0 অশালীন ভাষা যেন সংসদ বর্জনের অস্ত্র না হয়

দীর্ঘ এক বছর পর বিরোধী দলের সংসদে ফিরে যাওয়াটা ইতিবাচক। কিন্তু সংসদে অশালীন ভাষা ব্যবহার, প্রতিপক্ষ সাংসদের ওপর হামলার চেষ্টা—এসব কোনোভাবেই ইতিবাচক লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন দেশের রাজনীতিক ও বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, সরকার ও বিরোধী দল দীর্ঘদিন সংসদে একসঙ্গে কাজ করলে দুই দলের মধ্যে সহনশীলতা তৈরি হবে। কিন্তু দুই পক্ষের এ অশালীন ব্যবহার কোনোভাবেই যেন সংসদ বর্জনের অস্ত্র না হয়। তাহলে এ অবস্থার উত্তরণ কখনোই হবে না।
প্রায় এক বছর পর গতকাল রোববার সংসদে উপস্থিত হয় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। যোগ দিয়েই ওই একজন নারী সাংসদের অশালীন ভাষায় বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধীদলীয় নারী সাংসদদের হাতাহাতির উপক্রম হয়।
সাংসদের এ ধরনের আচরণ সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য কতটুকু ইতিবাচক—এ জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, সংসদে গিয়ে অশালীন মন্তব্য করা, অন্য সাংসদের ওপর হামলার চেষ্টা করা, এসব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি মনে করেন, বিরোধী দল যদি নিয়মিত সংসদে আসে এবং সংসদে সরকার ও বিরোধী দল একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করে—তাহলে এ অবস্থা থাকবে না। দুই দলের মধ্যেই আস্তে আস্তে সহনশীলতা তৈরি হবে। কিন্তু শুধু অজুহাত তৈরি করে যদি বিরোধী দল সংসদ বর্জন করে, তাহলে এ চিত্র একই থাকবে। কোনো পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, সব দেশের সংসদেই তর্ক-বিতর্ক, উত্তেজনা আছে। সেটি থাকবে।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ হলো সহনশীলতা। সংসদ হচ্ছে এর কেন্দ্রবিন্দু। সংসদের একটি রুলস অব প্রসিডিউর আছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সেটি অনেকে মানেন না। এমন বক্তব্য দেন, যা রুলসের ধারে-কাছেও যায় না।’ তিনি এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিরোধী দল সংসদে ফিরে এসেছে, এটি ভালো লক্ষণ। কিন্তু সংসদে তাদের বক্তব্য হতে হবে গঠনমূলক।
আকবর আলি খানের মতো তোফায়েল আহমেদও মনে করেন, বিরোধী দল নিয়মিত সংসদে এলে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। কিন্তু গালাগালি করা যদি লক্ষ্যই হয় সংসদ বর্জনের, তাহলে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ এম কে আনোয়ার বলেন, সংসদে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা, অশালীন আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি, সতীর্থ সাংসদদের দিকে তেড়ে যাওয়া—এসব বিষয় সংসদীয় ও সুস্থ রাজনীতির জন্য শোভন নয়। এ জন্য বয়সে নবীন সাংসদেরা দায়ী নন। জ্যেষ্ঠদের কাছ থেকেই নবীনেরা অসংসদীয় বিষয়গুলো রপ্ত করেছেন।
এম কে আনোয়ার বলেন, বিএনপি সংসদের যোগ দেওয়ার আগে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদেরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে যেসব কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতিক্রিয়া বা প্রতিবাদে বিএনপি সাংসদ গতকাল অসংসদীয় ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। স্পিকার আবার তা এক্সপাঞ্জও করেছেন। এর আগে সরকারি দলের সাংসদেরা যদি অশালীন ভাষায় বক্তব্য না দিতেন, তবে বিএনপি সাংসদেরাও দিতেন না বলে তিনি মনে করেন।
এম কে আনোয়ার আরও বলেন, একজন সাংসদ অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়ে দেওয়ার পর তা এক্সপাঞ্জ করে বিশেষ কোনো লাভ হয় না। কারণ, ততক্ষণে তা জাতি জেনে যায়। এতে সংসদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। বরং কেউ অশালীন ভাষায় বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে স্পিকারের উচিত সঙ্গে সঙ্গে মাইক বন্ধ করে দেওয়া। এতে কিছুটা হলেও সংসদের সম্মান রক্ষা হবে এবং সাংসদেরাও সতর্ক হবেন। অন্যথায় অশালীন বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে কিছু সাংসদ উত্সাহ বোধ করবেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিরোধী দলের চাল-চলন অসংসদীয় হলেও তাদের সংসদে প্রবেশ ইতিবাচক। সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক। তিনি বলেন, ‘আমি বিরোধী দলের আচরণ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নই। ধারাবাহিকভাবে তারা সংসদে আসলে একসময় এটি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি সংসদকে অকার্যকর করবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংসদে সরকার-বিরোধী দলের এ ধরনের আচরণ কখনোই ইতিবাচক নয়। যাঁরা সাংসদ তাঁরা অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। সাংসদদের চারটি কাজ আইন প্রণয়ন, বিতর্ক, সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত ও বাজেট অনুমোদন করা। কিন্তু এখন তাঁরা যা করছেন তা শুধু নেতা-নেত্রীর বন্দনা এবং অত্যন্ত অশালীন ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ। বিরোধী দল এসে অশালীন ভাষা ব্যবহার করে। আবার বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সরকার দল বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে অশালীন কথা বলে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মধ্য দিয়ে সাংসদেরা সংসদের এবং নিজেদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছেন।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates