বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের মূল্যায়ন : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন শক্তি বাংলাদেশ
মাসুদ আনোয়ার

এশিয়া কাপ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। আর মাত্র তিনটি রান হলেই এশিয়া
কাপের রেকর্ড বুকে তাদের নামও খোদাই হয়ে যেত সোনার অক্ষরে—যে কাপটির জন্য
পরস্পরের টুঁটি টিপে ধরতে চেয়েছে এশিয়া তথা বিশ্ব ক্রিকেটের তিন চ্যাম্পিয়ন
ও উদীয়মান বিশ্ব শক্তি বাংলাদেশ। আর বিশ্বসেরাদের সঙ্গে তরুণ বাংলাদেশ
কিন্তু টেক্কা দিয়েছে সমানে সমান। দুটিকে করেছে কুপোকাত। পাকিস্তান অল্পের
জন্য পেল রক্ষা। শেষ পর্যন্ত কোনোমতে কাপটা নিজেদের পকেটে ঢোকাতে পেরেছে
মিসবাহ বাহিনী। বৃহস্পতিবার মিরপুরে খেলার শেষমুহূর্ত পর্যন্ত জয়ের নেশায়
বিভোর ছিল বাংলাদেশ। আর হারের আশঙ্কায় দুলেছে মিসবাহদের হৃিপণ্ড।
এশিয়া কাপ ট্রফি তারা আগেও জিতেছে, কিন্তু এতটা বেগ পেয়েছে কি কখনও? সেটা পাকিস্তানি প্রধান নির্বাচক ইকবাল কাশিমের কথা থেকেই বোঝা গেছে। কাশিম বলেছেন, ‘পাকিস্তান জিতবে, এটাই আশা ছিল। কিন্তু সেটা যে এত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, তা বুঝিনি।’
কতটা কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে যে বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানিদের সামনে সেটা খোদ পাকিস্তানি সাবেক গ্রেটরাই অকপটে স্বীকার করেছেন। পাকিস্তান তথা ক্রিকেটের বড়েমিয়া খ্যাত জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেছেন, ‘পাকিস্তান কাপ জিতেছে, কিন্তু বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কতটা যুদ্ধংদেহী ও আত্মবিশ্বাসী। তারা হেরেছে, কিন্তু এই হারকে সম্মান না করে উপায় নেই। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নতুন শক্তি।’
সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ বলেছেন, ‘পাকিস্তানের জয়টা অপ্রত্যাশিত নয়, কিন্তু চমকে দেয়ার মতো খবর হলো বাংলাদেশের ফাইনাল খেলা এবং খেলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয়ের আশা জিইয়ে রাখা। মাত্র দুই রানে হেরেছে ওরা। এখান থেকে বোঝা যায়, কতটা এগিয়েছে ওরা। ’
দম ফেলে বেঁচেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকা আশরাফ। বলেছেন, ‘পাকিস্তান জিতেছে ঠিক আছে কিন্তু বাংলাদেশ যেন যোগ্যতর দল হিসেবেই খেলল।’
শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতীয় ক্রিকেটারদের মুখেও শোনা গেছে বাংলাদেশের প্রশংসা। যে বীরেন্দর শেবাগ বাংলাদেশকে এই সেদিনও পাত্তা দেননি, তিনি পর্যন্ত এখন স্বীকার করছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। বাংলাদেশের দুর্দান্ত সাফল্য সম্পর্কে শেবাগ বলেন, ‘আমরা মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছি। বাংলাদেশের কাছে ওই হারের চরম মূল্যও দিতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু এটা ঠিক, বাংলাদেশ দারুণ ফর্মে আছে এবং এই মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতাও তাদের আছে।’
‘বি অ্যাওয়ার ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ ইজ দ্য নিউ টেরর!’
ব্রায়ান চার্লস লারা ক্রিকেট বিশ্বকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, সাবধান! বাংলাদেশ আসছে! এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের পর ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা তার ফেসবুক ফ্যান পেজে লিখেছেন, ‘দর্শক ও খেলোয়াড়দের কাঁদতে দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। বাংলাদেশ হেরেছে, কিন্তু জয় করেছে লাখ লাখ মানুষের হৃদয়। বস্তুত তারা কাপ ছাড়া সবই জিতেছে। পৃথিবী সাবধান, নতুন আতঙ্কের নাম বাংলাদেশ!’
লারার এই মন্তব্য পছন্দ করেছেন তার প্রায় পাঁচ হাজার ভক্ত। মন্তব্য করেছেন প্রায় পাঁচশ’ জন। লারার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে এই ফ্যান পেজে মন্তব্য দেখা যায় এবং প্রবেশ করা যায়।
সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিয়ান শচীন টেন্ডুলকার বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের ম্যাচের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশকে খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই। তারা সত্যিই ভালো খেলছে আর পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে দুর্দান্ত লড়াইটা তার চোখেও দুর্দান্ত হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশকে ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে মেনে নিতে হবে মনে করেন।
মিডিয়া সয়লাব প্রশংসায়
এশিয়া কাপ না জিতেও প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। অদম্য লড়াকু পারফরম্যান্স দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছে গোটা দুনিয়ার। বিশ্বের সবগুলো মিডিয়াই মেতেছে বাংলাদেশের প্রশংসায়। বেশিরভাগ পত্র-পত্রিকাতেই পাকিস্তানের ট্রফি নেয়া কিংবা উল্লাসের ছবি না দিয়ে ছেপেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ছবি ।
ভারতকে হারানোর পর বাংলাদেশের জয়কে অঘটনই বলেছিল ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে ফাইনালের পরই তাদের সুর পুরোপুরি পাল্টে যায়। তাতে ছিল সহানুভূতি ও সমীহের সুর। ফাইনালের নিউজের হেডিংটাই ধরুন না। তারা লিখেছে : শেষ ওভারে হৃদয় ভেঙেছে বাংলাদেশের। তারপর লিখেছে : আসলেই এটি ছিল বাংলাদেশী ছেলেদের নায়কোচিত নৈপুণ্যের একটি টুর্নামেন্ট। শেষ পর্যন্ত ট্রফি না পেলেও খেলেছে টাইগারের মতোই।
বিবিসির সাংবাদিক ইথিরাজন লিখেছেন, ‘সারাবিশ্বে এই বার্তা পৌঁছে গেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন আর ছোট দল নয়। নতুন শক্তি হিসেবে তাদের আবির্ভাব হয়েছে এবং বাংলাদেশকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দেখাতেই হবে।’
ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো বাংলাদেশের প্রশংসা করে লিখেছে, ‘সব শেষে আতশবাজি পোড়ানো হলো। তবে সেটা পাকিস্তানের জয়ের সঙ্গে খুব একটা মানায়নি বরং বাংলাদেশের সাহসী পারফরম্যান্স এবং দুর্দান্ত দর্শকের জন্যই ওই আতশবাজি।’
স্কাই স্পোর্টস বড় করে লিখেছে, পাকিস্তান এশিয়া কাপ জিতেছে। তার নিচেই প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের।
ভারতের জি নিউজ বড় করে লিখেছে, পাকিস্তান জিতেছে এশিয়া কাপ, বাংলাদেশ জিতেছে হৃদয়। শুধু তা-ই নয়, এক জায়গায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ইয়ংস্টার লিখে সেটি কেটে দিয়ে লেখা হয়েছে প্রতিভাবান ক্রিকেটার।
পাকিস্তানের সব পত্রিকায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। শিরোপা জিতে যতটা বাহবা পাচ্ছে পাকিস্তান, পুরো বিশ্বের হৃদয় জিতে তার চেয়েও বেশি প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমালোচনায় মুখর ছিল যেসব মিডিয়া, আজ তারাই মেতেছে প্রশংসায়।
পাকিস্তানের জিও নিউজ বলছে, কাপ তো লে লিয়া পাকিস্তান, মাগার দিল ভি জিত লিয়া বাংলাদেশ।...
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ হেরে গিয়েও যে হারেনি, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং আন্তর্জাতিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের ব্লগ ও পাঠকের প্রতিক্রিয়ায়।
কাপজয়ী পাকিস্তানসহ ক্রিকেটপ্রেমী সব দেশের মানুষই বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। প্রশংসা করছেন সাংবাদিক, কলামিস্ট, ক্রিকেটার ও ব্লগাররা। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দুটি বিষয়ে প্রশংসা করছেন, তা হলো—ভালো খেলা আর দেশপ্রেম। তাদের যুক্তি হচ্ছে, দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে হেরে গিয়ে খেলোয়াড়রা এভাবে কাঁদতে পারেন না।
বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসায় পাকিস্তান : এশিয়া কাপের চরম উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে হেরে গেলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাজের মুস্তাফা বলেন, ‘আমি চাইছিলাম ফাইনাল যেন হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো প্রকৃত প্রতিপক্ষের খেলাটাই খেলেছে।’ এপি এ খবর দিয়েছে। তবে লড়াইয়ে ভারত না থাকলেও পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা শুক্রবার বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেন। তবে যখন শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ৯ রান, তখন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। চীমা যখন শেষ বলটি করেন তখন নীরবতা ভেঙে উল্লাসে মেতে ওঠেন পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা। তারা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস করেন। করাচিতে বান্ধবীদের নিয়ে বড় পর্দায় খেলা দেখতে আসা সনিয়া আব্বাসী বলেন, ‘শেষ ওভার পর্যন্ত আমরা ভেবেছিলাম যে, বাংলাদেশ জয়ী হতে পারে। তবে আল্লাহর শুকরিয়া, পাকিস্তান জিতেছে।’ ১২ বছর আগে পাকিস্তান এশিয়া কাপ জয়ী হয়। ওই বছরই বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে। এবারের আগে বাংলাদেশ কখনও এশিয়া কাপের ফাইনালে যেতে পারেনি।
কম্পিউটার অপারেটর নাসির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ গতকাল জেতার মতো খেলেছে। তারা সত্যিই খুব ভালো খেলেছে। শুধু ফাইনালেই নয়, তারা ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও খুব ভালো খেলেছে।’গাড়ি চালক সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের কাছে ছোট ভাইয়ের মতো। পুরো টুর্নামেন্টে তারা ভালো খেলেছে। গতকাল পাকিস্তান হেরে গেলেও আমি অবাক হতাম না।’
এশিয়া কাপ ট্রফি তারা আগেও জিতেছে, কিন্তু এতটা বেগ পেয়েছে কি কখনও? সেটা পাকিস্তানি প্রধান নির্বাচক ইকবাল কাশিমের কথা থেকেই বোঝা গেছে। কাশিম বলেছেন, ‘পাকিস্তান জিতবে, এটাই আশা ছিল। কিন্তু সেটা যে এত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, তা বুঝিনি।’
কতটা কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে যে বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানিদের সামনে সেটা খোদ পাকিস্তানি সাবেক গ্রেটরাই অকপটে স্বীকার করেছেন। পাকিস্তান তথা ক্রিকেটের বড়েমিয়া খ্যাত জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেছেন, ‘পাকিস্তান কাপ জিতেছে, কিন্তু বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কতটা যুদ্ধংদেহী ও আত্মবিশ্বাসী। তারা হেরেছে, কিন্তু এই হারকে সম্মান না করে উপায় নেই। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নতুন শক্তি।’
সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ বলেছেন, ‘পাকিস্তানের জয়টা অপ্রত্যাশিত নয়, কিন্তু চমকে দেয়ার মতো খবর হলো বাংলাদেশের ফাইনাল খেলা এবং খেলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয়ের আশা জিইয়ে রাখা। মাত্র দুই রানে হেরেছে ওরা। এখান থেকে বোঝা যায়, কতটা এগিয়েছে ওরা। ’
দম ফেলে বেঁচেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকা আশরাফ। বলেছেন, ‘পাকিস্তান জিতেছে ঠিক আছে কিন্তু বাংলাদেশ যেন যোগ্যতর দল হিসেবেই খেলল।’
শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতীয় ক্রিকেটারদের মুখেও শোনা গেছে বাংলাদেশের প্রশংসা। যে বীরেন্দর শেবাগ বাংলাদেশকে এই সেদিনও পাত্তা দেননি, তিনি পর্যন্ত এখন স্বীকার করছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। বাংলাদেশের দুর্দান্ত সাফল্য সম্পর্কে শেবাগ বলেন, ‘আমরা মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছি। বাংলাদেশের কাছে ওই হারের চরম মূল্যও দিতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু এটা ঠিক, বাংলাদেশ দারুণ ফর্মে আছে এবং এই মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতাও তাদের আছে।’
‘বি অ্যাওয়ার ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ ইজ দ্য নিউ টেরর!’
ব্রায়ান চার্লস লারা ক্রিকেট বিশ্বকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, সাবধান! বাংলাদেশ আসছে! এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের পর ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা তার ফেসবুক ফ্যান পেজে লিখেছেন, ‘দর্শক ও খেলোয়াড়দের কাঁদতে দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। বাংলাদেশ হেরেছে, কিন্তু জয় করেছে লাখ লাখ মানুষের হৃদয়। বস্তুত তারা কাপ ছাড়া সবই জিতেছে। পৃথিবী সাবধান, নতুন আতঙ্কের নাম বাংলাদেশ!’
লারার এই মন্তব্য পছন্দ করেছেন তার প্রায় পাঁচ হাজার ভক্ত। মন্তব্য করেছেন প্রায় পাঁচশ’ জন। লারার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে এই ফ্যান পেজে মন্তব্য দেখা যায় এবং প্রবেশ করা যায়।
সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিয়ান শচীন টেন্ডুলকার বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের ম্যাচের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশকে খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই। তারা সত্যিই ভালো খেলছে আর পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে দুর্দান্ত লড়াইটা তার চোখেও দুর্দান্ত হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশকে ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে মেনে নিতে হবে মনে করেন।
মিডিয়া সয়লাব প্রশংসায়
এশিয়া কাপ না জিতেও প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। অদম্য লড়াকু পারফরম্যান্স দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছে গোটা দুনিয়ার। বিশ্বের সবগুলো মিডিয়াই মেতেছে বাংলাদেশের প্রশংসায়। বেশিরভাগ পত্র-পত্রিকাতেই পাকিস্তানের ট্রফি নেয়া কিংবা উল্লাসের ছবি না দিয়ে ছেপেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ছবি ।
ভারতকে হারানোর পর বাংলাদেশের জয়কে অঘটনই বলেছিল ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে ফাইনালের পরই তাদের সুর পুরোপুরি পাল্টে যায়। তাতে ছিল সহানুভূতি ও সমীহের সুর। ফাইনালের নিউজের হেডিংটাই ধরুন না। তারা লিখেছে : শেষ ওভারে হৃদয় ভেঙেছে বাংলাদেশের। তারপর লিখেছে : আসলেই এটি ছিল বাংলাদেশী ছেলেদের নায়কোচিত নৈপুণ্যের একটি টুর্নামেন্ট। শেষ পর্যন্ত ট্রফি না পেলেও খেলেছে টাইগারের মতোই।
বিবিসির সাংবাদিক ইথিরাজন লিখেছেন, ‘সারাবিশ্বে এই বার্তা পৌঁছে গেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন আর ছোট দল নয়। নতুন শক্তি হিসেবে তাদের আবির্ভাব হয়েছে এবং বাংলাদেশকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দেখাতেই হবে।’
ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো বাংলাদেশের প্রশংসা করে লিখেছে, ‘সব শেষে আতশবাজি পোড়ানো হলো। তবে সেটা পাকিস্তানের জয়ের সঙ্গে খুব একটা মানায়নি বরং বাংলাদেশের সাহসী পারফরম্যান্স এবং দুর্দান্ত দর্শকের জন্যই ওই আতশবাজি।’
স্কাই স্পোর্টস বড় করে লিখেছে, পাকিস্তান এশিয়া কাপ জিতেছে। তার নিচেই প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের।
ভারতের জি নিউজ বড় করে লিখেছে, পাকিস্তান জিতেছে এশিয়া কাপ, বাংলাদেশ জিতেছে হৃদয়। শুধু তা-ই নয়, এক জায়গায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ইয়ংস্টার লিখে সেটি কেটে দিয়ে লেখা হয়েছে প্রতিভাবান ক্রিকেটার।
পাকিস্তানের সব পত্রিকায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। শিরোপা জিতে যতটা বাহবা পাচ্ছে পাকিস্তান, পুরো বিশ্বের হৃদয় জিতে তার চেয়েও বেশি প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমালোচনায় মুখর ছিল যেসব মিডিয়া, আজ তারাই মেতেছে প্রশংসায়।
পাকিস্তানের জিও নিউজ বলছে, কাপ তো লে লিয়া পাকিস্তান, মাগার দিল ভি জিত লিয়া বাংলাদেশ।...
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ হেরে গিয়েও যে হারেনি, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং আন্তর্জাতিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের ব্লগ ও পাঠকের প্রতিক্রিয়ায়।
কাপজয়ী পাকিস্তানসহ ক্রিকেটপ্রেমী সব দেশের মানুষই বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। প্রশংসা করছেন সাংবাদিক, কলামিস্ট, ক্রিকেটার ও ব্লগাররা। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দুটি বিষয়ে প্রশংসা করছেন, তা হলো—ভালো খেলা আর দেশপ্রেম। তাদের যুক্তি হচ্ছে, দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে হেরে গিয়ে খেলোয়াড়রা এভাবে কাঁদতে পারেন না।
বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসায় পাকিস্তান : এশিয়া কাপের চরম উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে হেরে গেলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাজের মুস্তাফা বলেন, ‘আমি চাইছিলাম ফাইনাল যেন হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো প্রকৃত প্রতিপক্ষের খেলাটাই খেলেছে।’ এপি এ খবর দিয়েছে। তবে লড়াইয়ে ভারত না থাকলেও পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা শুক্রবার বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেন। তবে যখন শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ৯ রান, তখন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। চীমা যখন শেষ বলটি করেন তখন নীরবতা ভেঙে উল্লাসে মেতে ওঠেন পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা। তারা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস করেন। করাচিতে বান্ধবীদের নিয়ে বড় পর্দায় খেলা দেখতে আসা সনিয়া আব্বাসী বলেন, ‘শেষ ওভার পর্যন্ত আমরা ভেবেছিলাম যে, বাংলাদেশ জয়ী হতে পারে। তবে আল্লাহর শুকরিয়া, পাকিস্তান জিতেছে।’ ১২ বছর আগে পাকিস্তান এশিয়া কাপ জয়ী হয়। ওই বছরই বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে। এবারের আগে বাংলাদেশ কখনও এশিয়া কাপের ফাইনালে যেতে পারেনি।
কম্পিউটার অপারেটর নাসির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ গতকাল জেতার মতো খেলেছে। তারা সত্যিই খুব ভালো খেলেছে। শুধু ফাইনালেই নয়, তারা ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও খুব ভালো খেলেছে।’গাড়ি চালক সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের কাছে ছোট ভাইয়ের মতো। পুরো টুর্নামেন্টে তারা ভালো খেলেছে। গতকাল পাকিস্তান হেরে গেলেও আমি অবাক হতাম না।’