0 তিস্তা জাতীয় পার্টির নয়, জাতীয় সমস্যা


জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, ‘আমি নয় বছর রাষ্ট্রপতি ছিলাম। সে সময় দেশের কী উন্নয়ন করেছি, আপনারা তা জানেন। এখন কী পাচ্ছেন আপনারা, তা বলতে চাই না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামীতে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। এ জন্য ইতিমধ্যে আমরা ২০০ প্রার্থী ঠিক করেছি। আপনারা আর একটা বার আমাকে সুযোগ দিন।’
দুই দিনব্যাপী ঢাকা থেকে তিস্তা অভিমুখে জাতীয় পার্টির লংমার্চের প্রথম দিনে আজ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার পথে বগুড়ার সাতমাথায় বিকেলে এক পথসভায় এরশাদ এসব কথা বলেন। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এরশাদের নেতৃত্বে এই লংমার্চ করেছে জাতীয় পার্টি।
এরশাদ তাঁর সময়ে যমুনা সেতু, যমুনা সেতু থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত মহাসড়ক, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার শাসনামলে তিস্তা প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। আমি আশা করেছিলাম, এই প্রকল্পের ফলে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর নয়, পুরো উত্তরবঙ্গের মানুষ ফসল ফলাতে পারবে। কিন্তু এখন তিস্তায় পানি নেই। আজও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ১০ লাখ হেক্টর জমি সেচসুবিধা পাবে।’ তিনি বলেন, ‘তিস্তা জাতীয় পার্টির সমস্যা নয়, এই সমস্যা জাতীয় সমস্যা। তাই আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সমস্যার সমাধান করি।’
এরশাদ বলেন, ‘জেলে থাকার সময়ে প্রথমবার ভোট করে আমি ১২ ভাগ ভোট পেয়েছিলাম, দ্বিতীয়বার পেয়েছিলাম ১৮ ভাগ। এখন আমি মুক্ত মানুষ। তাই আপনাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যদি আমার সময়ে ভালো কাজ করে থাকি, তাহলে আর একবার আমাকে সুযোগ দিন।’ পরে তিনি বগুড়ার মহাস্থান ও মোকামতলায় পৃথক দুটি পথসভায় বক্তব্য দিয়ে রংপুরের উদ্দেশে বগুড়া ত্যাগ করেন।
এর আগে বগুড়ার শেরপুরের বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এক পথসভায় এরশাদ বলেন, দেশে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ বেড়েছে, বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। দেশ এখন পেছন দিকে যাচ্ছে, সামনের দিকে নয়। মানুষের মধ্যে শান্তি নেই। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না।
এরশাদ বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই। এলসি পর্যন্ত খোলা যাচ্ছে না। দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। জাতীয় পার্টি ছাড়া এখন কোনো পথ নেই। ভবিষ্যতে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
এরশাদ আরও বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতা থেকে চলে আসার পর দেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। তাঁর সরকারের সময় দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। এখন দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।
এর আগে এরশাদ বলেছেন, গত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের আমলে মানুষ কিছু পায়নি। এই দুই সরকার দেশকে কিছুই দিতে পারেনি—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দুই সরকার দেখেছেন। কিছু পেয়েছেন কি না, বুকে হাত দিয়ে প্রশ্ন করুন উত্তর পাবেন, না।’
আজ বিকেল সোয়া তিনটার দিকে সিরাজগঞ্জের এরিস্টোক্র্যাট হোটেল প্রাঙ্গণে এক পথসভায় এরশাদ এসব কথা বলেন।
সিরাজগঞ্জে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। ব্যাংকে টাকা নেই। এলসি খোলা যাচ্ছে না।
এরশাদ বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। একমাত্র জাতীয় পার্টি দেশকে বাঁচাতে পারবে। পথসভায় তিনি ভবিষ্যতে একক নির্বাচন করার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন।
আজ সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে লংমার্চ শুরু হয়। লংমার্চ শুরুর আগে এরশাদ বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষ পানির জন্য এখন হাহাকার করছে। ওই এলাকা মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশের জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তিনি পরিবর্তনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। এরশাদ প্রশ্ন রেখে বলেন, এত বছরেও তিস্তা চুক্তি হয়নি—এ ব্যর্থতা কার?
এরপর আশুলিয়ায় প্রথম পথসভায় এরশাদ বলেন, ‘মানুষ পাঁচ বছর ধরে অশান্তির আগুনে জ্বলছে। মানুষ বাঁচতে চায়, শান্তি চায়, উন্নয়ন চায়। এসব দিতে পারে জাতীয় পার্টি। আমাকে আরেকবার সুযোগ দিন, দেশে পরিবর্তন আসবে।’
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মির্জাপুর বাজারে আরেক পথসভায় এরশাদ বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের নেতারা একে অন্যের সঙ্গে বসতে পারেন না। তাই এই দায়িত্ব জাতীয় পার্টি নিয়েছে।’ মির্জাপুরে এরশাদ আরও বলেন, তাঁর দল আবার ক্ষমতায় আসলে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। তিনি বলেন, শান্তিতে ঘুমাতে হলে জাতীয় পার্টির বিকল্প নেই।
মির্জাপুর বাজারে পথসভায় এরশাদ জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল ইসলামকে দলের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
পরে এরশাদের সঙ্গে থাকা লংমার্চের গাড়িবহর বেলা দুটার দিকে কালিহাতীর এলেঙ্গায় এসে পৌঁছায়। এখানে তিনি বলেন, ‘আমাকে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দেন। ক্ষমতায় যেতে পরলে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গঠন করব।’
কাল বুধবার তিস্তা ব্যারেজের কাছে হেলিপ্যাড ময়দানে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে লংমার্চ।
যাত্রাপথে আশুলিয়া, বিকেএসপি, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও এলেঙ্গা, সিরাজগঞ্জের এরিস্টোক্র্যাট হোটেল প্রাঙ্গণ, বগুড়ার শেরপুর, মাঝিড়া, মহাস্থানগড় ও মোকামতলা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী এবং রংপুরের পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার জানানো হয়।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates