0 দুর্নীতির পঞ্চপাণ্ডব


সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে মহাজোট জমানার দুর্নীতি। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন সর্বত্রই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও এটি এখন আলোচিত বিষয়। সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের নাম জড়িয়ে পড়েছে ভয়ানক এসব দুর্নীতিতে। তবে দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে সরকারের পাঁচ প্রভাবশালী মন্ত্রী-উপদেষ্টার নাম। দুর্নীতির এ পঞ্চপাণ্ডব হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক রেলযোগাযোগমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও ড. মসিউর রহমান।
পদ্মা ডুবাল আবুল মসিউর : পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান; চাঞ্চল্যকর রেলওয়ের ঘুষবাণিজ্যের সঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ংকর দুর্নীতি সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং বিমানবন্দরের ৪৩৪ বিঘা জমি ছাড়াও বিদ্যুত্ খাতের কেলেঙ্কারির জন্য ফারুক খানের নাম এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। দুর্নীতির টপ অব দ্য টপ হিসেবে তাদের নাম সবার মুখে মুখে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণসহায়তা চুক্তি বাতিল করেছে। একই অভিযোগে ওই প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাইকা। এই দুই দাতা সংস্থা দ্বিতীয় দফায় এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের দাবি মেনে না নিলে তারাও ঋণচুক্তি বাতিল করবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ঘুষ দাবির কেলেঙ্কারির ঘটনায় এখন দেশে-বিদেশে মশহুর তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সাবেক সেতু সচিব মোশারেফ হোসেন ভূঁইয়া। এ তিনজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সংক্রান্ত কানাডা পুলিশের দেয়া তথ্য-প্রমাণ দুদককে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তারা কোনো কিছু না করায় তথ্য দেয়া হয় অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকেও। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। উপরন্তু বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে নানা কুত্সা রটাতে থাকে সরকারের লোকজন। একপর্যায়ে দুর্নীতির দায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার
ঋণচুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিল করে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় একই অভিযোগে এডিবিও এ প্রকল্পে তাদের ঋণচুক্তি স্থগিত করে।
প্রথম দিকে সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঘুষ কেলেঙ্কারির কথা অস্বীকার করলেও দুনিয়াজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেলে একপর্যায়ে দুর্নীতির বরপুত্র সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। সাবেক সেতু বিভাগের সচিব মোশারেফকে ছুটিতে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত ঘুষ কেলেঙ্কারির আরেক নায়ক মসিউর রহমানকে স্বপদে বহাল রাখা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সরকারের এ ড্রামা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। দাতা সংস্থাটি সাফ জানিয়ে দেয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে তারা এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। একপর্যায়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শে সৈয়দ আবুল হোসেন আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকেও পদত্যাগ করেছেন। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে উপদেষ্টা হিসেবে কোনোভাবে টিকে থাকার আশায় বিকল্প হিসেবে একটি ছুটির আবেদনও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে রেখেছেন তিনি। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পেতে মরিয়া সরকার অবশেষে বিশ্বব্যাংকের শেষ শর্তটিও মেনে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দিতে প্রতিশ্রুত হয় বিশ্বব্যাংক। কাজ শুরুর আগেই কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে সরকারের প্রভাবশালীরা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে জুনে এসে বিশ্বব্যাংকের এ ঋণসহায়তা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। ২৯ জুন চুক্তি বাতিলসংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার পরও দুর্নীতি তদন্তে তেমন কোনো সাড়া না পাওয়ায় এ অর্থচুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
আমেরিকাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি তাদের বিবৃতিতে আরও জানায়, দুই দফা তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দেয়ার পর কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। যার কারণে প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করতে হয়েছে এবং এ সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক তার অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ থাকার পর বিশ্বব্যাংক চোখ বুজে থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয় এবং থাকবেও না। আমাদের শেয়ারহোল্ডার ও আইডিএ দাতা দেশগুলোর প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত দায়িত্ব রয়েছে। বিবৃতিতে দিন-তারিখ উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ও ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এসব তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুর্নীতির এ অভিযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা এটা প্রত্যাশা করেছিলাম বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির এ বিষয়টিতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেবে। এতে আরও বলা হয়, কানাডায় এসএনসি লাভালিনের সদর দফতর অবস্থিত। বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে কানাডার ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসেস নামের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসএনসি লাভালিনের দুই সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত ও বিচারকাজ এগিয়ে চলেছে।
চাঞ্চল্যকর ঘুষ কেলেঙ্কারির পর মন্ত্রণালয় হারালেও মন্ত্রিত্ব হারাননি সুরঞ্জিত : পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির আগে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারি। এ ঘুষ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম। এ অভিযোগের কারণে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের পর আবার তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়।
৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গত ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
গত ৯ এপ্রিল রাতে সুরঞ্জিতের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থসহ রেলের দুই কর্মকর্তা ধরা পড়েন। প্রথমে বলা হয় বস্তায় ছিল ২০ লাখ টাকা। এরপর বলা হয় ৭০ লাখ। কোনো কোনো সূত্র জানায়, ওই বস্তায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল।
জানা যায়, ঘুষের এ টাকা নিয়ে তারা মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে, সুরঞ্জিত ওই রাতে তদবির করে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা যাতে নেয়া না হয়, সেজন্য তিনি তদবিরও করেন। রেলওয়ের চাঞ্চল্যকর ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেলে ৬ দিনের মাথায় রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন সাড়ে চার মাস আগে মন্ত্রিত্ব পাওয়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অবশ্য একদিন পর নাটকীয়ভাবে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়।
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের জিএম (পূর্বাঞ্চল) ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তাকর্মী এনামুল হক ৯ এপ্রিল গভীর রাতে ৭০ লাখ টাকাসহ ঢাকায় বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে ধরা পড়েন। প্রায় ১২ ঘণ্টা বিজিবির হাতে আটক থাকার পর রেলমন্ত্রীর চাপে ১০ এপ্রিল দুপুরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তারা জানান, ওই টাকাসহ রেলমন্ত্রীর জিগাতলার বাসায় যাচ্ছিলেন এবং তাদের অপহরণ করার লক্ষ্যেই চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবির গেটে ঢুকিয়ে দেন। এরপর বিজিবি সদস্যরা তাদের টাকাসহ আটক করেন। পরে এপিএস ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা ছাড়া পেলেও চালক আলী আজম এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
জানা যায়, রেলওয়েতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পদে নিয়োগবাণিজ্যের মন্ত্রীর ভাগের একটি অংশ প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা (প্রকাশ যার একটি অংশ নগদ ৭০ লাখ টাকা) তার জিগাতলার বাসায় পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তারা আটক হন। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সরকারি দলের একাধিক এমপি, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন মহল থেকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। সংসদীয় কমিটির বিরোধীদলীয় সদস্যরা সুরঞ্জিত সেনের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। একইদিন রাতে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তাকে জরুরি তলব করেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তাকে দুটি অপশন দেন। এক. নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা; দুই. পদত্যাগ করা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করেই পদত্যাগ করেন।
শুধু তাই নয়, একসময়ের এ বাম রাজনৈতিক নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে এখন সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের মালিক। সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তের মালিকানাধীন ‘সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডকে’ সম্প্রতি ‘ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ’ বা আইসিএক্স লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। নতুন এ লাইসেন্স নেয়ার জন্য তাকে বিটিআরসিতে ফি বাবদ জমা দিতে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির দু’দিন পর সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশনের নামে অত্যন্ত লোভনীয় এ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এর ফি বাবদ পরিশোধিত টাকার উত্স নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ চাকরিজীবী সৌমেন এত টাকা কোথায় পেলেন? কীভাবে পরিশোধ করলেন আইসিএক্স লাইসেন্স ফি’র ৫ কোটি টাকা? তাছাড়া আইসিএক্স অবকাঠামো তৈরিতে আরও অন্তত ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। জানা গেছে, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মন্ত্রীর নামে ‘সেন মার্কেট’ নামে একটি মার্কেট রয়েছে। এটি মন্ত্রিত্বকালে তিনি উদ্বোধনও করেন।
সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারির ঘটনায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা : ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে উদঘাটিত এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী জড়িয়ে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রভাব খাটিয়ে হলমার্ককে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি ও অন্যান্য নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে আরও তিনটি শাখা থেকে ৮০০ কোটি টাকা বেআইনি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। হলমার্ককে ঋণ দিতে তিনি অন্তত ২৭ বার এমডিকে ফোন করেন বলে ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়। এমনকি গত ১৭ মার্চ সাভারে হলমার্ক গ্রুপের কারখানা পরিদর্শনও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ প্রভাবশালী মহলের চাপে ব্যাংকিং খাতের প্রচলিত আইন ও নিয়ম ভেঙে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল শাখা হলমার্ককে ব্যাংকটির আমানতের পাঁচগুণ বেশি ঋণ দিয়ে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চে এ ঘটনা ঘটলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তের আগ পর্যন্ত বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়। সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এবং অনুমোদনে এ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। কারণ, গত মার্চে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল শাখায় আমানতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০৯ কোটি টাকা। আর এপ্রিলে ছিল ৬৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু হলমার্ককেই দেয়া হয় এর প্রায় পাঁচগুণ বেশি টাকা। অর্থাত্ প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনে অন্য শাখা থেকে এনে এ টাকার জোগান দিতে হয়েছে। ঋণসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাংকার জানান, এরকম ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব অডিট রিপোর্টে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে হলমার্কের নামে এই নজিরবিহীন ঋণ দেয়া হয়। এ সময় ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত থেকেছেন। অডিট রিপোর্টে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হলমার্ক থেকে সুবিধা নেয়ার ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতে বেছে নেয়া হয় অভিনব কৌশল। আর তাতে সরাসরি সহায়তা করে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের ক’জন কর্মকর্তা। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে—এটি ব্যাংকিং ইতিহাসের একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ব্যাংক থেকে হলমার্কের নামে নেয়া প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও চলতি মূলধনজাতীয় ঋণও আছে। তবে এ অর্থের ৯০ ভাগই অপর কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় ঋণপত্র (এলসি) খুলে বের করে নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ২৮ মার্চ হলমার্ক গ্রুপ রূপসী বাংলা শাখায় সুতা কিনতে আনোয়ারা স্পিনিং মিলস ও স্টার স্পিনিং মিলসসহ তিনটি স্পিনিং মিলের অনুকূলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার এলসি খোলে। দুদক কর্মকর্তারা জানান, ব্যাক টু ব্যাক এলসি, ইফেক্টেড বিল পার্সেস (এবিপি), পিসিসহ ছয়টি খাতের নামে হলমার্কসহ অপরাপর গ্রুপ ওই টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটি কথিত রফতানিকারক। সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখার সঙ্গে আগে থেকেই তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। নিয়ম অনুযায়ী কোনো কোম্পানি বিদেশ থেকে অর্ডার পেলে এর বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা হয়। হলমার্কও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সেজে এলসি খুলেছিল। দুদক কর্মকর্তারা জানান, তারা বিদেশে গার্মেন্টসামগ্রী রফতানির নামে যে অর্ডারটি জামানত হিসেবে রেখেছিল, সেটি ছিল জাল ও ভুয়া। হলমার্কসহ কয়েকটি জালিয়াত গ্রুপ নিজেরাই বিদেশের পার্টি এবং ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা করে ব্যাংক থেকে পেমেন্ট নিয়ে যায়। অথচ এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি হয়নি। তারা বলেন, বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তিনটিও ছিল ব্যাংকের ওই শাখার গ্রাহক।
দুদকের কাছে রক্ষিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, হলমার্ক যে টাকা হাতিয়ে নেয় ওই টাকা তাদের কোম্পানির একটি ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়। পরে ওই হিসাব থেকে সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের নামে খোলা একটি চলতি হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে টাকাগুলো বের করে নেয় হলমার্ক গোষ্ঠী। দুদক জানায়, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস ও স্টার স্পিনিং মিলসসহ তিনটি স্পিনিং মিলস ও সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের নামে খোলা চলতি হিসাবগুলোও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে করা। এগুলো হলমার্কের বেনামি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে এতবড় দুর্নীতি ব্যাংকের জুনিয়র অফিসারদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রাঘব-বোয়ালদের বাদ দিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে জুনিয়রদের। অথচ ঋণ দেয়ার কোনো ক্ষমতাই তাদের নেই। এ বিষয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি একজন জুনিয়র অফিসার, কেরানি হিসেবে এখানে কাজ করি। কোনো বিল-ভাউচার বা কাগজে স্বাক্ষর করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি কীভাবে জড়িত থাকব। হলমার্ক ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে ওপরের দিকের লোকেরা জড়িত। সাইদুরের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় কাজ করা অবস্থায় হলমার্কের ব্যাপারে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যেতেন কি না। অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে কোনো প্রভাবশালী জড়িত কি না, জবাবে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী মাঝে মাঝে শাখায় আসতেন। ডিজিএমের কক্ষে যেতেন। ওই শাখার এক নারী কর্মী তার আত্মীয়। উপদেষ্টা তার কাছে আসতেন। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর এলাকার মানুষ হিসেবে পরিচিত সোনালী ব্যাংকের ওই নারী কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এ ছাড়া দুদক মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গেও কথা বলবে বলে জানা গেছে।
সিভিল এভিয়েশনের ৪৩৪ বিঘা জমি দখলের উদ্যোগ ফারুক খানের পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের : বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ ও তাদের পুরনো ব্যবসায়িক অংশীদার ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানাধীন ইপকো বিমানবন্দর এলাকায় ৪৩৪ বিঘা জমি দখল করতে যাচ্ছে। বর্তমান বাজারে এ জমির মূল্য ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এ জমি সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেলে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। সূত্র জানায়, প্রথমদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বর্তমানে তারা আর সে অবস্থানে নেই।
এদিকে বিদ্যুত্ সেক্টরে একচেটিয়া ব্যবসা হাতিয়ে নিচ্ছে এ মন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সামিট। বর্তমান সরকার আমলের তিনটি বৃহত্ বিদ্যুত্ কেন্দ্রসহ মোট ৮টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পেয়েছে সামিট। বিবিয়ানা-১, বিবিয়ানা-২ এবং মেঘনাঘাট-২। ৩টি বিদ্যুত্ কেন্দ্রের প্রতিটির উত্পাদন ক্ষমতা ৩৩০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট। তিনটির কাজই পেয়েছে সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল করপোরেশন লিমিটেড। সঙ্গে নামকাওয়াস্তে রাখা হয়েছে মার্কিন কোম্পানি জিই এনার্জিকে। আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার) নীতিমালা অনুযায়ী স্থাপিতব্য এই তিনটি কেন্দ্রের ক্ষেত্রেই সামিটের অংশীদারিত্ব ৮০ শতাংশ। আর আমেরিকান কোম্পানি জিই এনার্জি এলএলসির ২০ শতাংশ। সরকার ২২ বছর ধরে এই কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুত্ কিনবে। এই তিনটি বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য কাজ নিলেও বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনে প্রতিষ্ঠানটির গড়িমসি গোটা খাতকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে।
মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পর বিনা দরপত্রে কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের হিড়িক পড়লে সামিট গ্রুপ নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে বিদু্যুেকন্দ্র স্থাপনের কাজে অযোগ্য ঘোষিত হয়। তারপরও পিডিবিকে দিয়ে তাদের প্রস্তাবের বৈধতা দিতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হয়। পরে সামিট মদনগঞ্জে ১০২ মেগাওয়াট ‘কুইক রেন্টাল’-এর কাজ পেয়েছে। খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ১১৫ মেগাওয়াট ও নোয়াপাড়ায় খানজাহান আলী পাওয়ারের ৪০ মেগাওয়াট ‘কুইক রেন্টাল’ও সামিটের। এছাড়াও সামিট ফার্নেস অয়েলে চালিত সৈয়দপুর ১০৪ ও শান্তাহার ৫২ মেগাওয়াট আইপিপির কাজ পেয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বৃহত্ বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিবিয়ানা বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সামিট-জিই এনার্জি ক্ষমতার জোরে প্রাকযোগ্যতা অর্জন করে। পরে দাতা সংস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। নতুন করে বিবিয়ানা ৩৩০-৪৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদু্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রাকযোগ্যতার প্রস্তাব আহ্বান করা হলে ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল ৭টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের যোগ্যতার দলিলপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাকযোগ্য বিবেচনা করা হলেও ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দলিল (আরএফপি-রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) কেনে। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। মূল্যায়নে পরিকল্পিতভাবে মালয়েশিয়ার ওয়াইটিএল পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বারহাডকে নন-রেসপনসিভ ঘোষণা করা হয়। সামিট-জিই জেভিকে বিবিয়ানা বিদ্যুত্ কেন্দ্রের একমাত্র বৈধ প্রস্তাবদাতা করার পরিকল্পনা থেকেই এটা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ, প্রধান উদ্যোক্তা (লিড স্পন্সর) হিসেবে সামিটের এ ধরনের বৃহত্ কেন্দ্র স্থাপনের পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই।
বিবিয়ানা ৩৩০-৪৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের (দ্বিতীয় পর্যায়) জন্য গত বছরের ২ মে ১২টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান প্রাকযোগ্যতার দলিলপত্র দাখিল করে। ৮টি প্রতিষ্ঠান প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠানের ৫টি দরপত্র দলিল (আরএফপি) কিনলেও ১৪ অক্টোবর মাত্র ৩টি দরপত্র জমা হয়। নানা কারসাজি ও ছলচাতুরির মাধ্যমে এ কেন্দ্রের কাজও সামিটকে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিমান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ফারুক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর বিমানের একচেটিয়া ব্যবসা ও নিয়োগ কার্যক্রম চলে গেছে মন্ত্রীর পকেটে। শুধু তাই নয়, একই সরকারের আমলে পর পর দু’জন মন্ত্রীর অধীনে দুই রকম নীতিতে চলছে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। আগের মন্ত্রীর আমলে বাতিল হওয়া সিদ্ধান্তগুলো বর্তমান মন্ত্রী পাস করেই চলেছেন। এতে দেশের স্বার্থও বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। সূত্র জানায়, বিমানে নতুন করে লোক নিয়োগের বিষয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল জিএম কাদেরের। বিমানের অর্গানোগ্রাম হওয়ার আগে কোনো পদে লোক নিয়োগ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া যেসব পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হয়েছে, সেসব পদে নতুন করে লোক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়েরও। এর পরও সেসব পদে এখন লোক নিয়োগ হচ্ছে। এবং এসব নিয়োগ হচ্ছে পছন্দের লোকদের। জিএম কাদেরের বক্তব্য ছিল, যেখানে অর্গানোগ্রামই নেই, সেখানে লোক নিয়োগ হতে পারে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আইনবহির্ভূতভাবে কেপিসিএল এবং ওসিএলের সরাসরি তালিকাভুক্তি : ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) বেসরকারি খাতের কোম্পানির জন্য পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তি (ডিরেক্ট লিস্টিং) সুযোগ বাতিল করে। কিন্তু বাতিল করা সত্ত্বেও শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তত্কালীন বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক কোম্পানি হিসেবে খ্যাত সামিট গ্রুপের খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল) এবং ওশান কন্টেইনার লিমিটেডকে (ওসিএল) তালিকাভুক্তির বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। ২০১০ সালে কোম্পানি দুটি শেয়ারবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির সুযোগ পেয়ে ‘বুক বিল্ডিং’ পদ্ধতিতে কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানি দুটি শেয়ারের দর বাড়িয়ে নেয়। কেপিসিএলের ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের প্রারম্ভিক বিক্রি মূল্য ১৯৪ টাকা ২৫ পয়সায় এবং ওসিএলের ১০ টাকা শেয়ারের বিক্রি মূল্য নির্ধারিত হয় ১৪৫ টাকা। অস্বাভাবিক দরে মূল্য নির্ধারণের পর কোম্পানি দুটি তার পরিশোধিত মূলধনের মাত্র ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ তুলে নেয়। সরাসরি তালিকাভুক্তির কারণে পুরো টাকাই গেছে পরিচালকদের পকেটে।
ডিএসই’র সর্বশেষ (০২-০৯-১২) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কেপিসিএলের শেয়ারের দর নেমে এসেছে ৬০ টাকা ৫০ পয়সায়। প্রারম্ভিক মূল্য হিসেবে প্রতিটি শেয়ারের দর কমেছে প্রায় ৬৯ শতাংশ। অপর দিকে ওসিএলের শেয়ার ৪৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। সে হিসাবে কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে ৭০ শতাংশ।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates