0 রাজধানীর বাইরে

(১) সিরাজগঞ্জে অবরোধকারীদের দখলে মহাসড়ক; (২) খুলনার দৌলতপুর এলাকায় অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া; (৩) বাসে আগুন; (৪) পটুয়াখালীতে ঢাকা-কুয়াকাটা সড়কে মোটরসাইকেলে আগুন এবং (৫) পাবনায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন : নয়া দিগন্ত
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকে গতকাল সারা দেশে কড়া অবরোধ পালিত হয়। অবরোধ চলাকালে সারা দেশেই ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগের হামলায় একজন জামায়াতকর্মী নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়েছেন। সারা দেশে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অবরোধকারীদের সংঘর্ষে ১০৫০ জনেরও বেশি আহত এবং প্রায় ২০০ গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগকর্মীরা অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। বেশ কয়েকটি স্থানে গুলিতে বিরোধীপক্ষের বহু নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আমাদের ব্যুরো, অফিস ও সংবাদদাতারা এ খবর জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে অবরোধকালে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল এ পরিস্থিতি। অবরোধকারীরা বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান নেন নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি ১৮ দলের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নেন অভ্যন্তরীণ সড়ক ও মহাসড়কে। বিরোধী দলের যেকোনো কর্মসূচিতে পুলিশ মারমুখী থাকলেও গতকাল বিপুলসংখ্যক অবরোধকারীদের সামনে পুলিশ ছিল মূলত অসহায়। তাই নগরের কোনো স্পটে পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধ চলাকালে চট্টগ্রামে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।
অবরোধ চলাকালে এ কে খান মোড়ে ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র মনজুর আলম ও বিএনপি গোলাম আকবর খন্দকার বক্তব্য রাখেন।
নগরীর শাহ আমানত সেতু চত্বরে সকাল ৬টার আগে থেকেই বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে সেখানে নগর বিএনপির সাধারণ স¤পাদক ডা: শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ও সহসভাপতি শামসুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাকলিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ।
সমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা অবরোধের পে বক্তব্য দেন। কোতোয়ালি ও বাকলিয়া থানার জামায়াত নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিল ও সমাবেশ করে। সকাল ৯টার দিকে বাকলিয়া থানা জামায়াতের একটি মিছিল সমাবেশস্থলে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী দেখে পুলিশ অসহায় হয়ে পড়ে।
রাজশাহী : বিপ্তি সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অবরোধ চলাকালে সকালে নগরীর বিনোদপুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও বিপ্তি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করতে দেখা গেছে। অবরোধের সমর্থনে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের খণ্ড খণ্ড মিছিলে গোটা নগরীজুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ বিরাজ করে। মূলত ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের দখলে ছিল রাজশাহী মহাসড়ক।
সকাল ৭টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে পুলিশের সাথে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। প্রায় আধঘণ্টা উভয় পরে মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, রেলগেট, শালবাগান, বায়া ও নওদাপাড়া এলাকায় ১৮ দলীয় জোটের কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করেন এবং মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অবরোধ শুরুর দিকে সড়কে কিছু অটোরিকশা ও রিকশা দেখা গেলেও বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
রাজশাহী নগরীর সপুরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয়ের সামনে মঞ্চ তৈরি করে সেখানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে অবরোধ পালন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু।
শালবাগান বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন কাশিয়াডাংগা মোড়ে নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান করেন। আর বিনোদপুর এলাকায় অবরোধে নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহানগর যুবদল আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
খুলনা : পুলিশের বাধা, সংঘর্ষ, গুলি ও লাঠিচার্জের মধ্য দিয়ে খুলনায় অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্য তারিকুল ইসলাম ও দৌলতপুর থানা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক নান্নুসহ ২১ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অবরোধ চলাকালে পুলিশ মহানগর ও জেলা থেকে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।
সকাল সোয়া ৮টার দিকে নগরীর দৌলতপুর থানাধীন মহসিন মোড়ের তেঁতুলতলায় বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীরা সড়কের এক পাশে অবস্থান নিয়ে নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা শুরু করেন। তখন খালিশপুর ও দৌলতপুর জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাসান মাহমুদ শওকত আলী ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) টি এম মোশারফ হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাস্তা থেকে তাদের চলে যেতে বলেন। এ সময় মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্য তারিকুল ইসলাম পুলিশ অফিসারদের সাথে কথা বলতে চাইলে ডিসি হাসান মাহমুদ শতকত আলী প্তি হয়ে এক কনস্টেবলের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এরপর শুরু হয় ইটপাটকেল নিপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ। পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি ও টিয়ার শেল নিপে করে। এতে মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্য তারিকুল ইসলাম, দৌলতপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সিরাজুল হক নান্নু, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক এস এম জসিম উদ্দিন, শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম হোসেন, আড়ংঘাটা ইউনিয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক মতলেবুর রহমান মিতুল, ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক উকিল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আমিন হোসেন, যুবদল নেতা সোহেল, ছাত্রদল নেতা সোহান হোসেন জয় গুলিবিদ্ধ হন। তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আব্দুল হালিম, হাফিজুর রহমান পিন্টু, ইমাম হোসেন, সেলিম আহসান, শহিদুল ইসলাম বিপ্লব, মাহবুবুর রহমান, সৈয়দ মাঈনুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, সোহেল শেখ জন, বিপ্লব হোসেন, মনিরুল হক ও হেদায়েতুল্লাহ দিপু গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আহত শ্রমিক দলের দৌলতপুর আঞ্চলিক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম হোসেন, ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক উকিল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আমিন হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল বিকেলে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বরিশাল : বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের রূপাতলী দপদপিয়া ব্রিজ এলাকায় দুপুরে অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। এ সময় পুলিশ ৩৬ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এ ছাড়াও নগরীর রূপাতলী ও গড়িয়ারপাড় এবং জেলার উজিরপুর, মুলাদী ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরে অবরোধকারীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের হামলায় আরো ১০ জন আহত হয়েছেন। এসব এলাকা থেকে পুলিশ ১৫ জনকে আটক করেছে।
অবরোধ চলাকালে বরিশালে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। কঠোর অবরোধ কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। পুরো রাজপথ ছিল ১৮ দলের নেতাকর্মীদের দখলে। রাজপথে জনস্রোতের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে।
রংপুর : রংপুরে সকাল থেকেই পিকেটারদের গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও গাছের গুঁড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি। সকাল পৌনে ৮টায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের হাজিরহাটে পিকেটাররা একটি মাইক্রোবাস ও ট্রাক ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর আগে সাড়ে ৭টায় পাগলাপীরে সড়ক অবরোধ করে ভাঙচুর করে পিকেটাররা। সকাল ৭টায় পিকেটাররা মিঠাপুকুর উপজেলা সদরে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে টায়ারে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেখানে একটি বাস ভাঙচুর করে পিকেটাররা।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রলীগের হামলায় জামায়াত কর্মী ওয়ারেছ আলী নিহত হয়েছেন। নিহত ওয়ারেছ আলী এনায়েতপুর থানার সৈয়দপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর (৬২) ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যদর্শীরা জানায়, রোববার সকাল থেকে এনায়েতপুর থানার সামনে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়কে অবরোধ তৈরি করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধকারী জামায়াত কর্মীদের একটি গ্র“প বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তারা আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অবরোধবিরোধী মিছিলের সামনে পড়ে। সুযোগ বুঝে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা অবরোধকারীদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি লাঠিসোটার আঘাতে ওয়ারেস আলী গুরুতরভাবে আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে নেয়া হলে পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিল। এ দিকে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা কাপুরুশোচিতভাবে হামলা চালিয়ে এনায়েতপুর থানার সৈয়দপুর ওয়ার্ড জামায়াতের বায়তুল মাল সম্পাদক ওয়ারেছ আলীর হত্যার জন্য নিন্দা জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ, সেক্রেটারি মাওলানা শাহিনুর আলম, এনায়েতপুর থানা জামায়াতের আমির ডা: সেলিম রেজা ও সেক্রেটারি ডা: মোফাজ্জল হোসেন সবুজ। তারা অবিলম্বে ওয়ারেছ আলীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কড্ডাতে পুলিশ ও অবরোধকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়।
পটুয়াখালী :পটুয়াখালীতে সড়ক অবরোধ চলাকালে ১৮ দলীয় জোটের কর্মীদের সাথে পুুলিশ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে প্রায় ৭০ জন আহত হয়েছে। এতে জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান টোটন, মিজানুর রহমান, জেসমিন জাফর, ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন, গোলাম মস্তফা, শহীদুল ইসলাম আকন, মামুন মৃধা, রুহুল আমিন, খালেক মাঝি, সজীব ও মিঠুসহ ৭০ জন আহত হয়। জেলায় আটক করা হয়েছে সাতজনকে।
গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ রব মিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় নেতাকর্মীরা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে। সকাল ৯টার দিকে যুবলীগ ও শ্রমিকলীগ বশাকবাজার এলাকায় আবরোধকারীদের ওপর হামলা চালায়। সেখান থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফোরকান সিকদারের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল মহড়া নিয়ে শিয়ালী এলাকায় অবরোধকারীদের ওপর হামলা চালায়। জোটের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংর্ঘষ হয়। এতে জোটের সমর্থকদের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। আহত এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা পিছু হটে যায়। এ সময় দু’টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় হয়।
এর আগে সকাল ৮টায় শহরের বশাকবাজার এলাকায় অবরোধকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের হামলায় ২০ জন আহত হয়।
এ ছাড়া বাউফল উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন স্থানে ও বাসাবাড়িতে যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের গফরগাঁও, গৌরীপুর, ত্রিশাল ও ভালুকায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গফরগাঁওয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ দুই শতাধিক রাবার বুলেট ও প্রায় অর্ধশত টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। কয়েক দফা সংঘর্ষে টিভি সাংবাদিক ও ১৪ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আওয়ামী লীগ কর্মীরা মোহনা টেলিভিশনের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি রিপন গোয়ালাকে কুপিয়ে আহত করে এবং তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ কর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির দু’টি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এ দিকে গৌরীপুরের রামগোপালপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ দেখতে এসে ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে ইব্রাহিম (৮) নামে এক শিশু মারা যায়। পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গফরগাঁওয়ে অবরোধকারীরা ভোরে গফরগাঁও-ভালুকা সড়কের রেললাইন ও গফরগাঁও রেলস্টেশনে অবস্থান নিলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় অবরোধকারীরা মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল পৌনে ৯টার দিকে পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ কর্মীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা উপজেলা বিএনপির দু’টি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এর পর উপজেলা সদর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি দলীয় কর্মীরাও গুলি করে। সংঘর্ষের চিত্র ধারণকালে আওয়ামী লীগের কর্মীরা মোহনা টেলিভিশনের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি রিপন গোয়ালাকে কুপিয়ে আহত করে এবং তার ডিভি ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ দিকে ত্রিশালে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ওই সংঘর্ষ দেখতে এসে ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে দৌলতপুর গ্রামের হবি মিয়ার ছেলে ইব্রাহিম নিহত হয়।
মুন্সীগঞ্জ : ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের লৌহজংয়ের মাওয়া চৌরাস্তায়, শ্রীনগরের ছনবাড়ি, সিরাজদিখানের নিমতলা, কুচিয়ামোড়া এলাকায় অবরোধ চলাকালে পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে লৌহজং থানার ওসি জাকিউর রহমানসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ প্রায় ৭০ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রোববার অবরোধ চলাকালে এ সংঘর্ষ হয়।
সকাল ৭টায় লৌহজংয়ের মাওয়া চৌরাস্তায় অবরোধকারীরা অবস্থান নিতে গেলে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় লৌহজং উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান খান, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান মনিরুল মনি পল্টন, সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন দোলন, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক অবাক, লৌহজং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামাল ঢালী, বিএনপি নেতা কামাল, গোলাম গাউস সিদ্দিকী, মহিলা দল নেত্রী আয়েশা আলম, শ্রীনগর যুবদলের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জেমস, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, যুবদল নেতা সোহাগ ঢালী, বাবু, মনির হোসেনসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এ ছাড়া সকাল ৬টা থেকে ৮টা শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ি চৌরাস্তায় পুলিশের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল ও কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে অবরোধকারীরা অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে। সেখানে আহত হন মনির হোসেন, উজ্জ্বল, মিজান ও ছাত্রদলের আলমগীর। একই সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা বাইপাস সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। এ ছাড়া সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে কুচিয়ামোড়া এলাকায় হামলায় আহত হন বিএনপি কর্মী সালাম, জহিরুল, সত্যা ও জয়বুল। নিমতলায় আহত হন সিরাজদিখান থানার এসআই জাহিদ হোসেন, সিপাহি আবুল হোসেনসহ বিএনপির ২০ নেতাকর্মী। নিমতলায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা দু’টি মার্কেট ও নিমতলার বিএনপির পার্টি অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আওলাদ হোসেন সুপার মার্কেট, ইয়াজউদ্দিন সুপার মার্কেটের অর্ধশত দোকান ভাঙচুর করা হয়। মাওয়ায় পুলিশ ২০ রাউন্ড, কুচিয়ামোড়ায় ২৮ রাউন্ড ও নিমতলায় আরো ২০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা আট ঘণ্টার রাজপথ অবরোধ। ভোর থেকেই অবরোধের সমর্থনে বিএনপির কর্মীরা পিকেটিং করে। অপর দিকে অবরোধের বিপক্ষে সরকার দলীয় একটি লাঠি মিছিল বেলা ১১টায় শাপলা চত্বর থেকে ভাঙ্গাব্রিজ এলাকা অতিক্রম করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাধে। জেলাব্যাপী সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ উভয় দলের ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে জেলা বিএনপি জানিয়েছে তাদের ৩২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : ঝিনাইদহে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিএনপির কমপে ১০ জন আহত হয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা সকাল থেকে জেলার সব রাস্তায় শতাধিক স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। তারা রাজপথে সভা-সমাবেশ শুরু করে। এ সময় মিছিলে মিছিলে মুখর হয়ে ওঠে চার দিক। আওয়ামী লীগের কর্মীরাও মাথায় হেলমেট পরে রামদা, চাপাতি, রড ও লাঠি নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। এ সময় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ফলে আতঙ্কিত মানুষ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হয়নি। যান চলাচল করেনি।
পিরোজপুর : পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলা সদরে মাওলানা সাঈদীর সমর্থকদের সাথে পুলিশ, আ’লীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলি ও লাঠির আঘাতে ২৮ জন আহত হন। পুলিশের গুলিতে আহত মোস্তফা মীর (৪৫) নামে এক ভ্যানচালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দিকে জিয়ানগর থানার ওসি নাসির উদ্দিনসহ ছয় পুলিশ ও তিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর হয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীব কর্মীরা জিয়ানগর সদরে জামায়াত নেতা হাফেজ আলতাফ হোসেনের বাসায় হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৫৫ রাউন্ড চাইনিজ এসএমজি, চাইনিজ রাইফেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে বলে জিয়ানগর থানার ওসি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে,গতকাল সকাল ১০টার দিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্মস্থান জিয়ানগর উপজেলার সাউথখালীসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ সাঈদীর মুক্তির দাবিতে এক বিােভ মিছিল নিয়ে জিয়ানগর উপজেলা সদরে এলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মিছিলকারীদের ধাওয়া খেয়ে তারা পিছু হটে যায়। পরে জিয়ানগর থানা ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে সরকার সমর্থকদের সাথে যোগ দিয়ে আবার সাঈদী সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। শুরু হয় উভয় পরে মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এ সময় বিএনপি অফিসের সামনে অবস্থানরত বিএনপি কর্মীরা সাঈদী সমর্থকদের সাথে যোগ দেন। বিােভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি ও লাঠিচার্জ করে। পুলিশ বিােভকারীদের ওপর জিয়ানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ শঙ্কর কুণ্ডুর নির্দেশে গুলি চালিয়েছে বলে ওসি নাসির উদ্দিন জানান। সাঈদী সমর্থক ও জামায়াত-বিএনপি কর্মীদের ইটপাটকেলে জিয়ানগর থানা ওসি ও পাঁচ কনস্টেবল আহত হন। আহতদের মধ্যে কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম ও আবদুল কাদের এবং আওয়ামী লীগ কর্মী তোবারেক হাওলাদার, সেলিম ও আলম মুন্সীকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিকে জেলার নাজিরপুরে পুলিশ আট বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জকসিনবাজার, চরচামিতা ও রামগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ উভয় পরে ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় ট্রাক ও বাসসহ ১১টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের চরচামিতা এলাকায় পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে গোলাগুলিতে ঢাকা এক্সপ্রেস গাড়ির হেলপার মিজান, গ্রামীণ পরিবহনের সুপারভাইজার আজাদ ও লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক্যালের ছাত্র মেশকাতসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া সকাল ১০টায় একই উপজেলার জকসিনবাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। অপর দিকে জেলার রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর চৌরাস্তায় বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে উপজেলা যুবদলের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন পলাশসহ সাতজন আহত হয়। পরে রামগঞ্জের সোনাপুর এলাকায় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিপে করে। মুমূর্ষু অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন পলাশকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগর : চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে অবরোধ চলাকালে বিএনপি-জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ওসিসহ ১০ জন আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপি অফিস ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের অফিস ও ২০টি মোটরসাইকেল। লুটপাট চালানো হয় কয়েকটি দোকানে। উপজেলা শহর জীবননগর রণেেত্র পরিণত হয়। আহত ওসি শাজাহান আলীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নওগাঁ : নওগাঁয় ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন খণ্ড খণ্ড মিছিল করে। কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, তাজের মোড় এবং বাটার মোড়ে পৃথক অবরোধ গড়ে তুলে সমাবেশ করেছে। কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুবক্কর সিদ্দিক নান্নুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শহরের তাজের মোড় এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব:) আব্দুল লতিফ খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত প্রতিবাদসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু। বাটার মোড়ে শহর বিএনপি পৃথক এক সমাবেশের আয়োজন করে।
অবরোধ চলাকালে নওগাঁ জেলা সদর থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করেনি। অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় নওগাঁয় দু’টি ট্রাক এবং বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রানীনগর উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ করে এবং ভাঙচুর চালায়। এ সময় সংঘর্ষে উভয় পরে তিনজন কর্মী আহত হন। শহরের দয়ালের মোড় এলাকা থেকে রোববার শিবিরের তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার : কক্সবাজারে সর্বাত্মক অবরোধ পালিত হয়েছে। গতকাল রাজপথ ১৮ দলীয় নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। তবে এ সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিেেপ ৪০ জন আহত হয়েছে। আটক হয়েছেন ১৯ জন।
বর্তমান সরকারের সময় বিরোধী দলের সবচেয়ে কার্যকর কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকাল থেকে ১৮ দলের নেতাকর্মী, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাজপথ দখল করে নেয়। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। এ সময় রাস্তায় নেমে আসেন শত শত লোক। খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয় ১৮ দলের পক্ষ থেকে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুলিশের উপস্থিতিও বেড়ে যায়। এ সময় পুলিশ কক্সবাজার বাসটার্মিনাল, ঈদগাহ ও চকরিয়া স্টেশনে মিছিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে ৪০ জন আহত হন।
কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ জসীম উদ্দিন জানান, কক্সবাজার বাসটার্মিনাল ও লিঙ্ক রোড এলাকা থেকে মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট আমিনুল হক, মিজকাতুল হামিদ, ফরিদুল হক, এনাতুল করিম, রিয়াজ মোহাম্মদ শাকিল ও কামাল উদ্দিন নামে সাতজনকে আটক করে পুলিশ।
এরা সবাই জামায়াত ও শিবিরকর্মী।এ ছাড়া অন্যান্য স্থান থেকে আরো চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। অবরোধের কারণে যানবাহন বন্ধ থাকে। এতে অনেকটা হরতালের আমেজ চলে আসে।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সাথে অবরোধ পালনকারী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ ৫৫ জন আহত হয়েছেন। অবরোধকারীরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচটি মোটরসাইকেলসহ সাতটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশত যানবাহন ভাঙচুর করেন। পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের থেমে থেমে সংঘর্ষ চলাকালে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর থেকে বন্দরের লাঙ্গলবন্ধ পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার রণেেত্র পরিণত হয়। অবরোধ চলাকালে কাঁচপুর মূলত অচল হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২২৭ রাউন্ড টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
আহতদের মধ্যে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা শাহীনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশি শাহীনকে গোপনে চিকিৎসা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হবে বলে বিএনপির নেতারা জানান। শাহীন ১২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। সোনারগাঁও ছাত্রলীগের নেতা নাজমুলের ছোড়া গুলিতে শাহীন আহত হন বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান।
গুলিবিদ্ধ অন্যরা হলেন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান ও বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, বিএনপি নেতা গুলজার খান, ফখরুল ইসলাম মজনু, সাইদুর ও শাহ আলম। এ ছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর আহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামসহ আরো অনেকে।
অবরোধ সফল করতে গতকাল সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে ঘন কুয়াশা উপো করে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী কাঁচপুরে মিছিল নিয়ে আসেন। একই সময় মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল এসে তাদের সাথে যোগ দেন। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাঁচপুর তিন রাস্তার মোড় অবরোধ করে পুলিশের সামনেই বিােভ করতে থাকেন। ৫ মিনিট পর সকাল সাড়ে ৭টায় অবরোধকারীরা একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে। ওই সময় অবরোধকারীরা ঘন কুয়াশার আড়াল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিপে করতে থাকলে পুলিশ টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে জবাব দেয়। পুলিশের লাঠিচার্জে জেলা ওলামা দলের সভাপতি সামসুর রহমান খান বেনুর মাথা ফেটে যায় এবং শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে কাঁচপুরের মডার্ন কিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর কিছুণ পরই যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা দিপু ভূঁইয়ার নেতৃত্বে রূপগঞ্জ থেকে একটি মিছিল এসে কাঁচপুরে যোগ দেয়। সকাল পৌনে ৮টার দিকে কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব পাশে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দেন অবরোধকারীরা। এরপর সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে বন্দরের মদনপুর পর্যন্ত সড়ক অবরোধকারীদের দখলে ছিল। অবরোধকারীরা সড়কে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বিএনপি নেতাদের বুঝিয়ে সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিলেও কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। এমনকি রিকশাচালকেরাও রাস্তায় বের হননি।
সকাল ৯টার দিকে জামায়াতে ইসলামী একটি মিছিল নিয়ে কাঁচপুরে এলে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে শুরু হয় সংঘর্ষ।
এ দিকে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামের নেতৃত্বে অবরোধ কর্মসূচি পালন ও বিােভ মিছিল করলে সোনারগাঁও থানার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি মিছিল অবরোধকারীদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও গুলি ছুড়েছেন বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান। পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন ছাত্রদল নেতা শাহীন। এ ছাড়া পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন আরো চারজন।
গাজীপুর : গাজীপুরে গতকাল সর্বাত্মক অবরোধ পালিত হয়েছে। ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা জেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। অবরোধকালে জেলার কালীগঞ্জ, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর ও একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিরোধী দলের পাঁচজনকে আটক করেছে। এ দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন।
এ দিকে টঙ্গীতে গতকাল বেলা ১১টায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক কর্মীর একটি জঙ্গিমিছিল ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা রামদা, ছোরা ও হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহাসড়কের দুই পাশের দোকানপাট ও ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা জামায়াত-শিবির কর্মী সন্দেহে সাধারণ পথচারীদের ওপর চড়াও হন। এতে ১০ জন পথচারী আহত হন। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা টঙ্গী পৌর ট্রাক টার্মিনালেও হামলা চালিয়ে ২৫টি ট্রাক ভাঙচুর করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। ঘটনার সময় র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা জঙ্গিমিছিলকে পেছন দিক থেকে অনুসরণ করছিলেন। মিছিলকে অনুসরণকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা মিছিলকারীদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে টঙ্গী থানা বিএনপি নেতারা জানান।
যশোর : যশোরে রাজপথ অবরোধকারী ও অবরোধের বিরোধীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী ১৮ দলের ডাকা সড়ক অবরোধ পালিত হয়েছে। অবরোধ চলাকালে যশোরের সাথে দেশের ১৮টি রুটের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে যশোর জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা সকাল ৭টা থেকে চাঁচড়া মোড়ে অবস্থান নেন। সাথে সাথে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরাও এখানে এসে যোগ দেন। পরে তরিকুল ইসলাম দুপুরে যশোরে খাজুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধকারীদের সাথে গিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া যশোর শহরের মুড়লী মোড়, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মনিহার সিনেমা হলের সামনেও অবরোধ পালন করেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
অবরোধ চলাকালে বেলা ২টা পর্যন্ত যশোরের সাথে দেশের ১৮টি রুটে সব ভারী যান চলাচল বন্ধ ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ যশোরে আসতে না পারায় শহর ফাঁকা দেখা গেছে। যাত্রী না থাকায় শহরে রিকশা ও ইজিবাইকের উপস্থিতি ছিল কম।
এ দিকে রাজপথ অবরোধকালে যশোর-নড়াইল সড়কের ভাঙ্গুড়ার ধলগায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১টায় বাঘারপাড়ার সংসদ সদস্য রণজিৎ রায়ের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একটি মিছিল বের করে। এ সময় সেখানে অবরোধরত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেন মিছিলকারীরা। বিএনপি নেতাকর্মীরাও তাদের ধাওয়া করলে দুই পক্ষে কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
যশোর-মাগুরা সড়কের খাজুরা বাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি ট্রাক ভাঙচুর করেন।
নোয়াখালী : নোয়াখালীতে অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং ১৮ দলীয় জোটের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা বিএনপির অফিস ও বাইরে ব্যবসায়প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। জেলা শহর মাইজদী জেলার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর উপজেলায় ১৮ দলীয় জোটের নেতৃত্বে অবরোধ পালিত হয়। এসব এলাকায় সামান্য কিছু রিকশা ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সকাল ৬টা থেকে অবরোধ সমর্থনকারীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান করেন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শাহজাহান ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ আজাদের নেতৃত্বে অবরোধের সমর্থনে এক বিশাল বিােভ মিছিল মাইজদী প্রধান শহর প্রদণি করে। জেলার প্রধান বাণিজ্য চৌমুহনীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আ: রহিম চৌমুহনী পৌর বিএনপি সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন ও সাবেক ছাত্রদলের জেলা সেক্রেটারি জিএস সুমনের নেতৃত্বে অবরোধ পালিত হয়। এ ছাড়া সকাল ৭টায় কবিরহাটে ১৮ দলের নেতাকর্মী মিছিল বের করেন। এতে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পিকেটারের হাতে কবিরহাট থানার ওসি মাহাবুববুর রহমান লাঞ্ছিত হয়। একই উপজেলার শাহারাস্তি বাজারে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় ২০ জন পিকেটার আহত হন। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়। চাটখিলে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে হরতাল সমর্থনকারী দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এতে ছাত্রদল ও যুবদলের ১০ কর্মী আহত হন। বেলা ১টায় অবরোধ শেষপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ কর্মীরা চাটখিল বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন এবং অফিসের আসবাবপত্র বের করে আগুন দেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা চাটখিল মোহাম্মিয়া হোটেল, গাংচিল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ভাঙচুর করে ও আজিজ সুপার মার্কেটে যুবদল নেতা সুলতান বাবরের জেনারেটর ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়া তিনটি মোটরসাইকেল একটি পিকআপে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়। মাইজদী-চৌমুহনী সড়কের রমজান বিবিতে চারটি সিএনজি, একটি পিকআপ, মাইজদী রৌশনবাণী সিনেমার দেিণ দু’টি সিএনজি, মাইজদী বাজারে দু’টি সিএনজি ভাঙচুর হয়।
ফেনী : ফেনীতে অবরোধ চলাকালে শহরের প্রধান সড়ক ট্রাংক রোডে কর্মরত দুই সাংবাদিককে প্রকাশ্যে বেদম পিটিয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় তারা ফেনী প্রেস কাব ভবন ও আশপাশের দোকানে হামলা চালান।
পুলিশ ও প্রত্যদর্শী সূত্র জানায়, বেলা ১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলে জেলা অওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বিকম, পৌরমেয়র নিজাম উদ্দিন হাজারী নেতৃত্ব দেন। প্রেস কাবের সামনে অবস্থানরত অবরোধ সমর্থকদের ওপর মিছিল থেকে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান ছাত্রলীগ কর্মীরা। তাদের হামলায় জেলা ছাত্রদল নেতা আকাশসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। কর্তব্যরত সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগ কর্মীরা। তাদের পিটুনিতে দৈনিক ফেনীর সময়ের স্টাফ রিপোর্টার আরিফ আজম ও ফটোগ্রাফার আবদুর রহিম গুরুতর আহত হন। তারা আবদুর রহিমের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। আহত আবদুর রহিমকে ফেনী আল কেমী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা প্রেস কাব ভবন ও আশপাশের দোকানে ভাঙচুর চালান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ থাকায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেনি। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফকানির কোনো গাড়ি চলেনি। পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ জন পিকেটারকে আটক করেছে।
ভোর প্রায় সাড়ে ৫টায় জেলা বিএনপি ও ১৮ দলীয় বহু নেতাকর্মী কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১০টি স্থানে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি ও বিােভ শুরু করেন। বিুব্ধরা এ সময় বিভিন্ন স্থান ও রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিােভ করেন। সকালে বিএনপিসহ ১৮ দলের নেতাকর্মীরা সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ অ্যাডভোকেট হারুন আল রশীদের নেতৃত্বে মিছিল বের করে সড়কে বিক্ষোভ করেন।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা পৃথকভাবে বিােভ মিছিল নিয়ে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন।
এ দিকে মরহুম মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুর নেতৃত্বে পাটুরিয়া ঘাটে সকালে মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে পাটুরিয়ার লঞ্চ ঘাটে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গাইবান্ধা : ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, যানবাহন ভাঙচুর, কাঠের গুঁড়ি-বৈদু্যুতিক খুঁটি-গাছ ফেলে রাস্তায় ব্যারিকেড ও পুলিশের টিয়ার শেল ও অবরোধকারীদের ইটপাটকেল নিেেপর মধ্য দিয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে ২৫টি যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশসহ ২০ জন আহত এবং লাভলু নামে এক পথচারীকে পুলিশ আটক করে।
সকাল ৬টায় পলাশবাড়ী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জিয়াউল হক জুয়েলের নেতৃত্বে পৌর বিএনপি, থানা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ী দণি বন্দর থেকে অভিরামপুর পর্যন্ত অবরোধ করেন। এ সময় তারা দণি বন্দর এলাকায় ২৫টি যানবাহন ভাঙচুর করেন। সকাল ৮টায় পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে অবরোধকারীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়াসহ ইটপাটকেল নিেেপর ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশসহ ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ২০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিপে করে। অপর দিকে থানা বিএনপি-ছাত্রদল, জামায়াত-শিবিরসহ ১৮ দলের দুই হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক শহরের উত্তর প্রান্তে ব্র্যাক অফিস এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়ে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও অব্যবহৃত বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। গাইবান্ধা জেলা শহরে অবশ্য শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।
নেত্রকোনা : অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে গতকাল সকালে নেত্রকোনায় বাস টার্মিনালের অদূরে সাকুয়ায় পিকেটারেরা ময়মনসিংহগামী একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ ছাত্র ও যুবদলের মাসুদ, মুন্না, সেলিম ও নিজামকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া কলমাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে পিকেটারেরা কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুরের সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদল নেতা সোলেমানকে গ্রেফতার করে।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের লৌহজংয়ের মাওয়া চৌরাস্তা, চন্দ্রবাড়ী, কুমারভোগ ও সিরাজদিখানের নিমতলা, কুচিয়ামোড়া এলাকায় পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষে লৌহজং থানার ওসি জাকিউর রহমানসহ অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে তিনজনকে। অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সাথেও বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষকালে পুলিশ প্রায় ৭০ রাউন্ড টিয়ার শেল-রাবার বুলেট নিপে করে। এর মধ্যে লৌহজং উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর শিকদার, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান মনিরুল মনি পল্টন, সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন দোলন, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক অবাক, লৌহজং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামাল ঢালী, বিএনপি নেতা কামাল, গোলাম গাউস সিদ্দিকী, মহিলা দল নেত্রী আয়েশা আলম নারগিস, শ্রীনগর যুবদলের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জেমস, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, যুবদল নেতা সোহাগ ঢালীসহ দুই দফায় অন্তত ৩০ আহত হয়েছেন মাওয়ায়। গুরুতর আহতদের শ্রীনগর, মাওয়া ও ঢাকাসহ বিভিন্ন কিনিকে ভর্তি করা হয়েছে এবং অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates