদ্ধারকাজের আড়ালে অন্যকিছু ঘটছে কিনা এমন সন্দেহ থেকে তারা রাতের বেলা সাভার এলাকায় চলাচলকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি তল্লাশি করে। কিন্তু ৭ মে সন্ধ্যা থেকে অঘোষিত কারফিউয়ের অবস্থা সৃষ্টি করায় ১০ মে রাত পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দারা কোনো গাড়ি তল্লাশি করেনি।
রেশমাকে আমেরিকা পাঠাতে চায় সরকার : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সাজানো নাটক যাতে প্রকাশ না হয়, সেজন্য রেশমাকে বিদেশ পাঠাতে মরিয়া সরকার। এ সুযোগ ছাড়তে নারাজ পরিবারও। তবে তারা চায় রেশমার হাত ধরে সপরিবারে আমেরিকা পাড়ি জমাতে। কিন্তু সরকার চায় শুধু রেশমাকে পাঠাতে। রেশমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জোবেদা বেগম যা বলেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো—‘উদ্ধারের পর প্রধানমন্ত্রী জোবেদা বেগমের হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। রেশমাকে দুটি শাড়ি ও একটি চাদর দিয়েছেন। এছাড়াও গার্মেন্ট মালিকও রেশমাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও অনেকে অনেক টাকা দিয়েছেন (নাম বলতে পারেননি)। রানা প্লাজায় সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী টিমের প্রধান (জিওসি) রেশমার কাছে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, রেশমা কি আমেরিকা যেতে চায়, নাকি দেশে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে যে হোটেল (হোটেল রেডিসন) আছে সেখানে চাকরি করতে চায়? রেশমা বলেছে, সে আমেরিকা যেতে চায় না। দেশে ওই হোটেলে চাকরি চায়। ওই হোটেলে চাকরি করলে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন রেশমার বেতন হবে ৩৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সুবিধাসহ তার মোট বেতন হবে ৬০ হাজার টাকা।’ আপনারা পরিবারের লোকজন কি চান—জানতে চাইলে রেশমার মা বলেন, ‘আমরা বলেছি রেশমা একা যাবে না। গেলে পরিবারের সবাই যাব। রেশমাও তা-ই বলেছে।’
রেশমার লেখাপড়া কী করেছে—জানতে চাইলে জোবেদা বেগম বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়েছে মাত্র। বেশি লেখাপড়া জানে না আমার মেয়ে।’
রেশমার প্রতিক্রিয়া : গত ৬ জুন হোটেল ওয়েস্টিনে যোগদানের সময় সংবাদ সম্মেলনে রেশমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, রানা প্লাজা ধসের সময় তিনি লাইনম্যান এনামুলের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন। দুই দিন তিনি এনাম মেডিকেলেও চিকিত্সা নিয়েছিলেন।
এ কথা শুনে তিনি চমকে ওঠেন। কয়েক সেকেন্ড সময় নেন। তারপর চিত্কার করে বলেন, কী বললেন?
আবার তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি যে গার্মেন্টে কাজ করতেন, ওই গামেন্টের লাইনম্যান এনামুলকে তো আপনি চেনেন, তা-ই না? জবাবে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উত্তর দেননি রেশমা। তবে তিনি লাইনম্যান এনামুলকে অস্বীকারও করেননি। পরে রেশমা বলেন, ‘আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে আপনি ছিলেন না। তাই আমার যে কী কষ্ট হয়েছে, আপনি জানেন না। আপনি ভুল কথা বলছেন।’ এরপর আর কোনো কথা বলেননি রেশমা।
এ সময় ওয়েস্টিনের কর্মকর্তারা বলেন, রেশমাকে কেউ এ ধরনের ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারবেন না।
প্রথম ছবিতেই অসঙ্গতি : রেশমাকে উদ্ধারের পর বার্তা সংস্থা এএফপির ছবিতে দেখা যায়, রেশমার হাতের নখ খুবই ছোট, ১৭ দিন না কাটলে যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বড় হওয়ার কথা। চিকিত্সা বিজ্ঞানের মতে, কেউ দীর্ঘসময় অন্ধকারে থাকার পর তার চোখ তাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাকে আলোতে আনার সময় চোখ বেঁধে আনতে হয়। ধীরে ধীরে তার কাছে আলো সহনীয় হয়ে ওঠে। অন্যথায় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে ৭২ ঘণ্টার পর হঠাত্ করে কেউ আলোতে এলে তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু ৩৯১ ঘণ্টা অন্ধকারে থাকার পর রেশমাকে কেন খোলা চোখে বের করা হলো? টিভির লাইভে দেখা গেছে, স্ট্রেচারে ওঠানোর পর তিনি চঞ্চল দৃষ্টিতে চারদিকে তাকাচ্ছিলেন।
সেনাবাহিনীর কথা : রেশমা ‘উদ্ধার’ প্রসঙ্গে কথা হয় সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গত ৬ জুন তিনি জানান, রেশমাকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ওয়েস্টিনের কর্মকর্তা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক অস্ট্রেলিয়ান এসে নিয়ে যান। রেশমাকে আমেরিকা যাওয়ার এবং হোটেল রেডিসনে চাকরির প্রস্তাব সরকার দিয়েছিল। তবে ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষ রেশমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জোড়ালোভাবে লবিং করায় সরকারও সম্মতি দিয়েছে।’
রেশমা নাটক গোপনে মঞ্চায়নের জন্য অঘোষিত রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ঠিক কী হয়েছিল, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। তবে তার জানামতে, অঘোষিত রেড অ্যালার্ট দেয়া হয়েছিল টেকনিক্যাল কিছু সমস্যার জন্য।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাধারণ উদ্ধারকারী দল চেয়েছিল গর্ত তৈরি করে উদ্ধার অভিযান চালাবে, যা তাদের জন্যই বিপদের কারণ হতে পারে। তাই ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযানের জন্য রেড আ্য্যলার্ট দেয়া হয়েছিল। সেখানে অনেকে বাড়াবাড়ি করেছে ।
রানা প্লাজায় উদ্ধার অভিযান ও রেশমা ‘উদ্ধারে’র পর সংবাদ সম্মেলনসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নেতৃত্বদানকারী সেনা কর্মকর্তা মেজর তৌহিদ উজ জামান আমার দেশকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তারা উদ্ধার অভিযানের সময় কাউকে রাখেননি। এমনকি রেশমাকে তারা সুস্থ করেই ওয়েস্টিনের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এরপর আর রেশমার কোনো দায়দায়িত্ব তাদের হাতে রাখেননি।’

0 শেখ সেলিম, শেখ হেলাল ও কর্নেল ফারুক চাঁদা তোলার চক্র হিসেবে কাজ করতো


0 গার্মেন্টস সেক্টরে সহিংসতার নেপথ্যে আ'লীগঃ ও. কাদেরের JIC ফুটেজ


0 মাহমুদুর রহমান ১৩ দিনের রিমান্ডে : কমান্ডো স্টাইলে আমার দেশ অফিস থেকে গ্রেফতার

আমার দেশ পত্রিকার জননন্দিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) পত্রিকা কার্যালয় থেকে কমান্ডো স্টাইলে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারের পর তিনটি মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। ডিবি কার্যালয়ে তার রিমান্ড চলছে।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের বহুল আলোচিত স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস, পুলিশের কাজে বাধাদান ও মারপিটের অভিযোগ—এ তিনটি মামলায় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশ ২৪ দিনের রিমান্ড চাইলে নিম্ন আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
গতকাল সকাল নয়টার দিকে ১৭ মিনিটের কমান্ডো স্টাইলের অভিযানে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারওয়ানবাজারে অবস্থিত পত্রিকা কার্যালয় থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। অমানবিকভাবে গ্রেফতারের সময় তার সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা দুর্ব্যবহার করেন। অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে নিয়ে যায় পুলিশ। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার সুযোগ চাইলেও তা দেয়নি ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের সময় একটি পবিত্র কোরআন শরিফ ও একটি বই সঙ্গে নিতে পারেন তিনি। গ্রেফতারের পর সরাসরি ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয় মাহমুদুর রহমানকে। সেখানে তার মমতাময়ী মা-সহ পরিবারের সদস্য, আমার দেশ-সহ গণমাধ্যম কর্মী, আইনজীবীরা জড়ো হন। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মাহমুদুর রহমানের মা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা সংগ্রামী মানুষের অধিকারের জন্য লড়ে যাচ্ছে। এজন্য তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমার বাচ্চাটাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে পৃথিবীর কাছে
অনুরোধ করি।’
এদিকে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের লড়াইয়ে সদাজাগ্রত পত্রিকা আমার দেশ-এর সম্পাদককে গ্রেফতারে সারাদেশে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। তাত্ক্ষণিক সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে সাংবাদিক ও আমার দেশ-এর পাঠকরা। দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও আমার দেশ পরিবার।
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, বগুড়াসহ সব জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। আদালতে নেয়া হলে শত শত আইনজীবী মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। তার মুক্তি দাবি করে আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২০১০ সালের ১ জুন পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে ১০ মাস ১৭ দিন কারাবন্দি রাখা হয়। পত্রিকাটিও সে সময় ৪৭ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে আদালতের আদেশে পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।
সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬২টি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেয়া হয়।
গতকাল গ্রেফতারের পর তাকে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথন কেলেঙ্কারি ফাঁসের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় দশ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিন মঞ্জুর করে। একই থানায় সম্প্রতি দায়ের করা দুটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিন করে ১৪ দিন রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিন করে ছয় দিন মঞ্জুর করে। এ দুই মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। এমনকি মামলায় পুলিশি কাজে বাধাদান ও মারধরের যে তারিখ ও সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আমার দেশ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন।
গত ডিসেম্বরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে তার বুিরদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ সময় তাকে গ্রেফতার করার ঘোষণা দেন কয়েকজন মন্ত্রী। গত ৮ জানুয়ারি তিনি উচ্চ আদালতে গেলেও জামিন পাননি। এমনকি তাকে গুম করার গুজবও ওঠে। ওই পরিস্থিতিতে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে মাহমুদুর রহমান প্রায় চার মাস পত্রিকা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন।
গতকাল সকালে মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়। ৮টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৮ মিনিট পর্যন্ত কমান্ডো স্টাইলের অভিযানে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। হঠাত্ ডিবি, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশ’ সদস্য কারওয়ানবাজারে অবস্থিত আমার দেশ পত্রিকা কার্যালয় ঘিরে ফেলে। উপস্থিত সংবাদকর্মীরা জানান, অপরাশেনে অংশ নেয়া অফিসার পর্যায়ের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী।
৮টা ৫১ মিনিটে ডিবি পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য কার্যালয়ের ১১ তলার গেটে অবস্থান নেন। সেখানে গার্ডকে মারপিট করে চাবি কেড়ে নেন তারা। কমান্ডো স্টাইলে সরাসরি সম্পাদকের কক্ষে যান ডিবি সদস্যরা। মাহমুদুর রহমান তখন চা খাচ্ছিলেন। পুলিশ তাকে চা খাওয়া শেষ করতেও দেয়নি। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়তে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কার্যালয় থেকে বের করা হয়। কেবল লুঙ্গি বদলে পাজামা পরার সুযোগ দেয়া হয় তাকে। গ্রেফতারকালে তিনি একটি পবিত্র কোরআন শরিফ সঙ্গে নিতে পারেন।
গ্রেফতারের পর সম্পাদকের কক্ষে তল্লাশির নামে জিনিসপত্র তছনছ করে ডিবি পুলিশ। তারা মাহমুদুর রহমানের ব্যক্তিগত কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা, পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ নথিসংবলিত সাতটি সিডি ও কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, তেজগাঁও থানায় দায়ের করা স্কাইপ কথোপকথন কেলেঙ্কারি মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির বিশেষ একটি দল আমার দেশ কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এরপর তাকে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে মিন্টো রোডে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৭ মিনিটের কমান্ডো অভিযান : ১৭ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নন্দিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আমার দেশ কার্যালয় থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। গতকাল সকালে এ অভিযানে অমানবিকভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। চা পানরত অবস্থায় থাকলেও তাকে চা শেষ করতে দেয়া হয়নি। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার অনুরোধও গ্রহণ করেনি পুলিশ। কেবল লুঙ্গি পাল্টে পায়জামা পরার সুযোগটুকু পান তিনি। ১০ মিনিটে অপারেশন শেষ করার অজুহাত দিয়ে টেনেহিঁচড়ে জনপ্রিয় সম্পাদককে পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সকাল পৌনে আটটার দিকে কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ। সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে ডিবি পুলিশের একটি টিম ১১ তলায় আমার দেশ কার্যালয়ে পৌঁছে। আমার দেশ-এর সব ফোন বিকল করে দেয়া হয়। লিফটে কমপক্ষে ২০ জন এবং সিঁড়ি বেয়ে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য পত্রিকা কার্যালয়ের রিসিপশনে যান। সেখানে গার্ডের কাছে জানতে চান, ‘মাহমুদুর রহমান কার্যালয়ে আছেন কি না।’ গার্ড আবদুর রহমান হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়ে বসার অনুরোধ জানান এবং পুলিশের উপস্থিতি সম্পাদককে জানাতে ইন্টারকম ফোন হাতে নেন। এ সময় ডিবি সদস্যরা রেগে গিয়ে তাকে ধমক দিয়ে গেট খুলে দিতে বলেন। দু’জন সদস্য গেট ভাঙতে জোরে ধাক্কা দেন। এ পর্যায়ে গার্ড আবদুর রহমান দরজা আগলে রাখার চেষ্টা করলে তাকে ঘুষি ও লাথি মারা হয় এবং গেট খুলে দিতে বাধ্য করা হয়।
ডিবি সদস্যরা সরাসরি গিয়ে সম্পাদকের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে সকালের নাস্তা খাচ্ছিলেন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অফিস সহকারী তখন কেবল চা দিয়েছেন তাকে। চা হাতেই মাহমুদুর রহমান ডিবি সদস্যদের বসতে বলেন। উত্তরে তারা বলেন, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।’ মাহমুদুর রহমান তখন তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আপনারা বসুন। আমি দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে নেই।’ এতে একজন ডিবি কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলেন, ‘১০ মিনিটে অপারেশন শেষ করব আমরা। কোনো সময় দেয়া যাবে না।’ এরপর তিনি অনুমতি নিয়ে লুঙ্গি পাল্টে পায়জামা পরেন। গ্রেফতারের সময় একটি কোরআন শরিফ ও একটি বই সঙ্গে নেন মাহমুদুর রহমান।
টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করার সময় আমার দেশ-এর একজন ফটোসাংবাদিক ছুবি তুলতে গেলে তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। নিচে নামানোর পর আমার দেশ-এর একজন সংবাদকর্মী তার সঙ্গে গাড়িতে উঠতে চাইলে পুলিশ তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং একজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র তাক করে গুলির হুমকি দেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘মিথ্যা মামলায় এভাবে অমানবিকভাবে গ্রেফতারের বিচার আল্লাহ করবে। সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।’
গাড়িতে ওঠার পর উপস্থিত সাংবাদিক ও সহকর্মীদের উদ্দেশে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা পত্রিকা চালিয়ে যান, আমার জন্য চিন্তা করবেন না।’ এ সময় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হাস্যোজ্জ্বল ও দৃঢ়চেতা দেখাচ্ছিল। উপস্থিত সাংবাদিকরাও পত্রিকা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মাহমুদুর রহমানকে আশ্বস্ত করেন।

0 ক্ষোভে ফুঁসছে দেশ : মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও আমার দেশ প্রেস খুলে না দিলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি

দৈনিক আমার দেশ-এর নির্ভীক সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে লাখো-কোটি মানুষ। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় বইছে দেশজুড়ে। কেবল দেশেই নয়, বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষায় আপসহীন সিপাহসালার মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে গোটা দেশ অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো দেশজুড়ে প্রচণ্ড বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও মাহমুদুর রহমানের ভক্ত অনুরাগীরা। রসুল (সা.)-এর অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ পূর্বঘোষিত ১৩ দফার পাশাপাশি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও পত্রিকাটির প্রেস খুলে দেয়ার দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলামের লাখো তৌহিদি জনতা। এসব দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। এছাড়া চট্টগ্রাম, রাজধানী ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাদ জুমা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় তৌহিদি জনতার মহাজাগরণ দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের কথা চিন্তা না করে সরকার গুটিকয়েক ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। আল্লাহ, মহানবী ও ইসলাম ধর্মকে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার না করে তাদের অপকর্ম ফাঁসকারী আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সরকার প্রমাণ করেছে তারা নাস্তিক-মুরতাদদেরই সরকার। তারা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, আগে আমাদের দাবি ছিল ১৩টি। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে সরকারি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা। এই ১৪ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তৌহিদি জনতা ঘরে ফিরে যাবে না। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে। প্রয়োজনে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
চট্টগ্রামে লাখো তৌহিদি জনতার বিক্ষোভ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচি : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের ষড়যন্ত্র ও নির্ভীক সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ এবং ১৩ দফা দাবিতে গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল চট্টগ্রাম। হেফাজতে ইসলামের ডাকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে জুমার নামাজ শেষে শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন লাখো তৌহিদি জনতা। এতে হেফাজতে ইসলাম নেতারা সরকারের প্রতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি ও আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেয়ার আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, অন্যথায় দুর্বার আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের অর্থে লালিত দালাল পত্রিকাগুলোকে চট্টগ্রাম ঢুকতে দেয়া হবে না।
তারা হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, নাস্তিক মুরতাদদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আগের ১৩ দফা দাবির সঙ্গে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে সরকারি ষড়যন্ত্র বন্ধ করাসহ এখন মোট দাবি দাঁড়ালো ১৪টি। এই ১৪ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তৌহিদি জনতা ঘরে ফিরে যাবে না।
জুমার নামাজ শেষে নগরীর আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের সামনের সড়কে সমবেত হন লক্ষাধিক তৌহিদি জনতা। সমাবেশ শেষে প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা বিক্ষোভ মিছিল সিরাজউদ্দৌলা রোড হয়ে চকবাজার অলিখাঁ মসজিদের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক মাওলানা ইলিয়াস ওসমানীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাহিত্য ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহার, হেফাজতে ইসলাম নেতা মাওলানা আসগর হোসাইন, মিয়া মুহাম্মদ শরীফ, মাওলানা মুজ্জাম্মেল হক, মাওলানা জালাল, মুফতি আবদুল ওয়াহহাব, খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ, মুহাম্মদ আনোয়ার রব্বানী, মুহাম্মদ ফয়সাল তাজ, মাওলানা ইকবাল খলিল, মুহাম্মদ ইউনুস, মাওলানা আহমদুল্লাহ, মুহাম্মদ জয়নাল কুতুবী, মাওলানা কুতুবুদ্দিন, মুহাম্মদ সগির আহমদ, জাগপা নেতা আবু মোজাফর মুহাম্মদ আনাস প্রমুখ।
হাটহাজারীতে সমাবেশ, মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে সোমবার থেকে দেশব্যাপী হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি : হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারী উপজেলা হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিশাল এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেয়া না হলে দেশব্যাপী আগামী সোমবার হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। আমরা অবিলম্বে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি ও ছাপাখানা খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
জুমার নামাজের পর হাটহাজারী ডাকবাংলো চত্বর থেকে জমায়েত হয়ে হাটহাজারী বাজার, কাচারি সড়ক, কলেজগেট, রাঙামাটি সড়ক হয়ে ডাকাবাংলো চত্বরে এসে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামে সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জি। প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী, মাওলানা জামাল উদ্দীন, মো. শফি মাওলানা মাহমুদুল হুসাইন, শোয়েব মুরশেদ, মাওলানা ইমরান সিকদার, মো. মোরশেদ আলম, মাওলানা নিজাম সাঈদ, মাওলানা আবদুর রহিম, মাওলান আশ্রাফ বিন ইয়াকুব, মাওলানা বেলাল, নুর মোহাম্মদ, মো. রাশেদ প্রমুখ।
এদিকে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে হাটহাজারী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে পৃথক এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন।
রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ : রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, আওয়ামী সরকার নাস্তিক-মুরতাদদের খুশি করতেই আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। লংমার্চের গণজাগরণ দেখে হানিফ ও সৈয়দ আশরাফরা আবল-তাবল বলছেন। হেফাজতে ইসলাম ও ১৩ দফা দাবি নিয়ে তারা যেসব আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন তা প্রত্যাহার না করলে জনগণ তাদের এদেশে থাকতে দেবে না। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে সারাদেশ অচল করে দেয়া হবে। হেফাজতের ১৩ দফা না মানলে ৫ মে ঢাকা অবরোধের মাধ্যমে সরকারকে দাবি পূরণে বাধ্য করা হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। গতকাল বেলা ৩টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উল্টো দিকে হাউজ বিল্ডিং চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে হেফাজতের উপদেষ্টা ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, বর্তমান সরকারের সবাই পাগল হয়ে আবল-তাবল বলছেন। শেখ হাসিনা পাগলিনী। সবাই মিলে তাকে খাঁচায় ঢোকাতে হবে, নইলে সবাইকে সে কষ্ট দেবে। তিনি বলেন, আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের তথ্য প্রকাশ এবং হক কথা বলায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা মাহমুদুর রহমানের জবান বন্ধ করে দিতে চায়, তাদের গোষ্ঠীর জবান বন্ধ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা তওবা করে পাগলিনী হাসিনাকে ছাড়েন, নইলে ঈমান নিয়ে থাকতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সবাই মিথ্যুক। জনগণ আর তাদের ভোট দেবে না, প্রত্যাখ্যান করবে।
খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ৬ এপ্রিলের লংমার্চের পর সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হেফাজতের ১৩ দফা নিয়ে ধোঁকাবাজি করা হচ্ছে। সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে সরকার পার পাবে না। অচিরেই জনগণ এর জবাব দেবে।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার নাস্তিক-মুরতাদদের বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। কারণ মাহমুদুর রহমান নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে কলমযুদ্ধ করেছেন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। সরকারের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব কার্যক্রম প্রকাশ করেছেন। ধর্মদ্রোহের মুখোশ উন্মোচন ও নাস্তিক ব্লগারদের রিবুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কারণেই মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা না মেনে এদেশের মসনদে কেউ থাকতে পারবে না। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবেই।
মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যব বলেন, মাহমুদুর রহমান দেশ, ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে কথা বলেন। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার দেশ বন্ধের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। মাহমুদুর রহমানকে থাকতে হবে, নইলে ৫ মে দেশ অচল করে দেয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, শাহবাগিদের লাঠি মিছিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, ইসলাম জঙ্গি নয়, শাহবাগিরাই জঙ্গি। মাহমুদুর রহমান ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র ছিলেন, এ জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি না দিলে জেলের তালা ভেঙে মুক্ত করে আনা হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা শফিক উদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল করিম, মাওলানা আহমদ আলী, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মাওলানা জুনাইদ গুলজার, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা রেদওয়ান বারী সিরাজী, মাওলানা নূর হোসেন, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা তসলিম আহমদ, খোরশেদ আলম, আবদুল হাফিজ খসরু প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিশাল একটি মিছিল বের হয়ে দৈনিক বাংলা, মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এসে শেষ হয়। এ সময় মিছিলের সামনে ও পেছনে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
খুলনায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ, মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি : খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, আমার দেশ নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে এদেশের ধর্মপ্রাণ কোটি মানুষের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিল। এ কারণে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বেঈমান-মুনাফেক শেখ হাসিনার সরকার গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে এবং রিমান্ডে নিয়ে হত্যার পাঁয়তারা করছে। দেশপ্রেমিক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে বানোয়াট রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে সারাদেশ অচল করে সরকারের পতন ঘটানো হবে।
বিকালে নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি এবং হেফাজতের ১৩ দফা মেনে নেয়ার দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের খুলনা জেলা সভাপতি মাওলানা মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন। বক্তব্য রাখেন মাওলানা নাসিরউদ্দিন কাশেমী, মুফতি গোলামুর রহমান, মুফতি জিহাদুল ইসলাম, মাওলানা রবিউল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল্লাহ জোবায়ের, হাফেজ শহিদুল ইসলাম, মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মাওলানা আলী আহমেদ, মাওলানা রবিউল ইসলাম খান প্রমুখ।
অবরোধে প্রয়োজনে রক্ত দেবে—নারায়ণগঞ্জ হেফাজতে ইসলাম : স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের প্রদত্ত ১৩ দফা দাবি মানা না হলে ৫ মে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অবরোধে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনের স্থানীয় নেতারা। তারা বলেন, লংমার্চে যে বিপুলসংখ্যক লোকজনের সমাগম ঘটেছিল তার চেয়েও দ্বিগুণ লোকের সমাগম ঘটবে ৫ মে। সেদিন সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ও ইসলামী ঐক্যজোট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদাউসুর রহমানের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা হেফাজতের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল হক, সদস্য সচিব আবদুল কাদির, সদস্য আতাউল হক সরকার, ফরিদউদ্দিন, মশিউর রহমান পাভেল, আবদুর রহিম, ইয়াজউদ্দিন, মহিউদ্দিন, আবু মুসা, রহমতউল্লাহ, হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
যশোর সমাবেশে মুফতি ওয়াক্কাস—এ সরকার ধাপ্পাবাজ : যশোর অফিস জানায়, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাস বলেছেন, এই সরকার ধাপ্পাবাজ। সরকার নাস্তিকদের সঙ্গে গিয়ে আল্লাহ ও রাসুল (স.)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পীর-আওলিয়ার এ দেশে নাস্তিকদের শেষ রক্ষা হবে না। তিনি গতকাল দুপুরে হেফাজতে ইসলামের গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। শহরের ভৈরব চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিল বের হয়। এর আগে জুমার নামাজ শেষে শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা মিছিল সহকারে এসে সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে বক্তারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সময়ের সাহসী সন্তান হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, হেফাজতে ইসলাম তথা দেশের ইসলামপ্রিয় মানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন তারা। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। হেফাজতে ইসলাম জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল মান্নান, হারুনর রশিদ কাসেমী, মাওলানা হামিদুল ইসলাম, মাওলানা নাসিরুল্লাহ প্রমুখ।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি, হেফাজতের হরতালে সন্ত্রাসী হামলা ও ১৩ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে গতকাল বাদ জুমা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি লেহাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় রহমান শপিংমলের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন মাওলানা জাকারিয়া, মুফতি নাসির উদ্দিন খান, মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন প্রমুখ। এর আগে জুমার নামাজের পর চান্দনা জামে মসজিদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে ভোগড়া এলাকা হয়ে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের রহমান শপিংমলের সামনে এসে শেষ হয়।
নোয়াখালীতে সমাবেশ-আমার দেশ বন্ধ ও মাহমুদুর রহমানের জেল হলে অন্য মিডিয়াকে চলতে দেয়া হবে না : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল জুমার নামাজের পর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে হেফাজতের বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইসলামের পক্ষে কথা বলায় আমার দেশ বন্ধ ও মাহমুদুর রহমানকে জেলে দেয়া হলে অন্য কোনো পত্রিকা-মিডিয়াকে এ দেশে চলতে দেয়া হবে না। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। হেফাজতে ইসলাম নোয়াখালী শাখার সভাপতি শায়খুল হাদিস নজির আহমদের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি মাওলানা নিজাম উদ্দিন, মাওলানা শিব্বির আহমদ প্রমুখ।
বগুড়া অফিস জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। জুমার নামাজের পর শহরের কলোনি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করতে চাইলে ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতে ইসলাম বগুড়া জেলা শাখার সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন মাওলানা ফজলুল করিম সিরাজী, মুফতি তারেক আজিজ, মুফতি আবদুল ওয়াহেদ, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস প্রমুখ। বক্তারা আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবলিম্বে তার মুক্তির দাবি জানান।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জ শহরে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ। শহরের চৌধুরী বাজার এলাকার নুরুল হেরা জামে মসজিদের কাছ থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন- ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা আবু সালেহ মো. সাদী, মাওলানা আনোয়ার আলী, মহিব উদ্দিন সোহেল ও মাওলানা মাসরুরুল হক প্রমুখ। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তারা গতকাল বাদ জুমা এই মিছিল করেন।
পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর পত্নীতলায় জুমার নামাযের পর হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। বাদ জুমা বিভিন্ন মসজিদ থেকে উপজেলা সদর নজিপুর চারমাথা বাসস্ট্যান্ডে সমবেত হন। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
কেরানীগঞ্জে বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের পৃথক বিক্ষোভ : ঢাকা জেলা প্রতিনিধি জানান, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সব নেতার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন মাস্টারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, আহসান উল্লাহ চৌধুরীসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। সভা শেষে বিকাল সাড়ে ৫টায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এর আগে দুপুরে কেরানীগঞ্জে কদমতলী নূর ইসলাম কমান্ডার চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল করেছে।
দিরাইয়ে হেফাজতের বিক্ষোভ : দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, দিরাইয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। জুমার নামাজের পর দিরাই বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা রোডের রেন্ট্রিতলায় এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তৃতা করেন দিরাই উপজেলা হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে মহানবী সম্পর্কে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবং আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বাদ জুমা শহরের দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আলহাজ মাওলানা মতিউর রহমান কাসেমী, সদস্য সচিব আলহাজ মাওলানা সোহরাব হোসাইন প্রমুখ।
লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ : লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, দুপুরে ১৩ দফা দাবি এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে উত্তর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বক্তৃতা করেন, টুমচর মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হারুন আল মাদানী, মাওলানা ইসমাইল হোসেন, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা জোবায়ের প্রমুখ। বিকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নোয়াখালীর মাইজদীতে হেফাজতের বিক্ষোভ : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী জেলা মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত তাজবিহ পাঠ দোয়া অনুষ্ঠানে আ.লীগ নেতার বাধা প্রদান করায় অজুখানায়, মাঠে ও আশপাশের এলাকায় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় আমল করা হয়। পরে বিকালে জামে মসজিদ থেকে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এদিকে জেলার মসজিদে মসজিদে হেফাজতে ইসলাম, আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের জন্য দোয়া করা হয়। দোয়া শেষে জেলা জামে মসজিদ থেকে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
কক্সবাজারের সর্বত্র বিক্ষোভ : কক্সবাজার জেলার সদরসহ সবগুলো উপজেলা ও কয়েকটি ইউনিয়নসহ জেলার সর্বত্রই বিক্ষোভ করেছে হেফাজতকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল-উত্তর সমাবেশে অবিলম্বে ১৩ দফা বাস্তবায়ন ও মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে বক্তারা। প্রয়োজনে তারা বৃহত্তর কর্মসূচির মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে আনা হবে বলেও হুশিয়ারি দেন।
শেখ হাসিনার মসনদে আগুন জ্বলবে-রাজশাহীতে হেফাজত : অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে শেখ হাসিনার ক্ষমতার মসনদে আগুন জ্বলে উঠবে বলে হুশিয়ারি করেছে রাজশাহীর হেফাজতকর্মীরা। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও ১৩ দফা বাস্তবায়নে ইসলাম ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিকারী নাস্তিক-ব্লগাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বাদ জুমা বিশাল বিক্ষোভ মিছিল-উত্তর সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। এতে বক্তৃতা করেন, বিভাগীয় সভাপতি হাফেজ মাওলানা আবদুস সামাদ, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।
বরিশাল : মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনায় গতকাল বাদ জুমা হেফাজতের উদ্যোগে বরিশালের মসজিদে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের নেতারা জানান, জামে বাইতুল মোকাররম মসজিদ, জামে এবায়দুল্লাহ মসজিদ, জামে কসাই মসজিদ, জামে ওয়াদুদিয়া মসজিদ, বাজার রোড মাদরাসা মসজিদসহ নগরীর বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মসজিদে দোয়া মোনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়।
নাটোর : গতকাল নাটোর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে মিছিল সমাবেশ করেছে হেফাজতকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ বক্তৃতা করেন ইলিয়াস আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট আমেল খান চৌধুরী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সিলেট : গতকাল বাদ জুমা সিলেটের হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার গেটে বিশাল মিছিল-সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল শাহপরাণ মাজার গেটে সমবেত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন থানা হেফাজতের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুস সালাম। বক্তারা অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন।
শেরপুর : বগুড়ার শেরপুরে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকালে সংগঠনের উপজেলা কমিটির উদ্যোগে শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চিলমারী : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে গতকাল বিকাল ৩টায় থানাহাট বাজার জামে মসজিদ থেকে মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল ও মসজিদের সামনে এক সমাবেশে করেন। এতে বক্তৃতা করেন মাওলানা মতিউর রহমান, মো. মাহফুজুর রহমান, কস্ফারী গোলাম মোস্তাফা প্রমুখ।
ওসমানীনগর : সিলেটের ওসমানীনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল বাদ জুমা থানার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোয়ালাবাজারে সমাবেশে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি ও ছাপাখানা খুলে দিন। নইলে পরিণতি ভালো হবে না।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাযতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে কুষ্টিয়া শহরের বড় মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়ে মজমপুর গেটে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তৃতা করেন, জেলা সভাপতি মুফতি আবদুল হামিদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
বাবুগঞ্জ : বরিশালের বাবুগঞ্জে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে উপজেলা হেফাজতে ইসলাম। গতকাল জুমার পর বাবুগঞ্জ বন্দর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তৃতা করেন মাওলানা আনিছুর রহমান, নাসিরউদ্দিন হাওলাদার, মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।
মাহমুদুরকে গ্রেফতার সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ—হেফাজত ইউকে : লন্ডন প্রতিনিধি জানান, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম ইউকে। বৃহস্পতিবার পূর্ব-লন্ডনে হেফাজত ইউকের উদ্যোগে তাত্ক্ষণিক এক প্রতিবাদ সমাবেশে দাবি জানানো হয়। হেফাজতে ইসলাম যুক্তরাজ্যের আহ্বায়ক মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন হেফাজতে ইসলাম ইউরোপের আহ্বায়ক ও জমিয়তে ওলামা ইউরোপের সভাপতি আল্লামা মুফতি শাহ সদরউদ্দিন, মাওলানা শায়খ আসগর হোসেইন, মাওলানা শুয়াইব আহমদ, এম এ মালিক, মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আনাছ, আলহাজ সদরুজ্জামান খান, মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ।

0 দেখে কোনভাবেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।হায়রে মানবতা!!

গত ১৫ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে আল্লামা সাঈদী মুক্তি আন্দোলন ও ইসলাম নির্মূল প্রতিরোধ কমিটির কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচীর শুরুতে আওয়ামীলীগের লেলিয়ে দেওয়া বর্বর পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার গুলি বর্ষণে ৩ জন ভাই শাহাদত বরন করেন। বিক্ষোভ চলার সময়ে একজন মুসল্লিকে ধরার পর এলো পাথাড়ি মারধর করে। এবং কতিপয় অতি উৎসাহী পুলিশ সরাসরি গুলি করে হত্যা করে।

দেখে কোনভাবেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।হায়রে মানবতা!!

কোথায় আজ মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো ভণ্ডরা।আজ আপনাদের মুখ বন্ধ কেন? কবে ভাঙ্গবে আপনাদের ঘুম?মুসলিমদের কি ন্যূনতম অধিকারটুকুও নাই? আফসোস এই সরকার ও জনগন নিজেদের আবার মুসলিম হিসেবেও দাবী করে।
প্রিয় মুসলিম জনতা আসুন এই সব চিহ্নিত পুলিশ রূপি ক্যাডার ও আওয়ামী-বাঁকশালীদের বিরদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

0 মুখে ইসলামের কথা

মুখে ইসলামের কথা আর কাজের বেলায় রগকাটাদের উগ্রবাদ তারাই সমর্থন করতে পারে যারা হয় নিজেরা ভন্ড, নয়তো অর্ধ বা অশিক্ষিত। কিন্তু একজন শ্রদ্ধেয় খতিবকে এভাবে রাস্তায় ফেলে আঘাত করার কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে?

পুলিশ ভাইদেরই একজন হামলাকারীকে প্রথমে থামাতে চাইলেন, পারলেন না, পরে সে যখন মেরেই বসল তখন জোর করে তাদের থামিয়ে 'বেয়াদব' বলে উঠলেন। ভুল এক স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ানো এই ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ। কিন্তু সার্বিক ভাবে, এ কাদের হাতে আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ম দিয়ে রেখেছি আমরা? এ কী খেলা শুরু করল মখা? আর পুলিশ ভাইয়েরাও বা কী করছেন এসব? তারা কি বুঝতে পারছেন বাকশালীরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে বাহিনীটাকে ব্যবহার করে তাদেরকে ক্রমান্বয়ে জনগণের কাছে ঘৃণিত করে তুলছে?

0 একুশ তুমি (২১ শে ফেব্রয়ারী)

একুশ তুমি মহান

একুশ তুমি রক্তে শ্বশান ।

একুশ তুমি এসেছিলে

চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে,

অনেক মায়ের আচল ছিড়ে

বেরিয়ে এসেছিলে রাজপথে ।

একুশ তুমি জানতে হয়তো

তুমি হবে সফল,

তাইতো তুমি বিলিয়ে ছিলে

অনেক মায়ের আশার আছল।

ভাষাই ছিল তোমার আশা

বাঙালীর প্রতি চিল ভরসা,

সার্থক মোরে করবে এরা

বিনিময়ে পাবে মাতৃভাষা ।

স্বীকৃতি তুমি পেলে শেষে

আর্ন্তজাতিক ভাষা হিসেবে,

গর্বিত হল সকল জাতি

ঋনী মোরা সালাম,বরকত তোমাদের প্রতি ।

একুম তুমি কি

যায়না সহজে বোঝা,

তুমি যে মোদের গর্বিত প্রতীক

তোমার জন্য কোটি শহীদ মিনার খাড়া ।

একুশ তুমি অনুপ্রেরনা

তোমার কারনে স্বাধীন আমরা

একুশ তুমি মহান জাতির সৃষ্টিকারী

তোমার কাছে ঋনী আমি ।।

বি:দ্র: কবিতাটি আমার লেখা ১০ ফেব্রয়ারী-২০০৭ সালে।যখন আমি এইচ,এস,সি ১ম বর্ষে শিক্ষার্থী । জানি না আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে , তবে আমি আশাবাদী আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের প্রচেষ্টা হয়তো একটু ভাল লাগলে ও লাগতে পারে আপনার কাছে।

0 শাহবাগের আন্দোলনের দাবী কার কাছে ?

আজকে আমি শাহবাগের সম্মেলনের পুরোটা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখলাম। দেখে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জাগলো....তা হল

১। তারা বলে আন্দোলন সাধারন মানুষের কিন্তু আমি দেখলাম যারা বক্তব্য দিল তারা সব বাম ও ছাত্রলীগের নেতা। তাহলে এরা সাধারন মানুষ কিভাবে হল।

২। অনেক সংগঠন হতে একাত্বতা প্রকাশ করছে , কিন্তু আমি দেখলাম এ সংগঠনের যারা সরকার ও বামপন্থি পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায় তারা একাত্বতা প্রকাশ করছে।

২। তারা সকল দাবী করছে সরকারের কাছে, কিন্তু দাবীকারি ইমরানের পাশে ছাত্রলীগের কেন্দীয় সাধারন সম্পাদক সিদ্দিক তাকে পরামর্শ দিচ্ছে এবং তিনি তা প্রকাশ করছে। সুতরাং সিদ্দিক কি সরকারের একটি পার্ট না?

৩। সরকারের কাছে আবেদন হলে সরকাররে সংসদ সদস্য গিয়ে কার কাছে দাবী করেন?

৪। সরকাররে কাছে দাবী মানে সরকাররে প্রতি আন্দোলন করা , কিন্তু তারা তা করছে না কেন।

৫। সরকাররে প্রতি আন্দোলণ করলে সরকারর যদি শিক্ষকদের মোকাবেলা করতে পারে তা হলে এদের বেলা না কেন?

৬ । সরকারের প্রতি আন্দোলন হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/শিক্ষক ও সরকার সমর্থকরা কেন আসে। তারা কি সাধারন মানুষ?

৭। ছাত্ররীগ কি সাধারন আন্দোলনকারী?

৮। এদের কারনে কেন আমি ১ম ২দিন গিয়ে ও আজ সাধারন মানুষ হিসাবে যেতে পারি না?

0 রাজাকারের উকিল নোটিস

0 নৌমন্ত্রীর ওপর জুতাবৃষ্টি : ঢাকায় আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনে ইসলামী রাজনীতি নিয়ে মন্তব্যের জের

ইসলামী রাজনীতি ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ওপর গতকাল বৃষ্টির ধারার মতো একের পর এক জুতা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ সময় তাকে ‘কুত্তা’সহ বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগে ভর্ত্সনা করা হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে একপর্যায়ে পালিয়ে যান মন্ত্রী শাজাহান খান।
গতকাল সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব চত্বরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে জুতা নিক্ষেপের শিকার হন শাজাহান খান। মুহুর্মুহু জুতা নিক্ষেপের কারণে এ সময় সেখানে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান অতিথির বক্তব্যের একপর্যায়ে মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘ইসলাম পবিত্র ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এ ধর্ম নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করুন। রাসুল (সা.) ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেননি। কোরআনের কোথাও ধর্মীয় রাজনীতির কথা নেই। কোরআনে এ সম্পর্কে কোনো আয়াত নেই। রাসুল (সা.) ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পছন্দ করতেন না। তিনি এ কাজটি কখনও করেননি।’
তখন মুসল্লিদের মধ্য থেকে একজন দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করেন এবং জানতে চান, মুসলমান হিসেবে মন্ত্রী কেন তাহলে রাজনীতি করছেন। এ সময় অন্য মুসল্লিরাও মন্ত্রীর এ কথার ব্যাখ্যা দাবি করে হইচই করতে থাকলে মন্ত্রী কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে উত্তেজিত বক্তব্য রাখলে মুসল্লিরা তাকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ সময় মন্ত্রীসহ অনেকের গায়ে জুতা গিয়ে পড়তে থাকে। মুসল্লিরা উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘আমরা তোমাকে চাই না, ওকে আনছেন কেন, কুত্তা এখান থেকে ভাগ।’ এ সময় বৃষ্টির মতো জুতা নিক্ষেপ হতে থাকে মঞ্চে।
অবস্থা বেগতিক দেখে মন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজন মন্ত্রীকে দ্রুত মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। অতি দ্রুত তিনি ইমলামিক ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। এ সময় পেছন থেকে মুসল্লিরা ‘ধর ধর’ আওয়াজ দিতে থাকেন। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পরও মুসল্লিরা বলতে থাকেন যে, ‘জুতা মারছে, একেবারেই রাইট করছে। গালে দুইটা মারা দরকার ছিল।’
এ ঘটনায় সেখানে উপস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজলসহ আয়োজকরা হতভম্ব হয়ে যান। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর দেখা যায় মঞ্চে বহু জুতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যেগুলো মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের মতো ক্ষমতাধর শাসকদের ওপর জুতা নিক্ষেপ করা হলেও বাংলাদেশে কোনো মন্ত্রীর ওপর জুতা নিক্ষেপের এটাই প্রথম ঘটনা, যার শিকার হলেন মহাজোট সরকারের একজন দাপুটে মন্ত্রী।
এর আগে অনুষ্ঠানে শাজাহান খান আরও বলেন, বিশ্বের অনেক স্থানের চেয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরা বেশি ধর্মপরায়ণ। শেখ মুজিব ও তার মেয়ে শেখ হাসিনাও ইসলামের অন্যতম খেদমতকারী।
গতকাল বেসরকারি সংগঠন আন্তর্জাতিক কোরআন রিসাইটেশন অ্যাসোসিয়েশনের (ইকরা) উদ্যোগে আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলন বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ ছাড়া মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, ব্রুনাইসহ ৭টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। জানা গেছে, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইরান সংস্কৃতি কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা এবং ইকরার চেয়ারম্যান কারি ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মূল অংশের বাইরে পূর্ব চত্বরে বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। এতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। তবে বাদ মাগরিব প্রতিযোগিতার মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
জুতা নিক্ষেপের ঘটনার পরপরই তার সঙ্গে ইফা ডিজি শামীম মো. আফজলও চলে যান। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর বাদ এশা ফের কিরাত প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
এ ব্যাপারে মন্ত্রী শাজাহান খান ওই অনুষ্ঠানে ঝামেলা হয়েছে উল্লেখ করে আমার দেশ-কে বলেন, এটা জামায়াতি চক্রান্ত। বহির্বিশ্বের ৭টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে এ ঘটনার মাধ্যমে এদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।

0 সরেজমিনহামলাকারীদের অতীত কীর্তি

বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত শাকিলের বাবা আনছার আলী লজ্জায়, গ্লানিতে মুখ দেখাতে পারছেন না। এখন ছেলের শাস্তি হলেই শান্তি পাবেন বাবা আনছার আলী। একইভাবে সন্তানের শাস্তি চান ইমদাদের মা জোহরা বেগম। 'ইমদাদ যে মায়ের বুক খালি কইরেছে, তার জন্যি কষ্ট হচ্ছে,' কালের কণ্ঠকে বলেন জোহরা। মাদ্রাসাশিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলে মাহফুজুর রহমান নাহিদকে পাঠিয়েছিলেন ঢাকায়। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে ছেলের অংশ নেওয়ার খবরে রীতিমতো শয্যাশায়ী নাহিদের বাবা। এদিকে অভিযুক্ত ইমদাদুল হকের স্বভাব-চরিত্র যে আগে থেকেই ভালো ছিল না, কলেজজীবনে লজিং থাকার সময়ই সে গৃহকর্ত্রীকে নিয়ে পালিয়েছিল, তা জানা যায় তার স্বজন ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি গিয়ে এসব তথ্য তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। সেসব তথ্য জানিয়েছেন কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
শাকিল : 'ওই রাতে ওর হাতে অস্ত্র, মাদক আর বেপরোয়া চলাফেরা দেখে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। পরে আর যোগাযোগই রাখিনি', বলছিলেন অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম শাকিলের ছোটবেলার বন্ধু মনিরুল ইসলাম মনির। তিনি জানান, শাকিলের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই তাঁর যোগাযোগ হতো। ২০১০ সালের মাঝামাঝি ঢাকায় এক রাতে তিনি শাকিলের সঙ্গে ছিলেন। ওই রাতে শাকিল ৮-১০ জন বন্ধু নিয়ে মাদক সেবন করে। বন্ধুদের সবাই ছিল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং তাদের মধ্যে ছয়জন ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তবে চাপাচাপির পরও মনির কোনো মাদক সেবন করেননি। মনির জানান, শাকিল পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পাসের পর চলে যায় ঢাকা। সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে ভর্তি হয়।
পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিস রোড এলাকায় শাকিলদের বাড়ি। বাবা আনছার আলী এমএলএসএস পদে কর্মরত ছিলেন পটুয়াখালী আয়কর অফিসে। ২০০৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাখেরগঞ্জ উপজেলার মহেশপুরা গ্রামে। তাঁর দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী শাহিদা বেগমকে নিয়ে পটুয়াখালী থাকেন। শাকিলের বড় ভাই শাহিন পটুয়াখালী পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিলের বাবা আনছার আলী বলেন, 'আমি ওকে (শাকিল) লেখাপড়া করার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি, সন্ত্রাসী বা মাস্তানি করতে না। ওর কর্মকাণ্ড টেলিভিশনের পর্দায় দেখে সমাজে এখন আর মুখ দেখাতে পারছি না। আমি চাই ওর উপযুক্ত শাস্তি হোক। এ সন্তান থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো।'
মাহফুজুর রহমান নাহিদ : বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামে। বাবা মাওলানা আবদুর রহমান স্থানীয় দক্ষিণ জয়নগর হোছাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মাহফুজ ২০০১ সালে দাখিল এবং ২০০৩ সালে আলিম পাস করার পর ঢাকায় চলে যায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স শেষে বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। গত জুলাই মাসে বরিশালে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে পরীক্ষা দেয় মাহফুজ।
গ্রামের বিভিন্ন সূত্রমতে, আলিমে পড়া অবস্থায়ই সহপাঠীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় মাহফুজ। কিন্তু বাবা ও বড় ভাইয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে সক্রিয় রাজনীতি করা হয়নি তার। ঢাকায় যাওয়ার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় সে।
মাহফুজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার বৃদ্ধ বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা আবদুর রহমান এ ঘটনা শোনার পর থেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। স্বজন-প্রতিবেশী কারো সঙ্গেই কথা বলছেন না। একই অবস্থা মাহফুজের মা সামসুন নাহারের।
স্বজনরা বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসাশিক্ষক বাবা তাঁর ছেলেকে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক বানাতে উচ্চশিক্ষার জন্য রাজধানী ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। আর সেই ছেলে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করছে- এমন দৃশ্য দেখার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা মাওলানা আবদুর রহমান। মা সামসুন নাহার ছেলের জন্য বিলাপ করতে করতে এখন নির্বাক। এ ঘটনায় হতবাক মাহফুজের সহপাঠী, প্রতিবেশী, স্বজন সবাই।
বড় ভাই মাকসুদুর রহমান জানান, মাহফুজের এই কর্মকাণ্ড দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে তাঁদের পরিবার। ছেলের (মাহফুজের) এমন কাজে স্থবির হয়ে গেছে পুরো পরিবার। কী কারণে মাহফুজ এমন নৃশংস কর্মকাণ্ডে জড়িত হলো, তা জানা নেই পরিবারের কারোই।
ইমদাদুল হক : যশোরের শার্শা উপজেলার পাঁচকায়বা গ্রামের গরিব কৃষক আকরাম আলীর সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে ষষ্ঠ ইমদাদুল। মাঝবয়সী মা জোহরা বেগম সন্তানের নৃশংসতার কথা প্রতিবেশীর কাছে শুনেছেন। গতকাল যশোর শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ইমদাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা জোহরা মলিন একটি শাড়ি পরে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, 'ইমদাদ যে মায়ের বুক খালি কইরেছে, তার জন্যি কষ্ট হচ্ছে। কোন শয়তান ওর ওপর ভর করিছিল, তা আল্লায় জানে। ছাওয়ালডা ঢাকায় যাইয়ে সঙ্গদোষে খারাপ হইয়েছে।' জোহরা আরো বলেন, 'তোমরা যা ভালো মনে করো, তাই করো। ছেলের শাস্তি দিলে দাও।'
ইমদাদের বাবা তিন বছর আগে মারা গেছেন। ইমদাদের ভাই জাকির জানান, 'সে ঢাকায় ছাত্রলীগ করত এবং কোনো একটি হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল বলে আমাদের বলেছে।'
ইমদাদের ভগ্নিপতি নরিম আলী বলেন, কলারোয়া উপজেলার কাজীরহাট কলেজে লেখাপড়া করার সময় এলাকার এক গ্রামে লজিং থাকত ইমদাদ। সে একদিন গৃহকর্তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে সালিসে মীমাংসা হয়।
বাইকোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, 'ইমদাদ আমাদের স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। ও নম্র-ভদ্র ছিল। কোনো অভিযোগ শুনিনি তারা বিরুদ্ধে।' এলাকার ইউপি সদস্য নিজামুদ্দিন বলেন, 'ইমদাদ বাড়িতে খুব কম আসত। গ্রামে তার নামে কোনো অভিযোগ শুনিনি।' শার্শা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই সোমেন কুমার বিশ্বাস বলেন, 'ইমদাদকে ধরার জন্য তার গ্রামের বাড়িসহ সম্ভাব্য সব স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তার নামে থানায় কোনো অভিযোগ আছে কি না, তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।'
ওবায়দুল কাদের তাহসীন : বাড়ি নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার পৌর এলাকার চরকৈলাশ গ্রামে। পরিবার জামায়াত-শিবিরের সমর্থক। বাবা মাওলানা মো. মহিউদ্দিন স্থানীয় আজহার উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তিনি একসময় ছাত্রশিবির হাতিয়া উপজেলার সভাপতি ছিলেন। তাঁর দাদা মরহুম মাওলানা রুহুল আমিন হাতিয়া উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ছিলেন। তাহসীনের বড় ভাই সাব্বির আহাম্মেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রশিবিরের সভাপতি এবং সে ফারুক হত্যা মামলার ২ নাম্বার আসামি।
ছোট ভাই মঞ্জুরুল কাদের আজহার উলুম মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী। দুই বোনের মধ্যে বড় বোন তাহমিনা আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সম্মানের ছাত্রী। ছোট বোন তাহমিদা আক্তার (১০) মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে।
গতকাল তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা ফরিদা খানম, ছোট ভাই মঞ্জুর কাদের ও ছোট বোন তাহমিদা বাড়িতে রয়েছে। মঞ্জুর জানায়, তার বড় ভাই সাব্বির শিবিরের সঙ্গে জড়িত, এটা সে জানে। মেজ ভাই তাহসীন জগন্নাথে কোনো দল করে কি না, তা সে জানে না। তাহসিন ২০০৩ সালে হাতিয়ার এএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকার কুর্মিটোলা শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এরপর ভর্তি হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
হাতিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, তাহসীন স্কুলজীবনে এখানে পড়ালেখা করলেও ছাত্রলীগের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। হাতিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মো. ইদ্রিস জানান, তাহসীনের বাবা মাওলানা মহিউদ্দিন তাঁদের দলের কোনো সক্রিয় কর্মী নন, সমর্থক। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তার আহাম্মেদ জানান, তাহসীনের পুরো পরিবারই জামায়াত শিবির করত। তার বড় ভাই সাব্বির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতা এবং ফারুক হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর তাহসীনের বাবাকে দেখা যাচ্ছে না।
নূরে আলম লিমন : রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পূর্ব শুলি্লপাড়া গ্রামে বাড়ি। বাবা মীর মো. নূরুল ইসলাম ১২-১৩ বছর আগে জমিজমা বিক্রি করে স্ত্রী নুর বানু ও ছেলে লিমনকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। এর পর থেকে দরিদ্র এ পরিবারটির গ্রামের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। গ্রামের বাসিন্দা সফর আলী বলেন, 'ঢাকায় যাওয়ার পর নূরুল ইসলামের ছেলে এমন হয়েছে, সেটা জানা ছিল না। এ ঘটনায় তার শাস্তি হওয়া উচিত।' লিমনের চাচাতো ভাই আফছার আলী মীর জানান, গ্রামে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে ঢাকায় যাওয়ার পর এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় লিমন।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates