0 এক নজরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী


 
ওয়াশিংটন, নভেম্বর ৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। এই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আগামী চার বছর বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রধান হবেন।

ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং রিপাবলিকান মিট রমনি নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী। এ দুইজনের একজনই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

ফ্যাক্টবক্স: বারাক ওবামা

ইলিনয়ের সাবেক সিনেটর ও যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনিকে হারাতে পারলে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। তার জীবনের কয়েকটি দিক-

বয়স: ৫১

জন্মস্থান: হনলুলু, হাওয়াই

শিক্ষা: অক্সিডেন্টাল কলেজ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড ল স্কুল

স্ত্রী: মিশেল রবিনসন

সন্তান: দুই মেয়ে, মালিয়া ও শাশা

ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা: ইউনাইটেড চার্চ অব ক্রাইস্ট

পরিবার: কেনিয়ান পিতা ও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান মায়ের পরিবারে জন্ম নেন বারাক ওবামা। তার বাবা বারাক ওবামা সিনিয়র যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে পড়ালেখা করার সময় তার মা অ্যান ডুনহামকে বিয়ে করেন। ওবামার জন্মের দু’বছর পর বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। ওবামার বাবা পরে কেনিয়ায় ফিরে যান এবং একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতিমান হন। ১৯৮২ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।

ওবামার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন লোলো সোয়েতোরো নামে এক ইন্দোনেশীয়কে। ছোট্ট ওবামাকে নিয়ে মা ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমান। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন ওবামা। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে নানা-নানীর কাছে ফিরে আসেন। বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হন বিখ্যাত পুনাহও অ্যাকডেমিতে।

কেনিয়ায় ফিরে গিয়ে তার বাবা আবার বিয়ে করেছিলেন। সেই সুবাদে কেনিয়ায় ওবামার সৎ সাত ভাই ও এক বোন আছে। আর মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে সূত্রে জন্ম নেওয়া তার আরেক সৎ বোন মায়া সোয়েতোরো হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতের পালার শিক্ষক ও একজন লেখক।

ক্যারিয়ার: ১৯৮৩ সালে কলেজ-উত্তীর্ণ হওয়ার পর ওবামা নিউ ইয়র্কে অর্থনৈতিক বিষয়ক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কিছুদিন। ’৮৫ সালে শিকাগোতে কাজ নেন কম্যুনিটি প্রজেক্টে। চার্চভিত্তিক প্রজেক্টটি হতদরিদ্র এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছিল।

তিন বছর পর ওবামা হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে ল রিভিউর প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন। শিকাগোর সিডলে অস্টিন ল ফার্মে কাজ করার সময় পরিচয় হয় ভবিষ্যত স্ত্রী মিশেলের সঙ্গে। ’৯১ সালে হার্ভার্ডের স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর শিকাগোতে নাগরিক অধিকার নিয়ে আইনব্যবসা শুরু করেন। পরে ’৯৩ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবিধানিক আইনবিষয়ের শিক্ষক হন।

নির্বাচনী কর্মকাণ্ড: ১৯৯৬ সালে ইলিনয় রাজ্যের সিনেটের একটি আসনে নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে ইলিনয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর পদে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থিতা জিতে নেন এবং খুব সহজেই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে ওবামা ভোটিং রেকর্ড গ্রন্থণার কাজ করেন এবং শ্রেণীভিত্তিক মামলার প্রবণতা কমানোর পদক্ষেপের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন যা খুব কম ডেমোক্র্যাট নেতাই সমর্থন করছিলেন।

নির্দলয়ী ন্যাশনাল জার্নাল চলতি বছরের গোড়ার দিকে ওবামাকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের সবচেয়ে উদারপন্থী সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে। পত্রিকাটির বিবেচনায় উদারতার দিক থেকে ২০০৬ সালে তার অবস্থান ছিল দশম এবং ২০০৫ সালে ছিল ষোড়শ।

এরপর ২০০৮ সালে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জন ম্যাককেইনকে হারিয়ে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইতিহাস গড়েন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওই নির্বাচনে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ পপুলার ভোট জিতেছিলেন তিনি। অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাককেইন পেয়েছিলেন ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট।


