গতকাল
বাবা হজরত শাহজালালের (রহ.) পুণ্য মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নিরন্তর
গণসংযোগ শুরু করেছি। অনেক সময় তো স্বগৃহে কাটালাম। এবার রাস্তায় কিছু
সময় কাটিয়ে দেখি মানুষের দয়া পাই কিনা। এতদিন আমায় ছোটরা কেউ কোনো
টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করত না। কিন্তু এই মাসখানেক হলো কেন যেন অনেকেই
সাহায্য করছে। এমনকি বাচ্চারাও অল্পবিস্তর টাকা-পয়সা দিচ্ছে। গতকাল ছিল
জামায়াতের ডাকা হরতাল। বড় অস্থির অবস্থা। প্রায় এক সপ্তাহ আগে সিলেট
সার্কিট হাউসে দুটি রুম বরাদ্দের চিঠি দিয়েছিলাম। ঢাকা থেকে রওনার সময়
শুনলাম রুম বরাদ্দ হয়নি। এনডিসিকে ফোন করলে তিনি বললেন, আমি কিছু জানি না।
এডিসি জেনারেল বলতে পারবেন। করলাম তাকে ফোন। ভদ্রলোক বললেন, মন্ত্রী আছেন,
সচিবরা আছেন, তাই আপনাকে এলাও করতে পারছি না। ভাবলাম, হায়রে কপাল! দেশ
স্বাধীন না হলে এসব লোক কোথায় থাকতেন? ওই এডিসি আজও কোনো কেরানি হতো কিনা
বলতে পারি না। কিন্তু তার কথায় মনে হয়েছিল, সিলেট সার্কিট হাউস যেন তার
বাবার। সে আমাদের মতোদের এলাও করে না। যেহেতু এলাও করেনি তাই হরতালের দিনে
সার্কিট হাউসের বারান্দা এবং মাটিতে বসে কাজ সেরে রাস্তায় নেমে পড়েছি।
পাঠক দোয়া করবেন, গণসংযোগে যেন জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারি।
মানবজীবন কত ক্ষণস্থায়ী। লিখতে বসে খবর পেলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাজাহানের ছোট ছেলে প্রান্ত মোটরসাইকেল অ্যাঙ্েিডন্টে মারা গেছে। ও যখন ৪-৫ বছরের তখন গামছা মাথায় শ্যালো নৌকায় বসে থাকত। ছোট্ট পুতুলের মতো দেখতে। খুব কষ্টের দিনগুলোতে ও বাবার সঙ্গে এখানে সেখানে যেত। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে ওর বাবা শেখ শাজাহানেরও এমন বয়স ছিল। যুদ্ধটা এত ব্যাপক ও বিশাল ছিল যে, কে শেখ শাজাহান জানার উপায় ছিল না। শাজাহানকে চিনেছি যুদ্ধের পর। কাউলজানির কলিবুর রহমান বাঙালি, ডা. নাজির আহমেদ রঞ্জু, ডা. শাহাজাদা চৌধুরী বরং আমার আগের চেনা। আওয়ামী লীগ ছেড়ে যখন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ করি সে সময় শাজাহান ছিল খুবই সক্রিয়। ২০০০ সালের পথযাত্রায় দারুণ প্রতিকূল অবস্থায়ও সে ছায়াসঙ্গী ছিল। অল্পদিনে বিত্তশালী হওয়ার চিন্তায় জমিজমা কেনাবেচা ও আরও অনেক কিছু করে কেমন যেন হয়ে গেছে। কিন্তু তবু কোনো এক সময় ভীষণ ভালো মানবিক গুণসম্পন্ন একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিল সে। তার পুত্রের অকাল মৃত্যুতে বুক চৌচির হয়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন ছোট্ট এই ছেলেটিকে মাফ করেন, পরিবার নিয়ে শাজাহানকে এই শোক সইবার শক্তি দান করেন, আমিন।
গত পর্বে লিখেছিলাম 'যতকাল ইসলাম থাকবে ততকাল ইসলামী দল থাকবে'। কিছু কিছু লোক ধর্মীয় কথা বলে অথবা যথার্থই ধর্মের প্রতি অনুরক্ত। আমার যে পাঠক সম্পর্কে লিখেছিলাম তিনি ফোন করেছিলেন, 'বজ ভাই, আপনার কথা আমি বুঝেছি।' বুঝলেই ভালো। আমি চাই চেতনা জাগাতে। পাঠকের চেতনায় রাজনীতি করা, রাজনীতিতে সাহায্য করা ধর্মের অঙ্গ হলে হবে, না হলে হবে না। আমার কি আসে যায়। জীবনে কোনো দিন জেনেশুনে জ্ঞানত কোনো লোভ বা প্ররোচনায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে পা বাড়াইনি। সত্যকে মর্যাদা দিতে কত কষ্ট করেছি, এখনো কতজনের মতের বিরুদ্ধে চলছি, আর কতকাল চলতে হবে সে শুধু আল্লাহই জানেন। গত ১৪ তারিখ বৃহস্পতিবার ভালোবাসা দিবসে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে ঐশী আর ওশী নামের দুটি বাচ্চার সঙ্গে দেখা। তারা আমার গামছার দল ভালোবাসে। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ওরা নাকি আমার দলকে সাহায্য করবে। ফেরি থেকে নামতেই কয়েকজন বৃদ্ধ হাত চেপে ধরে বলেছিল, 'বাবা, ইসলামী দল নাকি সব বন্ধ হয়ে যাবে। মসজিদে গেলে নাকি বাধা দেবে।' তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশ। আল্লাহর নাম নিতে, মসজিদে যেতেও বাধা হবে, এমন শঙ্কা মানুষের মনে, তাহলে আমরা আছি কোথায়? কিন্তু কেউ এই শঙ্কা দূর করতে চেষ্টা করছে না। অথচ এটা যে সত্য নয়, মানুষের মনের শঙ্কা দূর করা উচিত। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত আর ইসলাম এক নয়, অবহেলিত জনসাধারণকে কে বুঝাতে যাবে? রাজনৈতিক দল এবং সরকারের কাছে সাধারণ মানুষ যেন একেবারেই ফালতু। তবে সবাই মিলে শাহবাগে একত্র হয়ে আওয়াজ তুলতে পারলে সব শক্তি চামচিকার মতো একেবারে চুপসে যায়। আজ প্রায় ২০ বছর যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার নিয়ে কথা বলছি, দালালদের শাস্তি চাইছি, তাদের সঙ্গে নিতে না করছি, কেউ শুনছে না। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যদি পরাজিত হতাম তাহলে পাকিস্তান আমাদের কী করত? আমাদের কি মাথায় তুলে নাচত, নাকি টুকরা টুকরা করত? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের হেফাজতে সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তার না হয় কিছুই হতো না, স্বামী-সংসার নিয়ে হেসে-খেলে কাটাতেন। কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধের ময়দানে পাকিস্তান হানাদারদের মোকাবিলা করছিলাম আমাদের কী হতো? জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকারের কী হতো? যেসব সিএসপিসহ অন্যরা বিপ্লবী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল তাদের কী হতো? আজ যারা বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছে তাদের কী হতো? পাকিস্তান থাকলে আমরা যারা বাংলাদেশের পক্ষে ছিলাম তাদের দুরবস্থা হতো, শাস্তি হতো। যারা পাকিস্তান রাখতে চেয়েছিল, যারা পাকিস্তানের জন্য খুন-খারাবি করেছে বাংলাদেশ হওয়ায় তাদের শাস্তি না হয়ে পুরস্কার পাবে কেন? যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাত্র ৬-৭ জনের বিচার করলেই হবে? সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তাহলে যুদ্ধাপরাধী তো নিরূপণ করতে হবে। এই ৬-৭ জন নিয়েই তো আর যুদ্ধাপরাধ হয়নি। অন্তত ৬ হাজার অথবা ৬ লাখ তো হবেই। ৬০ লাখ লোকও যদি পাকিস্তানের পক্ষে না থেকে থাকে, তাহলে পাকিস্তান থাকল কী করে? আমার জানা এক পরিবারে ইদানীং মারাত্দক বিরোধ চলছে। পূর্ণ বয়সী এক ছেলের বাবা ছিলেন প্রাইমারি শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭০-৮০ টাকা বেতন পেতেন। একদিনও স্কুল করেননি, মাসে মাসে বেতন তুলেছেন। এখন পিতা-পুত্রের বিরোধ। পুত্র বলছে, যেহেতু তুমি মাস্টার হিসেবে যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের বেতন নিয়েছ তাই তুমি রাজাকার। এখন আমি কী বলি? বাংলাদেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি জনাব সাহাবুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ? যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে বয়সের, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য প্রধানমন্ত্রীর বিয়াই মোশারফ হোসেনও সেই বয়সের। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী চিটাগাংয়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ঠিক তেমনি বৃহত্তর ফরিদপুরের সম্ভ্রান্ত জমিদার নুর মিয়া ফরিদপুর জেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের ছেলে হিসেবে বাবার প্রতি অনুগত মোশারফ হোসেন যতটা সম্ভব বাবাকে সমর্থন করেছেন, সাহায্য করেছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও তার বাবাকে সাহায্য করেছেন। তাহলে শুধু একজনের বিরুদ্ধে মামলা হবে কেন? সবকিছু কেমন যেন সাজানো নাটকের মতো মনে হচ্ছে। দেশবাসীর কাছে আকুল মিনতি, সব আমি করব বা করতে পারব তা তো নয়। যতটুকু করার আমি ততটুকু করেছি। বাকিটুকু আপনারা করুন।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পক্ষ থেকে উকিল নোটিস পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধী বলায় তিনি আমার নামে মামলা করবেন। সারা দেশ রাজাকারের ফাঁসি চায়। সারা দেশ যখন রাজাকার নামে মাতোয়ারা তখন একজন যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে রাজাকার বলায় উকিল নোটিস পেতে হয়। জনাব মহীউদ্দীন খান আলমগীর কতবড় পণ্ডিত, কি তার বংশ-পরিচয়, এসবে আমার দরকার নেই। আমার দরকার তিনি সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। সুনামের সঙ্গে পাকিস্তানে চাকরি করেছেন। অনেক তকমা বা প্রশংসা পেয়েছেন। ২৬ মার্চ আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করি তখনো তিনি পাকিস্তানি কর্মচারী ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশের শত্রু। তার সিনিয়র বা জুনিয়র অনেক সিএসপি জীবন বাজি রেখে মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে রণাঙ্গনে ছিলেন। আর মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ যারা পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে হানাদার বাহিনী বা পাকিস্তানের আজ্ঞাবহ হিসেবে প্রশাসন চালিয়েছে, যেহেতু পাকিস্তান হেরেছে, সেহেতু পাকিস্তানি অনুগত অফিসারদের দশবার ফাঁসি হওয়া উচিত। সেদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা তো জানতাম না মহীউদ্দীন খান আলমগীর পাকিস্তানে চাকরি করেছেন। শুধু চাকরি করেনি, মাস্টারি, ডাক্তারি নয় ডিসিগিরি করেছেন। এখনো যেমন ডিসি-ওসিরা লাঠিয়াল হয়ে সরকার টিকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে, ভদ্রলোক তেমন করেছেন। তাই উকিল নোটিস পেয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তিনি যে নিরন্তর পাকিস্তানের হয়ে চাকরি করেছেন, পাকিস্তানের প্রতি অনুগত ছিলেন তার গেজেট-ফেজেট আছে দেখে নিতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের গেজেটেও তার নাম আছে, পূর্ব পাকিস্তান গেজেটেও আছে। কুকর্ম করলে নাম থাকবেই। হানাদারদের পক্ষে রাজাকার হলে যদি ফাঁসি হয়, ডিসি হলে দশবার ফাঁসি হলেও শাস্তি কম হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ছিল সব থেকে ছোট দরের খুনি। ওসি, ডিসি, এসপিরা তো অনেক বড় দরের ঘাতক বা খুনি। আগে মনে হতো আমি যেভাবে যুদ্ধ দেখেছি, অন্যায়-অত্যাচার, খুন-খারাবি সবাই বোধহয় সেভাবেই দেখেছে, এটাই আমার ভুল। মাস্টার, ডাক্তার, কেরানি, ইঞ্জিনিয়ার তারা প্রশাসন চালায় না, তারা চলে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশাসন চালান। ছোট ম্যাজিস্ট্রেটের ছোট কাজ, বড় ম্যাজিস্ট্রেটের বড় কাজ। এডিসি, ডিসি র্যাঙ্কের অফিসাররা জেলার পুরো প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে। কাউকে গ্রেফতার করা, কাউকে মুক্তি দেওয়া তাদের কাজ। চার পয়সার দাম নেই, জেলা সদরে রাজসিংহাসনে বসে মানুষের নিবর্তনমূলক আটকাদেশে সই করে, 'আমি সন্তুষ্ট হইয়া আপনাকে এত দিনের আটক আদেশ দিলাম।' সেই ডিসি পদে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ছিলেন। পাকিস্তান হানাদারদের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন, তো কে সম্পৃক্ত? টাঙ্গাইলে যেমন আশিকুর রহমান ডিসি ছিলেন, তাকে সে সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল। পাকিস্তান প্রশাসনের ডিসি যুদ্ধাপরাধীদের ওই সময়ই ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দয়ায় ওরা বেঁচে গেছে কিন্তু বেশি বাড়লে আল্লাহই তাকে শায়েস্তা করেন। তা না হলে শাহবাগ জাগবে কেন? আমরা পাকিস্তানের দোসর সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। আইনে ফাঁসি হলে হবে আর কোনো খায়খাতির নেই। যারা রাজাকারকে রক্ষা করতে চাইবে তাদেরও বিচার চাই।
ব্লগার রাজীব হায়দার নিহত হয়েছে। তাতে শাহবাগ উত্তাল। এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কোনো সতীর্থ জীবন দিলে সহযোদ্ধাদের এমন করেই বুক ফাটে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীবের বাড়ি গিয়ে বলেছেন, 'এ দেশে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই।' বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়ে বলতে পারতেন, 'ছাত্রলীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই।' আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে কথাটি মানালেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানায় না। মানুষ শঙ্কায় আছে, এসব করে গণতন্ত্রকে কেউ হত্যা করতে চায় কিনা? বয়স তো আর কম হলো না, এখন যাওয়ার সময়। যে সময় মানুষ লোভে ডুবে থাকে, চোখে রঙিন চশমা পরে তখনই মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করেছি। এখন আবার মরণের ভয় কি? তাই আত্দার তাগিদেই বলছি। শুধু পশুর মতো বেঁচে থাকার জন্য ইমান-আমান সবকিছু কেন বিসর্জন দেব। আওয়াজ উঠেছে, ইসলামী দল বাতিল করতে হবে। কিন্তু হিন্দুর দল থাকবে, খ্রিস্টানদের দল থাকবে, শুধু শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশে মুসলমানের দল থাকবে না_ কেমন সব আজব কথা! ব্লগার রাজীব মারা গেছে, তার জানাজার যদি দরকার হয় তাহলে কেন জাতীয় ঈদগাহের মতো পবিত্র স্থানে করা হলো না, শাহবাগ চত্বরে কেন? একনাগাড়ে ১২ দিন জনসমাগম হলে পায়খানা, পেশাব, থু থু ফেলে জায়গাটি কি নোংরা হয়নি? নোংরা জায়গায় নামাজ চলে না। জানাজা কোনো মশকারি নয়, জানাজা ফরজে কেফায়া, চার তাকবিরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। কোন সে টেডি ইমাম তিন তাকবিরে নামাজ শেষ করলেন? নামাজ পড়বেন অজু করবেন না, কয়জন সেখানে অজু করতে পেরেছিল? নারী-পুরুষ, হিন্দু, মুসলমান একসঙ্গে জানাজা হয়? কেন এমন করা হলো? জায়গাটা একটু ঝাড়পোছ করে সবাই অজু করে নিলে কী এমন ক্ষতি হতো? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের জানাজা থেকে আলাদা করা দরকার ছিল। যত আধুনিকই হন পবিত্র ইসলাম পরপুরুষের পাশে কোনো নারীর অবস্থান অনুমোদন করে না। কোনো মুর্দার চারদিকে জানাজা হয় না। এটা কোনো কাবাঘর নয়। কেন এমন হলো? অনেকেরই এখন কেবলা ঠিক নেই, ইমান দুর্বল হয়ে গেছে। আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির মসজিদের কেবলাও উত্তর-পশ্চিমে। যতক্ষণ বেঁচে আছি কেবলা নিয়ে বাঁচব, একচুল নড়চড় করতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিয়ালের মতো পালাইনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ইঁদুরের গর্তে লুকাইনি। চার তাকবিরের জানাজা মশকারি করে তিন তাকবিরে পড়াতে গেলেন? এ জন্য আর কেউ প্রতিবাদ না করলেও আমি করব।
লেখক : রাজনীতিক
মানবজীবন কত ক্ষণস্থায়ী। লিখতে বসে খবর পেলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাজাহানের ছোট ছেলে প্রান্ত মোটরসাইকেল অ্যাঙ্েিডন্টে মারা গেছে। ও যখন ৪-৫ বছরের তখন গামছা মাথায় শ্যালো নৌকায় বসে থাকত। ছোট্ট পুতুলের মতো দেখতে। খুব কষ্টের দিনগুলোতে ও বাবার সঙ্গে এখানে সেখানে যেত। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে ওর বাবা শেখ শাজাহানেরও এমন বয়স ছিল। যুদ্ধটা এত ব্যাপক ও বিশাল ছিল যে, কে শেখ শাজাহান জানার উপায় ছিল না। শাজাহানকে চিনেছি যুদ্ধের পর। কাউলজানির কলিবুর রহমান বাঙালি, ডা. নাজির আহমেদ রঞ্জু, ডা. শাহাজাদা চৌধুরী বরং আমার আগের চেনা। আওয়ামী লীগ ছেড়ে যখন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ করি সে সময় শাজাহান ছিল খুবই সক্রিয়। ২০০০ সালের পথযাত্রায় দারুণ প্রতিকূল অবস্থায়ও সে ছায়াসঙ্গী ছিল। অল্পদিনে বিত্তশালী হওয়ার চিন্তায় জমিজমা কেনাবেচা ও আরও অনেক কিছু করে কেমন যেন হয়ে গেছে। কিন্তু তবু কোনো এক সময় ভীষণ ভালো মানবিক গুণসম্পন্ন একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিল সে। তার পুত্রের অকাল মৃত্যুতে বুক চৌচির হয়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন ছোট্ট এই ছেলেটিকে মাফ করেন, পরিবার নিয়ে শাজাহানকে এই শোক সইবার শক্তি দান করেন, আমিন।
গত পর্বে লিখেছিলাম 'যতকাল ইসলাম থাকবে ততকাল ইসলামী দল থাকবে'। কিছু কিছু লোক ধর্মীয় কথা বলে অথবা যথার্থই ধর্মের প্রতি অনুরক্ত। আমার যে পাঠক সম্পর্কে লিখেছিলাম তিনি ফোন করেছিলেন, 'বজ ভাই, আপনার কথা আমি বুঝেছি।' বুঝলেই ভালো। আমি চাই চেতনা জাগাতে। পাঠকের চেতনায় রাজনীতি করা, রাজনীতিতে সাহায্য করা ধর্মের অঙ্গ হলে হবে, না হলে হবে না। আমার কি আসে যায়। জীবনে কোনো দিন জেনেশুনে জ্ঞানত কোনো লোভ বা প্ররোচনায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে পা বাড়াইনি। সত্যকে মর্যাদা দিতে কত কষ্ট করেছি, এখনো কতজনের মতের বিরুদ্ধে চলছি, আর কতকাল চলতে হবে সে শুধু আল্লাহই জানেন। গত ১৪ তারিখ বৃহস্পতিবার ভালোবাসা দিবসে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে ঐশী আর ওশী নামের দুটি বাচ্চার সঙ্গে দেখা। তারা আমার গামছার দল ভালোবাসে। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ওরা নাকি আমার দলকে সাহায্য করবে। ফেরি থেকে নামতেই কয়েকজন বৃদ্ধ হাত চেপে ধরে বলেছিল, 'বাবা, ইসলামী দল নাকি সব বন্ধ হয়ে যাবে। মসজিদে গেলে নাকি বাধা দেবে।' তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশ। আল্লাহর নাম নিতে, মসজিদে যেতেও বাধা হবে, এমন শঙ্কা মানুষের মনে, তাহলে আমরা আছি কোথায়? কিন্তু কেউ এই শঙ্কা দূর করতে চেষ্টা করছে না। অথচ এটা যে সত্য নয়, মানুষের মনের শঙ্কা দূর করা উচিত। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত আর ইসলাম এক নয়, অবহেলিত জনসাধারণকে কে বুঝাতে যাবে? রাজনৈতিক দল এবং সরকারের কাছে সাধারণ মানুষ যেন একেবারেই ফালতু। তবে সবাই মিলে শাহবাগে একত্র হয়ে আওয়াজ তুলতে পারলে সব শক্তি চামচিকার মতো একেবারে চুপসে যায়। আজ প্রায় ২০ বছর যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার নিয়ে কথা বলছি, দালালদের শাস্তি চাইছি, তাদের সঙ্গে নিতে না করছি, কেউ শুনছে না। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যদি পরাজিত হতাম তাহলে পাকিস্তান আমাদের কী করত? আমাদের কি মাথায় তুলে নাচত, নাকি টুকরা টুকরা করত? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের হেফাজতে সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তার না হয় কিছুই হতো না, স্বামী-সংসার নিয়ে হেসে-খেলে কাটাতেন। কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধের ময়দানে পাকিস্তান হানাদারদের মোকাবিলা করছিলাম আমাদের কী হতো? জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকারের কী হতো? যেসব সিএসপিসহ অন্যরা বিপ্লবী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল তাদের কী হতো? আজ যারা বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছে তাদের কী হতো? পাকিস্তান থাকলে আমরা যারা বাংলাদেশের পক্ষে ছিলাম তাদের দুরবস্থা হতো, শাস্তি হতো। যারা পাকিস্তান রাখতে চেয়েছিল, যারা পাকিস্তানের জন্য খুন-খারাবি করেছে বাংলাদেশ হওয়ায় তাদের শাস্তি না হয়ে পুরস্কার পাবে কেন? যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাত্র ৬-৭ জনের বিচার করলেই হবে? সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তাহলে যুদ্ধাপরাধী তো নিরূপণ করতে হবে। এই ৬-৭ জন নিয়েই তো আর যুদ্ধাপরাধ হয়নি। অন্তত ৬ হাজার অথবা ৬ লাখ তো হবেই। ৬০ লাখ লোকও যদি পাকিস্তানের পক্ষে না থেকে থাকে, তাহলে পাকিস্তান থাকল কী করে? আমার জানা এক পরিবারে ইদানীং মারাত্দক বিরোধ চলছে। পূর্ণ বয়সী এক ছেলের বাবা ছিলেন প্রাইমারি শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭০-৮০ টাকা বেতন পেতেন। একদিনও স্কুল করেননি, মাসে মাসে বেতন তুলেছেন। এখন পিতা-পুত্রের বিরোধ। পুত্র বলছে, যেহেতু তুমি মাস্টার হিসেবে যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের বেতন নিয়েছ তাই তুমি রাজাকার। এখন আমি কী বলি? বাংলাদেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি জনাব সাহাবুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ? যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে বয়সের, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য প্রধানমন্ত্রীর বিয়াই মোশারফ হোসেনও সেই বয়সের। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী চিটাগাংয়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ঠিক তেমনি বৃহত্তর ফরিদপুরের সম্ভ্রান্ত জমিদার নুর মিয়া ফরিদপুর জেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের ছেলে হিসেবে বাবার প্রতি অনুগত মোশারফ হোসেন যতটা সম্ভব বাবাকে সমর্থন করেছেন, সাহায্য করেছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও তার বাবাকে সাহায্য করেছেন। তাহলে শুধু একজনের বিরুদ্ধে মামলা হবে কেন? সবকিছু কেমন যেন সাজানো নাটকের মতো মনে হচ্ছে। দেশবাসীর কাছে আকুল মিনতি, সব আমি করব বা করতে পারব তা তো নয়। যতটুকু করার আমি ততটুকু করেছি। বাকিটুকু আপনারা করুন।