0 কোটা সংস্কার আন্দোলনে সোচ্চার চাকরি প্রত্যাশীরা : ৪৪ নয়, চাকরিতে ৮৫ ভাগ মেধার মূল্যায়ন দাবি

নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটানীতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে সোচ্চার হয়ে উঠছে চাকরি প্রত্যাশীরা। বিসিএস, সরকারি বেসরকারি ব্যাংকসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে কোটায় চাকরির পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রধান প্রধান সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার চাকরি প্রত্যাশী। চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের এ আন্দোলন নস্যাত্ করার জন্য ছাত্রলীগ ও প্রশাসন প্রতিপক্ষের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার বিভিন্ন হল থেকে একাধিক ছাত্রকে ছাত্রলীগ নির্যাতন করে বের করে দিয়েছে বলে জানা যায়। আজ এ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করবে শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন
সংবিধানের ২৯নং অনুচ্ছেদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সবার সমান অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে নিয়োগের যে চিত্র তাতে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনি জন্য ৩০ ভাগ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া নারীদের জন্য ১০ ভাগ, জেলা কোটায় ১০ ভাগ, উপজাতি কোটায় ৫ ভাগ এবং অন্যান্য কোটায় ১ ভাগ মিলিয়ে ৫৬ ভাগ নিয়োগ সংরক্ষিত। কিছু বিশেষ শ্রেণীকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলেও বাকিদের জন্য রয়েছে মাত্র ৪৪ ভাগ। নিয়োগের ক্ষেত্রে এই যখন অবস্থা তখন সোনালী ব্যাংক গত ২৭ আগস্ট থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশেষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এটিকে বৈষম্য, অসাংবিধানিক ও অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থীরা। নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কোটা সংস্কারের দাবি জানান তারা।
তাদের দাবি ৮৫ ভাগ মেধা ও ১৫ ভাগ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ, নাতি-নাতনি কোটা বাতিল করা ও কোটা সংরক্ষণ বিলুপ্ত করা। এসব দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে এ বিষয়ে মতবিনিময় করে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। এরপর সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পাশাপাশি অন্য হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় করেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কবি জসীমউদ্দীন হলে মতবিনিময় করেন শিক্ষার্থীরা। প্রত্যেক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তারা আজ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়। এ আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের। আমরা কেউ কোটার বিরোধী নই। তবে এটা সংস্কার করার মাধ্যমে মেধাবীদের সঠিক স্থানে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
শিক্ষার্থীরা যখন তাদের ন্যায্য দাবির জন্য লড়ছে তখন ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিপক্ষের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জসীমউদ্দীন হলে একাধিক ছাত্রকে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনে ছাত্রলীগ নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। গত কয়েকদিন থেকে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় এরই মধ্যে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বিভিন্ন হলের অন্তত ১০/১৫ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে। এছাড়াও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যে পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়েছিলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা তা তুলে ফেলেছে। এমনকি কিভাবে এ আন্দোলন বানচাল করা যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারা।
জানা যায়, বুধবার রাতে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে সাইফুল নামে প্রথম বর্ষের এক ছাত্র এবং বৃহস্পতিবার রাতে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীকে বের করে দেয় হল শাখা ছাত্রলীগ কর্মীরা। গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলে নির্যাতনের পর তাদের হলে থেকে বের হতে বাধ্য করা হয়। নির্যাতনকারীদের মধ্যে রয়েছে হলের সাবেক নেতা ও বর্তমান হল শাখার পদ প্রার্থী ছাত্রলীগ কর্মীরা।
এছাড়া গতকাল সমাবেশে যোগ দেয়ায় দুই ছাত্রকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আমজাদ আলী। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায় সরকারের সময়ে সর্বশেষ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হয়। এ সময় জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত টানা আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। এবারের এ আন্দোলনও বিগত আন্দোলনের রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates