আমার দেশ পত্রিকার জননন্দিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ১৩ দিনের
রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) পত্রিকা কার্যালয় থেকে কমান্ডো
স্টাইলে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারের পর তিনটি মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়।
ডিবি কার্যালয়ে তার রিমান্ড চলছে।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের বহুল আলোচিত স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস, পুলিশের কাজে বাধাদান ও মারপিটের অভিযোগ—এ তিনটি মামলায় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশ ২৪ দিনের রিমান্ড চাইলে নিম্ন আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
গতকাল সকাল নয়টার দিকে ১৭ মিনিটের কমান্ডো স্টাইলের অভিযানে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারওয়ানবাজারে অবস্থিত পত্রিকা কার্যালয় থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। অমানবিকভাবে গ্রেফতারের সময় তার সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা দুর্ব্যবহার করেন। অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে নিয়ে যায় পুলিশ। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার সুযোগ চাইলেও তা দেয়নি ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের সময় একটি পবিত্র কোরআন শরিফ ও একটি বই সঙ্গে নিতে পারেন তিনি। গ্রেফতারের পর সরাসরি ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয় মাহমুদুর রহমানকে। সেখানে তার মমতাময়ী মা-সহ পরিবারের সদস্য, আমার দেশ-সহ গণমাধ্যম কর্মী, আইনজীবীরা জড়ো হন। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মাহমুদুর রহমানের মা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা সংগ্রামী মানুষের অধিকারের জন্য লড়ে যাচ্ছে। এজন্য তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমার বাচ্চাটাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে পৃথিবীর কাছে
অনুরোধ করি।’
এদিকে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের লড়াইয়ে সদাজাগ্রত পত্রিকা আমার দেশ-এর সম্পাদককে গ্রেফতারে সারাদেশে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। তাত্ক্ষণিক সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে সাংবাদিক ও আমার দেশ-এর পাঠকরা। দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও আমার দেশ পরিবার।
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, বগুড়াসহ সব জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। আদালতে নেয়া হলে শত শত আইনজীবী মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। তার মুক্তি দাবি করে আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২০১০ সালের ১ জুন পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে ১০ মাস ১৭ দিন কারাবন্দি রাখা হয়। পত্রিকাটিও সে সময় ৪৭ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে আদালতের আদেশে পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।
সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬২টি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেয়া হয়।
গতকাল গ্রেফতারের পর তাকে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথন কেলেঙ্কারি ফাঁসের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় দশ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিন মঞ্জুর করে। একই থানায় সম্প্রতি দায়ের করা দুটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিন করে ১৪ দিন রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিন করে ছয় দিন মঞ্জুর করে। এ দুই মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। এমনকি মামলায় পুলিশি কাজে বাধাদান ও মারধরের যে তারিখ ও সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আমার দেশ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন।
গত ডিসেম্বরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে তার বুিরদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ সময় তাকে গ্রেফতার করার ঘোষণা দেন কয়েকজন মন্ত্রী। গত ৮ জানুয়ারি তিনি উচ্চ আদালতে গেলেও জামিন পাননি। এমনকি তাকে গুম করার গুজবও ওঠে। ওই পরিস্থিতিতে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে মাহমুদুর রহমান প্রায় চার মাস পত্রিকা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন।
গতকাল সকালে মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়। ৮টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৮ মিনিট পর্যন্ত কমান্ডো স্টাইলের অভিযানে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। হঠাত্ ডিবি, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশ’ সদস্য কারওয়ানবাজারে অবস্থিত আমার দেশ পত্রিকা কার্যালয় ঘিরে ফেলে। উপস্থিত সংবাদকর্মীরা জানান, অপরাশেনে অংশ নেয়া অফিসার পর্যায়ের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী।
৮টা ৫১ মিনিটে ডিবি পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য কার্যালয়ের ১১ তলার গেটে অবস্থান নেন। সেখানে গার্ডকে মারপিট করে চাবি কেড়ে নেন তারা। কমান্ডো স্টাইলে সরাসরি সম্পাদকের কক্ষে যান ডিবি সদস্যরা। মাহমুদুর রহমান তখন চা খাচ্ছিলেন। পুলিশ তাকে চা খাওয়া শেষ করতেও দেয়নি। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়তে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কার্যালয় থেকে বের করা হয়। কেবল লুঙ্গি বদলে পাজামা পরার সুযোগ দেয়া হয় তাকে। গ্রেফতারকালে তিনি একটি পবিত্র কোরআন শরিফ সঙ্গে নিতে পারেন।
গ্রেফতারের পর সম্পাদকের কক্ষে তল্লাশির নামে জিনিসপত্র তছনছ করে ডিবি পুলিশ। তারা মাহমুদুর রহমানের ব্যক্তিগত কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা, পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ নথিসংবলিত সাতটি সিডি ও কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, তেজগাঁও থানায় দায়ের করা স্কাইপ কথোপকথন কেলেঙ্কারি মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির বিশেষ একটি দল আমার দেশ কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এরপর তাকে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে মিন্টো রোডে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৭ মিনিটের কমান্ডো অভিযান : ১৭ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নন্দিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আমার দেশ কার্যালয় থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। গতকাল সকালে এ অভিযানে অমানবিকভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। চা পানরত অবস্থায় থাকলেও তাকে চা শেষ করতে দেয়া হয়নি। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার অনুরোধও গ্রহণ করেনি পুলিশ। কেবল লুঙ্গি পাল্টে পায়জামা পরার সুযোগটুকু পান তিনি। ১০ মিনিটে অপারেশন শেষ করার অজুহাত দিয়ে টেনেহিঁচড়ে জনপ্রিয় সম্পাদককে পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সকাল পৌনে আটটার দিকে কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ। সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে ডিবি পুলিশের একটি টিম ১১ তলায় আমার দেশ কার্যালয়ে পৌঁছে। আমার দেশ-এর সব ফোন বিকল করে দেয়া হয়। লিফটে কমপক্ষে ২০ জন এবং সিঁড়ি বেয়ে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য পত্রিকা কার্যালয়ের রিসিপশনে যান। সেখানে গার্ডের কাছে জানতে চান, ‘মাহমুদুর রহমান কার্যালয়ে আছেন কি না।’ গার্ড আবদুর রহমান হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়ে বসার অনুরোধ জানান এবং পুলিশের উপস্থিতি সম্পাদককে জানাতে ইন্টারকম ফোন হাতে নেন। এ সময় ডিবি সদস্যরা রেগে গিয়ে তাকে ধমক দিয়ে গেট খুলে দিতে বলেন। দু’জন সদস্য গেট ভাঙতে জোরে ধাক্কা দেন। এ পর্যায়ে গার্ড আবদুর রহমান দরজা আগলে রাখার চেষ্টা করলে তাকে ঘুষি ও লাথি মারা হয় এবং গেট খুলে দিতে বাধ্য করা হয়।
ডিবি সদস্যরা সরাসরি গিয়ে সম্পাদকের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে সকালের নাস্তা খাচ্ছিলেন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অফিস সহকারী তখন কেবল চা দিয়েছেন তাকে। চা হাতেই মাহমুদুর রহমান ডিবি সদস্যদের বসতে বলেন। উত্তরে তারা বলেন, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।’ মাহমুদুর রহমান তখন তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আপনারা বসুন। আমি দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে নেই।’ এতে একজন ডিবি কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলেন, ‘১০ মিনিটে অপারেশন শেষ করব আমরা। কোনো সময় দেয়া যাবে না।’ এরপর তিনি অনুমতি নিয়ে লুঙ্গি পাল্টে পায়জামা পরেন। গ্রেফতারের সময় একটি কোরআন শরিফ ও একটি বই সঙ্গে নেন মাহমুদুর রহমান।
টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করার সময় আমার দেশ-এর একজন ফটোসাংবাদিক ছুবি তুলতে গেলে তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। নিচে নামানোর পর আমার দেশ-এর একজন সংবাদকর্মী তার সঙ্গে গাড়িতে উঠতে চাইলে পুলিশ তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং একজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র তাক করে গুলির হুমকি দেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘মিথ্যা মামলায় এভাবে অমানবিকভাবে গ্রেফতারের বিচার আল্লাহ করবে। সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।’
গাড়িতে ওঠার পর উপস্থিত সাংবাদিক ও সহকর্মীদের উদ্দেশে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা পত্রিকা চালিয়ে যান, আমার জন্য চিন্তা করবেন না।’ এ সময় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হাস্যোজ্জ্বল ও দৃঢ়চেতা দেখাচ্ছিল। উপস্থিত সাংবাদিকরাও পত্রিকা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মাহমুদুর রহমানকে আশ্বস্ত করেন।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের বহুল আলোচিত স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস, পুলিশের কাজে বাধাদান ও মারপিটের অভিযোগ—এ তিনটি মামলায় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশ ২৪ দিনের রিমান্ড চাইলে নিম্ন আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
গতকাল সকাল নয়টার দিকে ১৭ মিনিটের কমান্ডো স্টাইলের অভিযানে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারওয়ানবাজারে অবস্থিত পত্রিকা কার্যালয় থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। অমানবিকভাবে গ্রেফতারের সময় তার সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা দুর্ব্যবহার করেন। অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে নিয়ে যায় পুলিশ। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার সুযোগ চাইলেও তা দেয়নি ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের সময় একটি পবিত্র কোরআন শরিফ ও একটি বই সঙ্গে নিতে পারেন তিনি। গ্রেফতারের পর সরাসরি ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয় মাহমুদুর রহমানকে। সেখানে তার মমতাময়ী মা-সহ পরিবারের সদস্য, আমার দেশ-সহ গণমাধ্যম কর্মী, আইনজীবীরা জড়ো হন। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মাহমুদুর রহমানের মা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা সংগ্রামী মানুষের অধিকারের জন্য লড়ে যাচ্ছে। এজন্য তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমার বাচ্চাটাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে পৃথিবীর কাছে
অনুরোধ করি।’
এদিকে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের লড়াইয়ে সদাজাগ্রত পত্রিকা আমার দেশ-এর সম্পাদককে গ্রেফতারে সারাদেশে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। তাত্ক্ষণিক সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে সাংবাদিক ও আমার দেশ-এর পাঠকরা। দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও আমার দেশ পরিবার।
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, বগুড়াসহ সব জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। আদালতে নেয়া হলে শত শত আইনজীবী মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। তার মুক্তি দাবি করে আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২০১০ সালের ১ জুন পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে ১০ মাস ১৭ দিন কারাবন্দি রাখা হয়। পত্রিকাটিও সে সময় ৪৭ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে আদালতের আদেশে পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।
সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬২টি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেয়া হয়।
গতকাল গ্রেফতারের পর তাকে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথন কেলেঙ্কারি ফাঁসের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় দশ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিন মঞ্জুর করে। একই থানায় সম্প্রতি দায়ের করা দুটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিন করে ১৪ দিন রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিন করে ছয় দিন মঞ্জুর করে। এ দুই মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। এমনকি মামলায় পুলিশি কাজে বাধাদান ও মারধরের যে তারিখ ও সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আমার দেশ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন।
গত ডিসেম্বরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে তার বুিরদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ সময় তাকে গ্রেফতার করার ঘোষণা দেন কয়েকজন মন্ত্রী। গত ৮ জানুয়ারি তিনি উচ্চ আদালতে গেলেও জামিন পাননি। এমনকি তাকে গুম করার গুজবও ওঠে। ওই পরিস্থিতিতে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে মাহমুদুর রহমান প্রায় চার মাস পত্রিকা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন।
গতকাল সকালে মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়। ৮টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৮ মিনিট পর্যন্ত কমান্ডো স্টাইলের অভিযানে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। হঠাত্ ডিবি, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশ’ সদস্য কারওয়ানবাজারে অবস্থিত আমার দেশ পত্রিকা কার্যালয় ঘিরে ফেলে। উপস্থিত সংবাদকর্মীরা জানান, অপরাশেনে অংশ নেয়া অফিসার পর্যায়ের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী।
৮টা ৫১ মিনিটে ডিবি পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য কার্যালয়ের ১১ তলার গেটে অবস্থান নেন। সেখানে গার্ডকে মারপিট করে চাবি কেড়ে নেন তারা। কমান্ডো স্টাইলে সরাসরি সম্পাদকের কক্ষে যান ডিবি সদস্যরা। মাহমুদুর রহমান তখন চা খাচ্ছিলেন। পুলিশ তাকে চা খাওয়া শেষ করতেও দেয়নি। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়তে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কার্যালয় থেকে বের করা হয়। কেবল লুঙ্গি বদলে পাজামা পরার সুযোগ দেয়া হয় তাকে। গ্রেফতারকালে তিনি একটি পবিত্র কোরআন শরিফ সঙ্গে নিতে পারেন।
গ্রেফতারের পর সম্পাদকের কক্ষে তল্লাশির নামে জিনিসপত্র তছনছ করে ডিবি পুলিশ। তারা মাহমুদুর রহমানের ব্যক্তিগত কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা, পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ নথিসংবলিত সাতটি সিডি ও কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, তেজগাঁও থানায় দায়ের করা স্কাইপ কথোপকথন কেলেঙ্কারি মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির বিশেষ একটি দল আমার দেশ কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এরপর তাকে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে মিন্টো রোডে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৭ মিনিটের কমান্ডো অভিযান : ১৭ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নন্দিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আমার দেশ কার্যালয় থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। গতকাল সকালে এ অভিযানে অমানবিকভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। চা পানরত অবস্থায় থাকলেও তাকে চা শেষ করতে দেয়া হয়নি। দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার অনুরোধও গ্রহণ করেনি পুলিশ। কেবল লুঙ্গি পাল্টে পায়জামা পরার সুযোগটুকু পান তিনি। ১০ মিনিটে অপারেশন শেষ করার অজুহাত দিয়ে টেনেহিঁচড়ে জনপ্রিয় সম্পাদককে পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সকাল পৌনে আটটার দিকে কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ। সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে ডিবি পুলিশের একটি টিম ১১ তলায় আমার দেশ কার্যালয়ে পৌঁছে। আমার দেশ-এর সব ফোন বিকল করে দেয়া হয়। লিফটে কমপক্ষে ২০ জন এবং সিঁড়ি বেয়ে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য পত্রিকা কার্যালয়ের রিসিপশনে যান। সেখানে গার্ডের কাছে জানতে চান, ‘মাহমুদুর রহমান কার্যালয়ে আছেন কি না।’ গার্ড আবদুর রহমান হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়ে বসার অনুরোধ জানান এবং পুলিশের উপস্থিতি সম্পাদককে জানাতে ইন্টারকম ফোন হাতে নেন। এ সময় ডিবি সদস্যরা রেগে গিয়ে তাকে ধমক দিয়ে গেট খুলে দিতে বলেন। দু’জন সদস্য গেট ভাঙতে জোরে ধাক্কা দেন। এ পর্যায়ে গার্ড আবদুর রহমান দরজা আগলে রাখার চেষ্টা করলে তাকে ঘুষি ও লাথি মারা হয় এবং গেট খুলে দিতে বাধ্য করা হয়।
ডিবি সদস্যরা সরাসরি গিয়ে সম্পাদকের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে সকালের নাস্তা খাচ্ছিলেন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অফিস সহকারী তখন কেবল চা দিয়েছেন তাকে। চা হাতেই মাহমুদুর রহমান ডিবি সদস্যদের বসতে বলেন। উত্তরে তারা বলেন, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।’ মাহমুদুর রহমান তখন তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আপনারা বসুন। আমি দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে নেই।’ এতে একজন ডিবি কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলেন, ‘১০ মিনিটে অপারেশন শেষ করব আমরা। কোনো সময় দেয়া যাবে না।’ এরপর তিনি অনুমতি নিয়ে লুঙ্গি পাল্টে পায়জামা পরেন। গ্রেফতারের সময় একটি কোরআন শরিফ ও একটি বই সঙ্গে নেন মাহমুদুর রহমান।
টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করার সময় আমার দেশ-এর একজন ফটোসাংবাদিক ছুবি তুলতে গেলে তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। নিচে নামানোর পর আমার দেশ-এর একজন সংবাদকর্মী তার সঙ্গে গাড়িতে উঠতে চাইলে পুলিশ তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং একজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র তাক করে গুলির হুমকি দেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘মিথ্যা মামলায় এভাবে অমানবিকভাবে গ্রেফতারের বিচার আল্লাহ করবে। সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।’
গাড়িতে ওঠার পর উপস্থিত সাংবাদিক ও সহকর্মীদের উদ্দেশে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা পত্রিকা চালিয়ে যান, আমার জন্য চিন্তা করবেন না।’ এ সময় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হাস্যোজ্জ্বল ও দৃঢ়চেতা দেখাচ্ছিল। উপস্থিত সাংবাদিকরাও পত্রিকা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মাহমুদুর রহমানকে আশ্বস্ত করেন।