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পক্ষ থেকে উকিল নোটিস পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধী বলায় তিনি আমার নামে মামলা করবেন। সারা দেশ রাজাকারের ফাঁসি চায়। সারা দেশ যখন রাজাকার নামে মাতোয়ারা তখন একজন যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে রাজাকার বলায় উকিল নোটিস পেতে হয়। জনাব মহীউদ্দীন খান আলমগীর কতবড় পণ্ডিত, কি তার বংশ-পরিচয়, এসবে আমার দরকার নেই। আমার দরকার তিনি সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। সুনামের সঙ্গে পাকিস্তানে চাকরি করেছেন। অনেক তকমা বা প্রশংসা পেয়েছেন। ২৬ মার্চ আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করি তখনো তিনি পাকিস্তানি কর্মচারী ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশের শত্রু। তার সিনিয়র বা জুনিয়র অনেক সিএসপি জীবন বাজি রেখে মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে রণাঙ্গনে ছিলেন। আর মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ যারা পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে হানাদার বাহিনী বা পাকিস্তানের আজ্ঞাবহ হিসেবে প্রশাসন চালিয়েছে, যেহেতু পাকিস্তান হেরেছে, সেহেতু পাকিস্তানি অনুগত অফিসারদের দশবার ফাঁসি হওয়া উচিত। সেদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা তো জানতাম না মহীউদ্দীন খান আলমগীর পাকিস্তানে চাকরি করেছেন। শুধু চাকরি করেনি, মাস্টারি, ডাক্তারি নয় ডিসিগিরি করেছেন। এখনো যেমন ডিসি-ওসিরা লাঠিয়াল হয়ে সরকার টিকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে, ভদ্রলোক তেমন করেছেন। তাই উকিল নোটিস পেয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তিনি যে নিরন্তর পাকিস্তানের হয়ে চাকরি করেছেন, পাকিস্তানের প্রতি অনুগত ছিলেন তার গেজেট-ফেজেট আছে দেখে নিতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের গেজেটেও তার নাম আছে, পূর্ব পাকিস্তান গেজেটেও আছে। কুকর্ম করলে নাম থাকবেই। হানাদারদের পক্ষে রাজাকার হলে যদি ফাঁসি হয়, ডিসি হলে দশবার ফাঁসি হলেও শাস্তি কম হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ছিল সব থেকে ছোট দরের খুনি। ওসি, ডিসি, এসপিরা তো অনেক বড় দরের ঘাতক বা খুনি। আগে মনে হতো আমি যেভাবে যুদ্ধ দেখেছি, অন্যায়-অত্যাচার, খুন-খারাবি সবাই বোধহয় সেভাবেই দেখেছে, এটাই আমার ভুল। মাস্টার, ডাক্তার, কেরানি, ইঞ্জিনিয়ার তারা প্রশাসন চালায় না, তারা চলে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশাসন চালান। ছোট ম্যাজিস্ট্রেটের ছোট কাজ, বড় ম্যাজিস্ট্রেটের বড় কাজ। এডিসি, ডিসি র্যাঙ্কের অফিসাররা জেলার পুরো প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে। কাউকে গ্রেফতার করা, কাউকে মুক্তি দেওয়া তাদের কাজ। চার পয়সার দাম নেই, জেলা সদরে রাজসিংহাসনে বসে মানুষের নিবর্তনমূলক আটকাদেশে সই করে, 'আমি সন্তুষ্ট হইয়া আপনাকে এত দিনের আটক আদেশ দিলাম।' সেই ডিসি পদে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ছিলেন। পাকিস্তান হানাদারদের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন, তো কে সম্পৃক্ত? টাঙ্গাইলে যেমন আশিকুর রহমান ডিসি ছিলেন, তাকে সে সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল। পাকিস্তান প্রশাসনের ডিসি যুদ্ধাপরাধীদের ওই সময়ই ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দয়ায় ওরা বেঁচে গেছে কিন্তু বেশি বাড়লে আল্লাহই তাকে শায়েস্তা করেন। তা না হলে শাহবাগ জাগবে কেন? আমরা পাকিস্তানের দোসর সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। আইনে ফাঁসি হলে হবে আর কোনো খায়খাতির নেই। যারা রাজাকারকে রক্ষা করতে চাইবে তাদেরও বিচার চাই।
ব্লগার রাজীব হায়দার নিহত হয়েছে। তাতে শাহবাগ উত্তাল। এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কোনো সতীর্থ জীবন দিলে সহযোদ্ধাদের এমন করেই বুক ফাটে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীবের বাড়ি গিয়ে বলেছেন, 'এ দেশে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই।' বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়ে বলতে পারতেন, 'ছাত্রলীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই।' আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে কথাটি মানালেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানায় না। মানুষ শঙ্কায় আছে, এসব করে গণতন্ত্রকে কেউ হত্যা করতে চায় কিনা? বয়স তো আর কম হলো না, এখন যাওয়ার সময়। যে সময় মানুষ লোভে ডুবে থাকে, চোখে রঙিন চশমা পরে তখনই মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করেছি। এখন আবার মরণের ভয় কি? তাই আত্দার তাগিদেই বলছি। শুধু পশুর মতো বেঁচে থাকার জন্য ইমান-আমান সবকিছু কেন বিসর্জন দেব। আওয়াজ উঠেছে, ইসলামী দল বাতিল করতে হবে। কিন্তু হিন্দুর দল থাকবে, খ্রিস্টানদের দল থাকবে, শুধু শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশে মুসলমানের দল থাকবে না_ কেমন সব আজব কথা! ব্লগার রাজীব মারা গেছে, তার জানাজার যদি দরকার হয় তাহলে কেন জাতীয় ঈদগাহের মতো পবিত্র স্থানে করা হলো না, শাহবাগ চত্বরে কেন? একনাগাড়ে ১২ দিন জনসমাগম হলে পায়খানা, পেশাব, থু থু ফেলে জায়গাটি কি নোংরা হয়নি? নোংরা জায়গায় নামাজ চলে না। জানাজা কোনো মশকারি নয়, জানাজা ফরজে কেফায়া, চার তাকবিরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। কোন সে টেডি ইমাম তিন তাকবিরে নামাজ শেষ করলেন? নামাজ পড়বেন অজু করবেন না, কয়জন সেখানে অজু করতে পেরেছিল? নারী-পুরুষ, হিন্দু, মুসলমান একসঙ্গে জানাজা হয়? কেন এমন করা হলো? জায়গাটা একটু ঝাড়পোছ করে সবাই অজু করে নিলে কী এমন ক্ষতি হতো? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের জানাজা থেকে আলাদা করা দরকার ছিল। যত আধুনিকই হন পবিত্র ইসলাম পরপুরুষের পাশে কোনো নারীর অবস্থান অনুমোদন করে না। কোনো মুর্দার চারদিকে জানাজা হয় না। এটা কোনো কাবাঘর নয়। কেন এমন হলো? অনেকেরই এখন কেবলা ঠিক নেই, ইমান দুর্বল হয়ে গেছে। আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির মসজিদের কেবলাও উত্তর-পশ্চিমে। যতক্ষণ বেঁচে আছি কেবলা নিয়ে বাঁচব, একচুল নড়চড় করতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিয়ালের মতো পালাইনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ইঁদুরের গর্তে লুকাইনি। চার তাকবিরের জানাজা মশকারি করে তিন তাকবিরে পড়াতে গেলেন? এ জন্য আর কেউ প্রতিবাদ না করলেও আমি করব।
লেখক : রাজনীতিক
উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন