১৬ এপ্রিল পদত্যাগ
সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ব্যর্থতার দায়ভার কেবল আমারই। তাই আমি পদত্যাগ করছি
৯ এপ্রিল কেলেঙ্কারি
রেলমন্ত্রীর এপিএস, রেলের পূর্বাঞ্চলীয় জিএম ও কমান্ড্যান্ট বিপুল পরিমাণ টাকাসহ বিজিবি সদর দপ্তরে ধরা পড়েন। এ টাকা রেলমন্ত্রীর বাসায় নেওয়া হচ্ছিল অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠে
২৮ নভেম্বর শপথ
৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্বের শপথ নেন গত বছরের ২৮ নভেম্বর। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর রেল খাতে লোকসানের পেছনের কালো বিড়ালকে খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দেন
মধ্যরাতের অর্থ কেলেঙ্কারির সব দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করলেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এর মাধ্যমে তাঁর ১৪১ দিনের সংক্ষিপ্ত মন্ত্রিজীবনের সমাপ্তি হলো। ‘যাত্রাবিরতি’ হলো ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনেরও।
গতকাল সোমবার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে এসে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগের অভিপ্রায় গ্রহণ করি। উনি সাগ্রহে সম্মতি দিয়েছেন। তাই আমি সমস্ত ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।’
প্রবীণ এই রাজনীতিক আরও বলেন, ‘তদন্তের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করে আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসব।’ তাহলে কি আপনি রাজনীতি থেকেও সরে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে যাত্রাবিরতি।’ এরপর আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই তিনি চলে যান।
গত রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে গণভবনে ডেকে নেন। এর পর থেকেই তাঁর পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি পদত্যাগ করতে চাননি। তিনি মন্ত্রী থেকেই লড়তে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ পদত্যাগের পরও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থাকা যায় কি না, তাঁর পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
গতকাল সকাল থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরা রেল ভবনে অপেক্ষা করতে থাকেন। একটি কালো জিপে করে তিনি রেল ভবনে আসেন দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে। তখনো তাঁর গাড়িতে পতাকা উড়ছিল। সংবাদ সম্মেলনকক্ষে আসেন বেলা একটা ১৫ মিনিটে। পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও বাদামি কোট, হাতে কিছু কাগজ। বক্তব্য দেওয়ার সময় কাগজে চোখ রাখছিলেন তিনি।
পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পাশে ছিলেন রেল বিভাগের সচিব ফজলে কবির এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু তাহের। পদত্যাগের পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেল ভবনের ষষ্ঠ তলায় যান। সেখানে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানান তাঁকে। বেলা তিনটার পরপরই গাড়ির পতাকা নামিয়ে রেল ভবন ত্যাগ করেন তিনি।
সকাল থেকেই সুরঞ্জিতের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলের অনেক নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ী রেল ভবনে আসেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা ছিল, সত্যিই কি দাদা পদত্যাগ করবেন! পদত্যাগ করার পর অনেকেই মন খারাপ করেন, কাউকে কাউকে কাঁদতেও দেখা যায়। তাঁদের একজন বলেছেন, ‘দাদা রাজনীতিতে পোড় খাওয়া হলেও প্রশাসন চালাতে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।’
পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘৯ এপ্রিলের অনভিপ্রেত ঘটনা আমাকে হকচকিত করেছে। এ ঘটনায় আমার এপিএস এবং রেলওয়ের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাসহ রেলের আরেকজন কর্মচারী নিয়োজিত ছিলেন। সুতরাং, এ দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের মন্ত্রণালয়ে বর্তায়। আমার স্বল্প সময়ে নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বচ্ছতা, প্রগতিশীলতা আনতে গিয়ে যেভাবে হোঁচট খেয়েছি, এর সকল ব্যর্থতার দায়ভার কেবল আমারই।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরও বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের ৪০ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে গণতন্ত্রের কেবল সুবিধা ভোগই আমরা করেছি। কিন্তু গণতন্ত্রের সংকটে আত্মত্যাগ করতে আসিনি। আজকে এই পরীক্ষার সম্মুখে এসে, জীবনের সায়াহ্নে এসে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ওই ঘটনার সঙ্গে আমার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তার পরও আমি আজ গণতন্ত্রকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করার জন্য একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। আমি আমার জীবনে এ রকম অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কখনো নিঃসঙ্গভাবে নিয়েছি, কখনো আশেপাশে বন্ধুবান্ধবকে পেয়েছি। আজকে নিঃসঙ্গভাবেই আমি এ সিদ্ধান্ত, দায়িত্ব নিতে চাই।’
পদত্যাগের কথা বলতে গিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পেছনে ফিরে যান। বলেন, ‘আমার নিজের বিবেক, রাজনৈতিক চেতনা, অতীতের সকল রাজনীতির ধারাবাহিকতা এবং আমার একটি স্বভাবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য আছে, তার কারণে আমাকে অনেক সুহূদ সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে সুষ্ঠু তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।’
বর্তমান সময়কে সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, ‘আমি একটি দ্বন্দ্বের মুখোমুখি। আমার সামনে কঠিন পথ। প্রচলিত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা—এ রকম সময় সবার রাজনৈতিক জীবনে আসে না। আমি উচ্চকণ্ঠে বলতে চাই, আমি দল, সরকার, আমার দলের প্রধান নেত্রীর দায় হতে চাই না। আমি কারও বোঝা হতে চাই না। আমার যে পদক্ষেপে দল, সরকার ও নেত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, সেটাই করি।’
রেলমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার, রেলের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বিপুল টাকাসহ ধরা পড়েন। সেদিন সারা রাত তাঁদের বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানায় আটকে রেখে পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে গাড়িচালক আজম খানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। টাকার অঙ্ক সম্পর্কেও তিন রকম তথ্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন ৩০ লাখ, কেউ বলছেন ৭০ লাখ আবার কারও মতে, আরও বেশি।
এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী মহল, সুশীল সমাজ এবং দলেরও দু-একজন ছাড়া সবাই তদন্ত প্রভাবমুক্ত হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই মনে করেন, তিনি দায়িত্বে থাকলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। পদত্যাগের মাধ্যমে এই শঙ্কা, সংশয় ও সন্দেহ দূর হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর ৯ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আর কোনো বক্তব্য দেবেন না তিনি। কারণ, এতে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। দ্রুত তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, দ্রুত তদন্ত হলে এ নিয়ে কারও রাজনীতি করার সুযোগ থাকবে না।
ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর পদত্যাগ করার কারণ ব্যাখ্যা করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্যই তিনি সময় নিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। গত রোববার কমিটির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নইলে তাঁরা আদালতে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারতেন।
গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে পদত্যাগী এই মন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে আমার হূদ্যতা ছিল। কখনো নিজেই সংবাদ সৃষ্টি করে সহযোগিতা করেছি। কখনো কখনো নিজেই সংবাদের শিরোনাম হয়েছি। আজ আবারও শিরোনাম হয়ে আপনাদের সহযোগিতা করলাম।’
বিদায়বেলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলের কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেন। বলেন, রেলওয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সৎ ও নিষ্ঠাবান। তাঁরা নিরলস পরিশ্রম করেন। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের জন্য সবার বদনাম করা ঠিক নয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ব্যর্থতার দায়ভার কেবল আমারই। তাই আমি পদত্যাগ করছি
৯ এপ্রিল কেলেঙ্কারি
রেলমন্ত্রীর এপিএস, রেলের পূর্বাঞ্চলীয় জিএম ও কমান্ড্যান্ট বিপুল পরিমাণ টাকাসহ বিজিবি সদর দপ্তরে ধরা পড়েন। এ টাকা রেলমন্ত্রীর বাসায় নেওয়া হচ্ছিল অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠে
২৮ নভেম্বর শপথ
৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্বের শপথ নেন গত বছরের ২৮ নভেম্বর। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর রেল খাতে লোকসানের পেছনের কালো বিড়ালকে খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দেন
মধ্যরাতের অর্থ কেলেঙ্কারির সব দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করলেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এর মাধ্যমে তাঁর ১৪১ দিনের সংক্ষিপ্ত মন্ত্রিজীবনের সমাপ্তি হলো। ‘যাত্রাবিরতি’ হলো ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনেরও।
গতকাল সোমবার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে এসে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগের অভিপ্রায় গ্রহণ করি। উনি সাগ্রহে সম্মতি দিয়েছেন। তাই আমি সমস্ত ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।’
প্রবীণ এই রাজনীতিক আরও বলেন, ‘তদন্তের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করে আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসব।’ তাহলে কি আপনি রাজনীতি থেকেও সরে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে যাত্রাবিরতি।’ এরপর আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই তিনি চলে যান।
গত রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে গণভবনে ডেকে নেন। এর পর থেকেই তাঁর পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি পদত্যাগ করতে চাননি। তিনি মন্ত্রী থেকেই লড়তে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ পদত্যাগের পরও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থাকা যায় কি না, তাঁর পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
গতকাল সকাল থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরা রেল ভবনে অপেক্ষা করতে থাকেন। একটি কালো জিপে করে তিনি রেল ভবনে আসেন দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে। তখনো তাঁর গাড়িতে পতাকা উড়ছিল। সংবাদ সম্মেলনকক্ষে আসেন বেলা একটা ১৫ মিনিটে। পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও বাদামি কোট, হাতে কিছু কাগজ। বক্তব্য দেওয়ার সময় কাগজে চোখ রাখছিলেন তিনি।
পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পাশে ছিলেন রেল বিভাগের সচিব ফজলে কবির এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু তাহের। পদত্যাগের পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেল ভবনের ষষ্ঠ তলায় যান। সেখানে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানান তাঁকে। বেলা তিনটার পরপরই গাড়ির পতাকা নামিয়ে রেল ভবন ত্যাগ করেন তিনি।
সকাল থেকেই সুরঞ্জিতের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলের অনেক নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ী রেল ভবনে আসেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা ছিল, সত্যিই কি দাদা পদত্যাগ করবেন! পদত্যাগ করার পর অনেকেই মন খারাপ করেন, কাউকে কাউকে কাঁদতেও দেখা যায়। তাঁদের একজন বলেছেন, ‘দাদা রাজনীতিতে পোড় খাওয়া হলেও প্রশাসন চালাতে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।’
পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘৯ এপ্রিলের অনভিপ্রেত ঘটনা আমাকে হকচকিত করেছে। এ ঘটনায় আমার এপিএস এবং রেলওয়ের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাসহ রেলের আরেকজন কর্মচারী নিয়োজিত ছিলেন। সুতরাং, এ দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের মন্ত্রণালয়ে বর্তায়। আমার স্বল্প সময়ে নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বচ্ছতা, প্রগতিশীলতা আনতে গিয়ে যেভাবে হোঁচট খেয়েছি, এর সকল ব্যর্থতার দায়ভার কেবল আমারই।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরও বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের ৪০ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে গণতন্ত্রের কেবল সুবিধা ভোগই আমরা করেছি। কিন্তু গণতন্ত্রের সংকটে আত্মত্যাগ করতে আসিনি। আজকে এই পরীক্ষার সম্মুখে এসে, জীবনের সায়াহ্নে এসে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ওই ঘটনার সঙ্গে আমার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তার পরও আমি আজ গণতন্ত্রকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করার জন্য একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। আমি আমার জীবনে এ রকম অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কখনো নিঃসঙ্গভাবে নিয়েছি, কখনো আশেপাশে বন্ধুবান্ধবকে পেয়েছি। আজকে নিঃসঙ্গভাবেই আমি এ সিদ্ধান্ত, দায়িত্ব নিতে চাই।’
পদত্যাগের কথা বলতে গিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পেছনে ফিরে যান। বলেন, ‘আমার নিজের বিবেক, রাজনৈতিক চেতনা, অতীতের সকল রাজনীতির ধারাবাহিকতা এবং আমার একটি স্বভাবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য আছে, তার কারণে আমাকে অনেক সুহূদ সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে সুষ্ঠু তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।’
বর্তমান সময়কে সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, ‘আমি একটি দ্বন্দ্বের মুখোমুখি। আমার সামনে কঠিন পথ। প্রচলিত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা—এ রকম সময় সবার রাজনৈতিক জীবনে আসে না। আমি উচ্চকণ্ঠে বলতে চাই, আমি দল, সরকার, আমার দলের প্রধান নেত্রীর দায় হতে চাই না। আমি কারও বোঝা হতে চাই না। আমার যে পদক্ষেপে দল, সরকার ও নেত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, সেটাই করি।’
রেলমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার, রেলের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বিপুল টাকাসহ ধরা পড়েন। সেদিন সারা রাত তাঁদের বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানায় আটকে রেখে পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে গাড়িচালক আজম খানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। টাকার অঙ্ক সম্পর্কেও তিন রকম তথ্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন ৩০ লাখ, কেউ বলছেন ৭০ লাখ আবার কারও মতে, আরও বেশি।
এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী মহল, সুশীল সমাজ এবং দলেরও দু-একজন ছাড়া সবাই তদন্ত প্রভাবমুক্ত হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই মনে করেন, তিনি দায়িত্বে থাকলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। পদত্যাগের মাধ্যমে এই শঙ্কা, সংশয় ও সন্দেহ দূর হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর ৯ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আর কোনো বক্তব্য দেবেন না তিনি। কারণ, এতে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। দ্রুত তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, দ্রুত তদন্ত হলে এ নিয়ে কারও রাজনীতি করার সুযোগ থাকবে না।
ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর পদত্যাগ করার কারণ ব্যাখ্যা করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্যই তিনি সময় নিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। গত রোববার কমিটির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নইলে তাঁরা আদালতে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারতেন।
গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে পদত্যাগী এই মন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে আমার হূদ্যতা ছিল। কখনো নিজেই সংবাদ সৃষ্টি করে সহযোগিতা করেছি। কখনো কখনো নিজেই সংবাদের শিরোনাম হয়েছি। আজ আবারও শিরোনাম হয়ে আপনাদের সহযোগিতা করলাম।’
বিদায়বেলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলের কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেন। বলেন, রেলওয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সৎ ও নিষ্ঠাবান। তাঁরা নিরলস পরিশ্রম করেন। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের জন্য সবার বদনাম করা ঠিক নয়।