ফ্যাক্টবক্স: মিট রমনি

ম্যাসাচুসেটসের সাবেক গভর্নর রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি মঙ্গলবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেট প্রার্থী বারাক ওবামাকে হারাতে পারলে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। তার জীবনের কয়েকটি দিক-

বয়স: ৬৫

জন্মস্থান: ডেট্রয়েট, মিশিগান

শিক্ষা: বার্মিংহাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়; হার্ভার্ড ল স্কুল, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল

স্ত্রী: অ্যান রমনি

সন্তান: পাঁচ মেয়ে

ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা: মরমন চার্চ

পরিবার: জর্জ ও লেনোর রমনির দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে কনিষ্ঠ মিট রমনি। ব্লুমফিল্ড হিলস শহরে ছেলেবেলা কাটান তিনি।

রমনির বাবা জর্জ রমনি একজন মোটরগাড়ি ব্যবসায়ী ছিলেন। আমেরিকান মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ পরবর্তীতে মিশিগানের গর্ভনর নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালে মারা যান জর্জ রমনি।

ক্যারিয়ার: পাঁচ প্রজন্ম ধরে মরমন চার্চের অনুসারী মিট রমনি ব্লুমফিল্ডের প্রাইভেট বিদ্যালয় ক্র্যানব্রুক স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেন। এর পর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও গির্জায় মিশনারি হিসেবে কাজ করার জন্য ফ্রান্সে যান তিনি।

আড়াই বছর পর ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে মরমন চার্চের মালিকানাধীন বার্মিংহ্যাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মিট। এখানে ছাত্র থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী অ্যান ডেভিসকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৭১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ¯œাতক পাস করেন।

এরপর হাভার্ড ল স্কুল ও হাভার্ড বিজনেস স্কুলে চার বছরের যৌথ প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে শীর্ষ তিন শিক্ষার্থীর একজন হিসেবে ল স্কুল এবং ‘বেকার স্কলার’ হিসেবে বিজনেস স্কুল সম্পন্ন করেন।

১৯৭৭ সালে বোস্টনভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা বেইন অ্যান্ড কোম্পানিতে যোগ দেন রমনি। ১৯৮৪ সালে বেইন ক্যাপিটালের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান তিনি।

নির্বাচনী কর্মকান্ড: ১৯৯৪ সালে ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রমনি। তবে ৩০ বছর ধরে এ পদ ধরে রাখা ডেমোক্রেট প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাই টেড কেনেডির কাছে তিনি হেরে যান।

১৯৯৯ সালে ইউটা’র সল্ট লেক সিটিতে ২০০২ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পান রমনি। আর্থিক দুর্দশা কাটিয়ে সল্ট লেক সিটিতে গেমসের সফল আয়োজন করায় প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও তার প্রশংসা করেন।

২০০২’র অলিম্পিকের সাফল্য রমনিকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পুনরায় শুরু করতে সাহায্য করে। একই সালের নভেম্বরে একজন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান হিসেবে ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্রেট রাজ্য ম্যাসাচুসেটসের গর্ভনর নির্বাচিত হন তিনি।

গভর্নর থাকাকালে পুরো ম্যাসাচুসেটসে রাজ্যব্যাপী স্বাস্থ্য বীমা চালু করায় নেতৃত্ব দেন। তবে ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একই ধরনের প্রকল্প সারা দেশজুড়ে চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিলে তার বিরোধিতা করেন রমনি। ফেডারেল সরকারের তুলনায় রাজ্য সরকারগুলোই এ ধরনের প্রকল্পে বেশি কার্যকর বলে মনে করেন তিনি।

২০০৫ সালে গর্ভনর পদে ফের নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন রমনি। ২০০৭ সালে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২০০৮ সালের নির্বাচনে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন তিনি। তবে সিনেটর জন ম্যাককেইনের কাছে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থিতা হারান সেবছর।

শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলের সমর্থন পান।

প্রায় ২৫ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত সম্পদের মালিক রমনি আমেরিকার সাধারণ মানুষের পরিষ্কার ধারণা রাখেন না বলে প্রচারণা চালিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির। তবে রমনি নিজে মনে করেন, ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই যুক্তরাষ্ট্রের নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য উপযুক্ত নীতি তিনি গ্রহণ করতে পারবেন।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates