হলমার্ক গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকায় প্রধানমন্ত্রীর
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি
দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের কমিশনার বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য
জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও
হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম এবং প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল
ম্যানেজার তুষার আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে স্বাস্থ্য
উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলীসহ সরকারের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
থাকার কথা স্বীকার করেছেন তানভীর। তার অনুষ্ঠান ও গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার
কথাও স্বীকার করেছেন তিনি। একই সঙ্গে অর্থ কেলেঙ্কারির দায় স্বীকার করেছে
হলমার্ক গ্রুপ। সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত ডিএন
স্পোর্টসের এমডি শফিকুর রহমান জন ও পরিচালক ফামিদা আখতার চৌধুরী ওরফে শিখা
চৌধুরী এবং ইথান এমব্রয়ডারি প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন
চৌধুরী দুদকে হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্য দিয়েছেন। আজ সোনালী ব্যাংকের দুই
ডিএমডি ও আগামীকাল সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ন কবিরকে দুদকে ডাকা
হয়েছে।
দুদকের কমিশনার বদিউজ্জামান গতকাল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত যাদের নামই আসবে তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করবে কমিশন। এরই মধ্যে পত্রিকায় দুয়েকজন উপদেষ্টার নাম এসেছে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বদিউজ্জামান বলেন, কমিশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
সরকারের প্রভাবশালী অন্য কারো নাম আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা পত্রপত্রিকায় দেখেছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রভাবশালী দুয়েকজনের নাম এসেছে। দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম আসবে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারও নাম এলে ওই ব্যক্তির বক্তব্য না জানলে অনুসন্ধান একপেশে হবে। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যাদের নাম আসবে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরিচালনা পর্ষদের কেউ কেউ এরই মধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন তাদের বিষয়ে কী করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, দেশের বাইরে গেলেও কোথায় যাবে। তাকে তো দেশে ফিরে আসতেই হবে।
কমিশনার আরও জানায়, হলমার্ক গ্রুপ এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য রফতানি না করেই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে—এমন কোনো তথ্য এখনও দুদকের হাতে আসেনি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। যদি অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কমিশনার বদিউজ্জামান বলেন, তদন্তে কত দিন লাগবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। দুদক চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধান সম্পন্ন করার। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কমিশনের কাছে বড় বড় কিছু দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের তদন্ত চলছে। তদন্তে এ পর্যন্ত কী পাওয়া গেছে, এ বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানাতে সম্মত হননি।
দেশে ক্রমাগতভাবে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। এ অবস্থায় দুদক সেগুলো বন্ধে কোনো সুপারিশ করবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরির সময় কিছু সুপারিশ করা হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও এরই মধ্যে বেশকিছু সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্যদের বিষয়েও কিছু পরামর্শ করছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় জড়িত এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার বলেন, অর্থমন্ত্রীর আত্মীয় হোক আর যেই হোক, অনুসন্ধানে যাদের নাম আসবে তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার হলমার্ক এমডির : হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম এবং হলমার্ক গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ গতকাল দুদকে গেছেন। দুদকের অনুসন্ধান টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে হলমার্ক গ্রুপ অর্থ কেলেঙ্কারির দায় স্বীকার করলেও কোনো উপদেষ্টা বা সরকারের প্রভাবশালী কারও নাম প্রকাশ করেনি বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। দুদকের কাছে হলমার্ক গ্রুপ একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। তারা অনুসন্ধান দলের বিভিন্ন প্রশ্নের মৌখিক জবাব দিয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলীসহ বিভিন্ন জনের নাম আসা প্রসঙ্গে জানিয়েছে, হলমার্কের সঙ্গে একাধিক উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর সখ্য রয়েছে। কিন্তু দুদক কর্মকর্তারা ওইসব ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি।
গতকাল দুপুর আড়াইটায় নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন একটি গাড়িতে করে দুদক কার্যালয়ে হাজির হন হলমার্ক গ্রুপের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল ৫টায় হলমার্ক গ্রুপের এমডি বলেন, আমি দুদকের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা আমাদের কাছে যা যা জানতে চেয়েছে আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তার জবাব দিয়েছি। আমার কাছে প্রশ্ন ছিল ব্যাংকের হিসাবে ২৬শ’ কতো কোটি টাকা লোন নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য হলো, আমি প্রচলিত আইনে লোন নিয়েছে। আমি স্বীকার করেছি যে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছি। আমি সরকারি টাকা পাই টু পাই হিসাব করে দিয়ে দেব। আমি ব্যাংকের কোনো দায়দেনা রেখে কবরে যেতে চাই না। আমি টাকা দেব আমার ব্যবসা চালু করুক। গত পহেলা মে থেকে আমার ব্যবসা বন্ধ রেখে ৪০ হাজার শ্রমিককে বেকার বসিয়ে রেখেছে। তাদের পরিবার অনাহারে মরতেছে। সরকার আমার ব্যবসা খুলে দিক।
আপনি ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে লোন নিয়েছেন এবং একই সম্পত্তি দেখিয়ে আলাদা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তানভীর মাহমুদ বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। আমি ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ লোন নিয়েছে তার থেকে ২০ গুণ বেশি সম্পদ আমার আছে। আমার ৭০ থেকে ৮০টি প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোর গেট সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত। আপনারা গিয়ে দেখতে পারেন। আমি মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডাকব। আমি ব্যবসার জন্য টাকা নিয়েছি। আমি কোনো জালজালিয়াতি করিনি। আমি ভেগেও যাইনি। আমি টাকা নিয়েছি, টাকা দেব।
সরকারের প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গে আঁতাত করে আপনি তাদের দিয়ে তদবির করিয়ে লোন নিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর মাহমুদ বলেন, এমন প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিতে পারব না। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কি? তিনি আপনার লোনের তদবির করেছেন কি-না এই প্রশ্নের জবাবে তানভীর মাহমুদ বলেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক উপদেষ্টা হিসেবেই। এর বাইরে নয়। কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কোনো মন্ত্রী-উপদেষ্টার সম্পর্ক থাকতে পারবে না এমন কোনো আইন আছে কি-না আমি প্রধানমন্ত্রীকে সেটি জিজ্ঞাসা করব। তানভীর মাহমুদ আরও বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমার প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে দু’বার গেছেন এবং আমার দেশে (গ্রামের বাড়িতে) গেছেন। এটা যদি অন্যায় হয়, একজন ব্যবসায়ীর কাছে একজন উপদেষ্টা যেতে পারবে না, সেটা আমাদের বলুক সরকারিভাবে।
বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গাড়ি উপহার দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমার ও আমার স্ত্রীর গাড়ি আছে। অন্য কারও নেই?
আপনি বলেছেন আপনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বা গাড়িতে নম্বর প্লেট নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তানভীর মাহমুদ বলেন, আমি গাড়িটি শোরুম থেকে নতুন নিয়েছি। এটির এখনও রেজিস্ট্রেশন নিইনি। তিনি বলেন, আপনারা যে কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে আমার অফিসে আসেন, আমি আপনাদের সাক্ষাত্ দেব— এই কথা বলে গাড়িতে ওঠে চলে যান তিনি।
যাওয়ার সময় আপনি অনিয়ম না করলে দুদক আপনাকে কেন ডাকবে এই প্রশ্নের উত্তরে তানভীর মাহমুদ বলেন, দুদকের সন্দেহ হলে ডাকতেই পারে। তদন্তে আমি সঠিক আছি বলে প্রমাণিত হবে।
উই আর সরি : হলমার্কের পাশাপাশি জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইথান এমব্রডারি প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী এবং ডিএন স্পোর্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান জন ও পরিচালক ফাহমিদা আক্তার চৌধুরী শিখা ওরফে শিখা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই তিনজন দুদকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বেলা দুইটায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে তারা বলেন, উই আর সরি, আমরা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না, যা জানার দুদকের কাছ থেকে জেনে নিন। এই কথা বলে দ্রুত গাড়িতে দুদক কার্যালয় ত্যাগ করেন শফিকুর রহমান জন ও শিখা চৌধুরী এবং মোতাহার হোসেন।
গতকাল দুদকের উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান টিম তাদের এবং হলমার্ক গ্রুপের তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন উপ-পরিচালক এসএম আখতার হামিদ ভুঞা, সহকারী পরিচালক নাজমুস সাদাত ও মো. মশিউর রহমান, উপ-সহকারী পরিচালক মো. মজিবুর রহমান এবং মো. জয়নুল আবেদীন।
আজ সোনালী ব্যাংকের দুই ডিএমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ : হলমার্ক কেলেঙ্করিতে জড়িত সোনালী ব্যাংকের দুই ডিএমডি আতিকুর রহমান ও মাইনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এরই মধ্যে চিঠি লেখা হয়েছে। আজ তারা দুদকে হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
সাবেক এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ কাল : হলমার্ক গ্রুপের আর্থিক কেলেঙ্কারির মূল হোতা সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবিরকে আগামীকাল দুদকে ডাকা হয়েছে। আগেই টেলিফোনে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। হুমায়ুন কবির এমডি থাকাকালে বিশাল অনিয়মের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাত্ করেছে হলমার্ক গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, হলমার্ক গ্রুপের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে বিশাল আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখছে দুদক। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপের নামে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে তা আত্মসাত্ করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা থেকে অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাতের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত অনুরোধে খতিয়ে দেখছে কমিশন।
দুদকের কাছে লেখা বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, শেরাটন শাখার (রূপসী বাংলা হোটেল) আমানতকারীদের অর্থ থেকে মোট তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা (এ পর্যন্ত উদ্ঘাটিত) আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক/পরিচালক (হলমার্ক গ্রুপের প্রধান ব্যক্তি তানভির মাহমুদ) এবং ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময়কালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শাখা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’ এছাড়া ‘সোনালী ব্যাংকের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পরিচালনা পর্ষদের) কোনো কোনো সদস্যের সহযোগিতা/ইন্ধন/যোগসাজশ আছে কি-না তা-ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে’ বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো ওই চিঠিতে কারসাজির মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি-না তা-ও অনুসন্ধান করে দেখতে বলা হয়েছে।
দুদকের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠি অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে শুধু তানভীর মাহমুদের মালিকানাধীন হলমার্ক গ্রুপের নামেই ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত্ করা হয়েছে। একই অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ লুটকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে তাসলিম হাসানের মালিকানাধীন টিঅ্যান্ড ব্রাদার্স তুলেছে ৬০৯ কোটি ৬৯ লাখ, সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন প্যারাগন গ্রুপ তুলেছে ১৪৬ কোটি ৬০ লাখ, বেগম ফাহমিদা আকতার চৌধুরী ও শফিকুর রহমান জনের মালিকানাধীন ডিএন স্পোর্টস তুলেছে ৩৩ কোটি ২৫ লাখ, আবদুল খালেকের মালিকানাধীন নকশি নিট তুলেছে ৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ও আবদুল জলিল শেখের মালিকানাধীন খানজাহান আলী সোয়েটার নামের একটি প্রতিষ্ঠান তুলেছে ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দুদক এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখছে।
দুদকের কমিশনার বদিউজ্জামান গতকাল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত যাদের নামই আসবে তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করবে কমিশন। এরই মধ্যে পত্রিকায় দুয়েকজন উপদেষ্টার নাম এসেছে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বদিউজ্জামান বলেন, কমিশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
সরকারের প্রভাবশালী অন্য কারো নাম আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা পত্রপত্রিকায় দেখেছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রভাবশালী দুয়েকজনের নাম এসেছে। দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম আসবে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারও নাম এলে ওই ব্যক্তির বক্তব্য না জানলে অনুসন্ধান একপেশে হবে। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যাদের নাম আসবে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরিচালনা পর্ষদের কেউ কেউ এরই মধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন তাদের বিষয়ে কী করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, দেশের বাইরে গেলেও কোথায় যাবে। তাকে তো দেশে ফিরে আসতেই হবে।
কমিশনার আরও জানায়, হলমার্ক গ্রুপ এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য রফতানি না করেই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে—এমন কোনো তথ্য এখনও দুদকের হাতে আসেনি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। যদি অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কমিশনার বদিউজ্জামান বলেন, তদন্তে কত দিন লাগবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। দুদক চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধান সম্পন্ন করার। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কমিশনের কাছে বড় বড় কিছু দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের তদন্ত চলছে। তদন্তে এ পর্যন্ত কী পাওয়া গেছে, এ বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানাতে সম্মত হননি।
দেশে ক্রমাগতভাবে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। এ অবস্থায় দুদক সেগুলো বন্ধে কোনো সুপারিশ করবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরির সময় কিছু সুপারিশ করা হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও এরই মধ্যে বেশকিছু সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্যদের বিষয়েও কিছু পরামর্শ করছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় জড়িত এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার বলেন, অর্থমন্ত্রীর আত্মীয় হোক আর যেই হোক, অনুসন্ধানে যাদের নাম আসবে তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার হলমার্ক এমডির : হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম এবং হলমার্ক গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ গতকাল দুদকে গেছেন। দুদকের অনুসন্ধান টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে হলমার্ক গ্রুপ অর্থ কেলেঙ্কারির দায় স্বীকার করলেও কোনো উপদেষ্টা বা সরকারের প্রভাবশালী কারও নাম প্রকাশ করেনি বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। দুদকের কাছে হলমার্ক গ্রুপ একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। তারা অনুসন্ধান দলের বিভিন্ন প্রশ্নের মৌখিক জবাব দিয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলীসহ বিভিন্ন জনের নাম আসা প্রসঙ্গে জানিয়েছে, হলমার্কের সঙ্গে একাধিক উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর সখ্য রয়েছে। কিন্তু দুদক কর্মকর্তারা ওইসব ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি।
গতকাল দুপুর আড়াইটায় নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন একটি গাড়িতে করে দুদক কার্যালয়ে হাজির হন হলমার্ক গ্রুপের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল ৫টায় হলমার্ক গ্রুপের এমডি বলেন, আমি দুদকের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা আমাদের কাছে যা যা জানতে চেয়েছে আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তার জবাব দিয়েছি। আমার কাছে প্রশ্ন ছিল ব্যাংকের হিসাবে ২৬শ’ কতো কোটি টাকা লোন নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য হলো, আমি প্রচলিত আইনে লোন নিয়েছে। আমি স্বীকার করেছি যে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছি। আমি সরকারি টাকা পাই টু পাই হিসাব করে দিয়ে দেব। আমি ব্যাংকের কোনো দায়দেনা রেখে কবরে যেতে চাই না। আমি টাকা দেব আমার ব্যবসা চালু করুক। গত পহেলা মে থেকে আমার ব্যবসা বন্ধ রেখে ৪০ হাজার শ্রমিককে বেকার বসিয়ে রেখেছে। তাদের পরিবার অনাহারে মরতেছে। সরকার আমার ব্যবসা খুলে দিক।
আপনি ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে লোন নিয়েছেন এবং একই সম্পত্তি দেখিয়ে আলাদা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তানভীর মাহমুদ বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। আমি ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ লোন নিয়েছে তার থেকে ২০ গুণ বেশি সম্পদ আমার আছে। আমার ৭০ থেকে ৮০টি প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোর গেট সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত। আপনারা গিয়ে দেখতে পারেন। আমি মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডাকব। আমি ব্যবসার জন্য টাকা নিয়েছি। আমি কোনো জালজালিয়াতি করিনি। আমি ভেগেও যাইনি। আমি টাকা নিয়েছি, টাকা দেব।
সরকারের প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গে আঁতাত করে আপনি তাদের দিয়ে তদবির করিয়ে লোন নিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর মাহমুদ বলেন, এমন প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিতে পারব না। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কি? তিনি আপনার লোনের তদবির করেছেন কি-না এই প্রশ্নের জবাবে তানভীর মাহমুদ বলেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক উপদেষ্টা হিসেবেই। এর বাইরে নয়। কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কোনো মন্ত্রী-উপদেষ্টার সম্পর্ক থাকতে পারবে না এমন কোনো আইন আছে কি-না আমি প্রধানমন্ত্রীকে সেটি জিজ্ঞাসা করব। তানভীর মাহমুদ আরও বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমার প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে দু’বার গেছেন এবং আমার দেশে (গ্রামের বাড়িতে) গেছেন। এটা যদি অন্যায় হয়, একজন ব্যবসায়ীর কাছে একজন উপদেষ্টা যেতে পারবে না, সেটা আমাদের বলুক সরকারিভাবে।
বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গাড়ি উপহার দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমার ও আমার স্ত্রীর গাড়ি আছে। অন্য কারও নেই?
আপনি বলেছেন আপনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বা গাড়িতে নম্বর প্লেট নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তানভীর মাহমুদ বলেন, আমি গাড়িটি শোরুম থেকে নতুন নিয়েছি। এটির এখনও রেজিস্ট্রেশন নিইনি। তিনি বলেন, আপনারা যে কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে আমার অফিসে আসেন, আমি আপনাদের সাক্ষাত্ দেব— এই কথা বলে গাড়িতে ওঠে চলে যান তিনি।
যাওয়ার সময় আপনি অনিয়ম না করলে দুদক আপনাকে কেন ডাকবে এই প্রশ্নের উত্তরে তানভীর মাহমুদ বলেন, দুদকের সন্দেহ হলে ডাকতেই পারে। তদন্তে আমি সঠিক আছি বলে প্রমাণিত হবে।
উই আর সরি : হলমার্কের পাশাপাশি জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইথান এমব্রডারি প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী এবং ডিএন স্পোর্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান জন ও পরিচালক ফাহমিদা আক্তার চৌধুরী শিখা ওরফে শিখা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই তিনজন দুদকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বেলা দুইটায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে তারা বলেন, উই আর সরি, আমরা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না, যা জানার দুদকের কাছ থেকে জেনে নিন। এই কথা বলে দ্রুত গাড়িতে দুদক কার্যালয় ত্যাগ করেন শফিকুর রহমান জন ও শিখা চৌধুরী এবং মোতাহার হোসেন।
গতকাল দুদকের উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান টিম তাদের এবং হলমার্ক গ্রুপের তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন উপ-পরিচালক এসএম আখতার হামিদ ভুঞা, সহকারী পরিচালক নাজমুস সাদাত ও মো. মশিউর রহমান, উপ-সহকারী পরিচালক মো. মজিবুর রহমান এবং মো. জয়নুল আবেদীন।
আজ সোনালী ব্যাংকের দুই ডিএমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ : হলমার্ক কেলেঙ্করিতে জড়িত সোনালী ব্যাংকের দুই ডিএমডি আতিকুর রহমান ও মাইনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এরই মধ্যে চিঠি লেখা হয়েছে। আজ তারা দুদকে হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
সাবেক এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ কাল : হলমার্ক গ্রুপের আর্থিক কেলেঙ্কারির মূল হোতা সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবিরকে আগামীকাল দুদকে ডাকা হয়েছে। আগেই টেলিফোনে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। হুমায়ুন কবির এমডি থাকাকালে বিশাল অনিয়মের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাত্ করেছে হলমার্ক গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, হলমার্ক গ্রুপের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে বিশাল আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখছে দুদক। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপের নামে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে তা আত্মসাত্ করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা থেকে অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাতের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত অনুরোধে খতিয়ে দেখছে কমিশন।
দুদকের কাছে লেখা বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, শেরাটন শাখার (রূপসী বাংলা হোটেল) আমানতকারীদের অর্থ থেকে মোট তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা (এ পর্যন্ত উদ্ঘাটিত) আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক/পরিচালক (হলমার্ক গ্রুপের প্রধান ব্যক্তি তানভির মাহমুদ) এবং ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময়কালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শাখা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’ এছাড়া ‘সোনালী ব্যাংকের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পরিচালনা পর্ষদের) কোনো কোনো সদস্যের সহযোগিতা/ইন্ধন/যোগসাজশ আছে কি-না তা-ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে’ বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো ওই চিঠিতে কারসাজির মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি-না তা-ও অনুসন্ধান করে দেখতে বলা হয়েছে।
দুদকের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠি অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে শুধু তানভীর মাহমুদের মালিকানাধীন হলমার্ক গ্রুপের নামেই ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত্ করা হয়েছে। একই অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ লুটকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে তাসলিম হাসানের মালিকানাধীন টিঅ্যান্ড ব্রাদার্স তুলেছে ৬০৯ কোটি ৬৯ লাখ, সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন প্যারাগন গ্রুপ তুলেছে ১৪৬ কোটি ৬০ লাখ, বেগম ফাহমিদা আকতার চৌধুরী ও শফিকুর রহমান জনের মালিকানাধীন ডিএন স্পোর্টস তুলেছে ৩৩ কোটি ২৫ লাখ, আবদুল খালেকের মালিকানাধীন নকশি নিট তুলেছে ৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ও আবদুল জলিল শেখের মালিকানাধীন খানজাহান আলী সোয়েটার নামের একটি প্রতিষ্ঠান তুলেছে ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দুদক এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখছে।