0 অবরোধে অচল দেশ, কাল হরতাল : পুলিশের গুলি টিয়ারের ছত্রছায়ায় ছাত্র-যুবলীগের তাণ্ডব

বিরোধী জোটের ডাকে সর্বাত্মক অবরোধে গতকাল সারাদেশ ছিল অচল। রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশের যানবাহনশূন্য রাজপথ ছিল সংঘাত, সংঘর্ষ আর মিছিল-পিকেটিংয়ে উত্তাল। সহিংস ঘটনায় বহু এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। এতে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৩ জন। বিরোধী দল দাবী করেছে নিহতের সংখ্যা ৪। অবরোধ ঠেকাতে পুলিশের ছত্রছায়ায় মারমুখী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা নৃশংসভাবে হত্যা করে দুজনকে। এর মধ্যে পুরান ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় বিরোধীদলীয় কর্মী সন্দেহে বিশ্বজিত দাস নামে এক দোকান কর্মীকে ধারাল কিরিচ ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে উন্মত্ত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। সিরাজগঞ্জে এক জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। আরেকজন নিহত হয় রাজধানীর এয়ারপোর্টের সামনে গাড়িচাপায়। সহিংস ঘটনায় সারাদেশে আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় সমান সংখ্যক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে। কেবল ঢাকায়ই গ্রেফতার করা হয়েছে ১৬২ জনকে। পিকেটারদের হামলায় শতাধিক গাড়ি ভাংচুর হয় এবং কমপক্ষে ২০টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে ।
এদিকে অবরোধ কর্মসূচিতে সরকারের বাধা, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, গুলি ও শাসকদলের ক্যাডারদের হামলায় ৪ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দলীয় জোট। গত রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে এ হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া আজ সারাদেশে বিক্ষোভ ও সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
বর্তমান সরকারের সময়ে বিরোধী জোটের আহ্বানে সবচেয়ে ঘটনাবহুল কর্মসূচি ছিল গতকালের অবরোধ। সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ দেশে জনজীবন হয়ে পড়ে স্থবির। অবরোধ চলাকালে ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলি, রাবার বুলেট, বোমাবাজি, যানবাহনে আগুন, ভাংচুরসহ সহিংস ঘটনা ঘটে। ঢাকার আমিনবাজার এলাকায় বিএনপির মিছিলে সরকার দলীয় ক্যাডারদের কয়েকশ’ রাউন্ড গুলিবর্ষণে ওই এলাকা রীতিমত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুলিতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম গুরুতর আহন হন। এখানে বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল কবির পল আহত হয়। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় গত চার বছরে গতকালই বড় কোনো রাজপথের কর্মসূচিতে আন্দোলনমুখর ছিল।
আগামীকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল : অবরোধে হত্যা, নির্যাতন ও জুলুমের প্রতিবাদে আগামীকাল সারাদেশে হরতাল ডেকেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একই দাবিতে আজ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচিও দিয়েছে তারা।
গতকাল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেয়া এ সিদ্ধান্তের কথা জানান দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আট ঘণ্টার সংঘাতময় রাজপথ অবরোধের পর পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, বেগম সারোয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা।
শাহজাহানপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে, পুরনো ঢাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, যাত্রাবাড়িতে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমিনবাজারে যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মহাখালীতে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে জমায়েত করে অবরোধ পালন করা হয়। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মীরাও ঢাকার বিভিন্ন স্পটে অবরোধ সৃষ্টি করে। বিজয়নগর এলাকায় জামায়াত শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। টঙ্গী-গাজীপুরে বাসে আগুন ও মহাসড়কে ব্যারিকেডের মধ্য দিয়ে অবরোধ পালিত হয়। টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
কর্মসূচি পালনে চার বছরে প্রথম আন্দোলনমুখর নয়াপল্টন : আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় চার বছরের শাসনে কর্মসূচি পালনে গতকালই প্রথম নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা ছিল আন্দোলনমুখর। আট ঘণ্টার অবরোধে পাঁচ ঘণ্টা ওই এলাকায় কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারেনি। কয়েকশ’ পুলিশ-র্যাব সদস্যের সামনে সড়ক অবরোধ করে ১৮ দলীয় জোটের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। ওই এলাকায় পুলিশের আচরণ ছিল নমনীয়।
কাকডাকা ভোরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হয়। ৬টার দিকে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা কার্যালয়ে অবস্থান নেন। ধীরে ধীরে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
সকাল ৯টা ৮ মিনিটে ছাত্রদলের কয়েকজন নারী কর্মী হঠাত্ নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে বসে পড়েন এবং অবরোধের পক্ষে স্লোগান দেয়। এতে যোগ দেয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রশিবির কর্মীরা। ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিক থেকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার ও বিএনপি নেতা ননী তালুকদারের নেতৃত্বে শাহবাগ থানা বিএনপির একটি মিছিল আসে। শতাধিক নেতাকর্মীর মিছিলটি কয়েকবার প্রদক্ষিণ শেষে নয়াপল্টন কার্যালয়ের বিপরীত পাশের সড়কে বসে পড়ে। এরপর ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী মিছিল বের করে। পরে যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক নেওয়াজ আলী ও মাহবুবুল হাসানের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এবং পল্টন থানা বিএনপির পৃথক একটি মিছিল কয়েকবার ওই এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
এরপর জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী ওই এলাকা ঘুরে ঘুরে মিছিল করে।
ধীরে ধীরে নয়াপল্টন এলাকায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়। স্লোগান ও বিক্ষোভের আওয়াজ বাড়তে থাকে। ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলও শাহবাগ এলাকা থেকে এসে নয়াপল্টনে ছাত্রদল কর্মীদের নিয়ে অবরোধে যোগ দেন। আওয়ামী লীগ ও পুলিশি হামলায় চারজন নিহত হওয়ার খবর জেনে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। দেড়টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর একটি মিছিল আসে নয়াপল্টনে। তখন পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। বেগম খালেদা জিয়া আহূত অবরোধকে সফল করায় তিনি নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ এবং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পরে সংবাদ সম্মেলনে দেশব্যাপী অবরোধের চিত্র তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। এরপরও বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি কার্যালয়ের বিপরীত পাশের গলিতে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
শাহজাহানপুরে গণজমায়েতে সড়ক অবরোধ : গণজমায়েতের মাধ্যমে ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত শাহজাহানপুরে সড়ক অবরোধ করে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে রাজারবাগ মোড় থেকে খিলগাঁও ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কে কয়েক হাজার নেতাকর্মী স্লোগান, বিক্ষোভ ও খণ্ড খণ্ড সমাবেশ করে।
ভোর ৬টার দিকে দু’দফা মিছিল শেষে সাড়ে ৭টার দিকে সড়কে অবস্থান নেয় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। সেখানে তারা সমাবেশ করে। সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ জনতা রাজপথে নেমে এসেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি। ভোটের অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবুর পরিচালনায় সেখানে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ বিন জলিল, মোনায়েম মুন্না, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম পটু, লিটন তালুকদার, মঞ্জুর হোসেন মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা যুগ্ম সম্পাদক আনু মোহাম্মদ শামীম, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ।
বিশাল এ জমায়েতের অবরোধে ওই এলাকা দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারেনি। দেড়টার দিকে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে তারা নয়াপল্টন কার্যালয়ে সমাবেশে যোগ দেয়।
শাহবাগে ছাত্রদলের মিছিল, পুলিশের গুলি সংঘর্ষে আহত ৮, গ্রেফতার ১৫ : সকাল সোয়া ৬টার দিকে শাহবাগে মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ের দিকে এগোলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একটি গাড়ি ভাংচুর করে ছাত্রদল কর্মীরা। ইট ভেঙে ছাত্রদল কর্মীরা পুলিশের দিকে ছুড়তে থাকে। জবাবে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে আট ছাত্রদল কর্মী আহত হয়। পরে তিন ট্রাক পুলিশ ও ছয় গাড়ি র্যাব সদস্য এসে আশপাশ এলাকায় গ্রেফতার অভিযান চালায়। ১৫ ছাত্রদল কর্মীসহ কয়েকজন পথচারীকে গ্রেফতার করে তারা।
পরে শাহবাগ মোড়ে শতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান নেয় এবং রাবার বুলেট ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেন রমনা জোনের ডিসি নুরুল ইসলাম। ঠিকমত বুলেট ছুড়তে না পারায় দু’পুলিশ সদস্যকে তিনি সাংবাদিকদের সামনে থাপ্পড় মারেন।
গাবতলী রণক্ষেত্র : ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলীতে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ ও মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা দিগ্বিদিক ছুটে পালায়। অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, কিরিচ, ছুরি, লাঠিসোটাসহ প্রতিপক্ষের ওপর কয়েক দফায় হামলা চালায়। এ সংঘর্ষের পুরো সময় ধরেই প্রত্যক্ষদর্শীর ভূমিকায় ছিল পুলিশ। তাদের সামনেই গাবতলীতে শতাধিক গাড়ি ও দোকান-পাট ভাংচুর চালায় অবরোধ সমর্থক ও বিরোধীরা। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন রাস্তায় অবরোধকারী ও বিরোধীদের চেনা না গেলেও প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে হামলা চলে দফায় দফায়। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছরে গাবতলীতে এমন চিত্র দেখা যায়নি। বিগত হরতালগুলোতে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেনি। এবারই প্রথম সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র থেকে মিছিলে গুলিবর্ষণ, বোমা নিক্ষেপ ও গাড়ি-দোকান ভাংচুর করেছে। তাদের বাধার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও গাড়ি এবং দোকানপাটে ভাংচুর চালিয়েছে।
ঘন কুয়াশায় শীতের মধ্যে সকাল ৬টার আগে রাজপথে নামেন অবরোধ পালনকারীরা। সাড়ে ৬টার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য এসএ খালেক, ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার শামীম পারভেজসহ বিএনপি নেতারা গাবতলী পৌঁছার সঙ্গে শত শত নেতাকর্মী রাজপথে অবস্থান নেন। এর কিছু সময় পরই জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আযাদ এমপিসহ শিবিরের নেতারা সেখানে পৌঁছেন। এ সময় পর্বতা সিনেমা হল, মাজার রোড, গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ি ও টেকনিক্যাল মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন রাখা হয়। সকাল ৭টার পরে গাবতলীর কোটবাড়ী এলাকায় হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়ে যখন এসএ খালেকের নেতৃত্বে পথসভা চলছিল, ঠিক তখনই মাজার রোডে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও জড়ো হতে থাকেন। এর আগে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও ছাত্রশিবির পৃথক মিছিল বের করে। এ সময় কয়েকটি অটোরিকশা ও গাড়ি চলতে দেখলে ধাওয়া দেয় অবরোধকারীরা।
ঘন কুয়াশায় শীতের সকালে শান্ত পরিবেশে সকাল সাড়ে ৭টায় গাবতলীতে উত্তাপ ছড়ায় ছাত্রলীগের প্রথম মিছিল। ঢাকা-আরিচা সড়কে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে বিপরীত রাস্তায় ১৮ দলীয় জোটের মিছিলে লাঠিচার্জ করা হয়। এর পরই শুরু হয় মৃদু ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় ছাত্রলীগের মিছিল থেকে অন্তত ৩ রাউন্ড গুলি ও কয়েকটি ককটেল ছোড়া হয়। জবাবে ২টি টায়ার জ্বালিয়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রতিবাদ জানায় হরতাল সমর্থকরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা পিছু হটে মাজার রোডে অবস্থান নেয়। একই সময় বিএনপির একটি বিক্ষিপ্ত দলকে লাঠিসোটাসহ ধাওয়া দিলে বসুপাড়া তৃতীয় কলোনিতে পিছু হটিয়ে দেয়া হয়। বিএনপির কয়েকজনকে বেধড়ক পিটুনি দেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মিরপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন শরীফের নেতৃত্বে মিছিল থেকে প্রকাশ্যে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টায় কোটবাড়ী থেকে গাবতলী আন্ডারপাসের দিকে বিএনপির মিছিল পৌঁছলে আবারও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় আওয়ামী লীগ। শুরু হয় আবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গাড়ি ভাংচুর। এরপরই পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে বিরোধীদের ধাওয়া দেয়। শুরু হয় আবারও সংঘর্ষ। সকাল সোয়া ৮টার দিকে আন্ডারপাসের কাছে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপি-জামায়াত নেতকর্মীরা ধাওয়া দিলে পুলিশ গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় রাস্তার পাশে পার্কিং করা গাড়ি ভাংচুর করে অবরোধকারীরা। এভাবে গাবতলীতে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে দুই পাশের রাস্তা লাল হয়ে যায়। সকাল সোয়া ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত মিছিল করে রাজপথে একক আধিপত্য বিস্তার করে ক্ষমতাসীনরা। তারা রাস্তার দু’পাশে রাখা গাড়ি ও দোকানগুলোতে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। আশপাশের ভবনগুলোতে উত্সুক জনতাকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়ে তারা। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা ড. বদরুজ্জামানের ছেলে সুমেল মোটরসাইকেলে চড়ে প্রকাশ্যে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা অস্ত্রসহ সুমেলের ছবি তুলতে গেলে পালিয়ে যান তিনি। একইভাবে বেলা ২টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা চলে। এ সময় কয়েকজন পথচারী ও পরিবহন শ্রমিককে কুপিয়ে আহত করে ক্ষমতাসীনরা।
এদিকে মিরপুরের বিএনপি নেতা মো. শহীদ উল্যাহ মজুমদারের নেতৃত্বে সকাল ৭টায় একটি বিশাল মিছিল মিরপুর বাঙলা কলেজ, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড়, গাবতলী ও মিরপুর-১-এ বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে সড়ক অবরোধে মিছিল বের করেন। মিছিলটিতে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করলে শহীদ উল্যাহ মুজমদারসহ ১০-১২ নেতাকর্মী আহত হন।
আমিনবাজারে বিএনপি নেতাদের গুলি করল পুলিশ : অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর উপকণ্ঠ আমিনবাজারে শান্তিপূর্ণ পথসভায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ ঘটনায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সহ-সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল কবীর পলসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপরই পুলিশের ছত্রছায়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এর আগে সকাল পৌনে ৭টার দিকে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দু’জন আহত হয়। ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একজন বিদেশি নাগরিক বহনকারী গাড়িতে আগুন ও কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর চালায় অবরোধ পালনকারীরা।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দিয়ে ক্ষমতাসীনদের হটিয়ে সকাল ৭টা থেকে রাজপথের দখল নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে নাজিম উদ্দিন আলম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিনবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিনসহ কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতে পথসভা চলতে থাকে। এ সময় পুলিশ জলকামান ও এপিসি মোতায়েন করলে পথসভায় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র্যাব-৪-এর সিইও লে. কর্নেল কিসমত হায়াতের বিশাল গাড়িবহরের পেছনে কয়েকটি ট্রাক সভা অতিক্রমের চেষ্টা চালালে তাতে ভাংচুর চালান বিএনপি নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ সকাল ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের ৩টি আবর্জনাবাহী গাড়ি আমিনবাজার পৌঁছলে ভাংচুর চালায় অবরোধকারীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সোয়া ১১টার দিকে যখন গাবতলীতে ক্ষমতাসীনদের তাণ্ডব চলছিল, ঠিক তখনই বিএনপির শান্তিপূর্ণ পথসভায় পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। এতে নাজিম উদ্দিন আলম দেহে চারটি স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়েছিলেন। গণমাধ্যম কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে পাঠান। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রেজাউল কবীর পলসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপরই পুলিশের ছত্রছায়ায় রাজপথের দখল নেয় আওয়ামী লীগ।
মিছিলে গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করে ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শেখ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিল চলা অবস্থায় হঠাত্ তারা সিটি করপোরেশনের গাড়ি ভাংচুর করে। তখনই পুলিশ অ্যাকশনে যায় এবং শটগানের গুলি ছুড়ে।
পুরান ঢাকায় ছাত্রদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা : রাজধানীর পুরান ঢাকায় বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে ছাত্রলীগের উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল কর্মী বিশ্বজিত্ দাশ (২৪) নিহত হয়। এছাড়াও ছাত্রলীগ কর্মীরা মহানগর দায়রা জজ আদালতের মধ্যে ঢুকে লাঠি, স্টিলের পাইপ ও রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গুরুতর আহত করে। এ সময় তারা বার সমিতির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
জবি ছাত্রদল সভাপতি গুলিবিদ্ধ : পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল মিছিল করার সময় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজল ৫ ছাত্রদল নেতাকর্মী। সকাল ৮টায় এ ঘটনা ঘটে।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবরোধ, হামলা, গুলি : কাজলা এলাকায় সকাল ৭টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে অবরোধ সমর্থনকারীরা। একই সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিছিলকারীদের ওপর। শুরু হয় পুলিশ, যুবলীগ ও অবরোধকারীদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে প্রায় ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপি ও ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হন। এরই মাঝে র্যাব ও বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়।
যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে আহতদের মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ক.ম মোজাম্মেল হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আছেন। মাহবুব হোসেন মাইকেল নামে এক যুবক বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ ও যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের সামনে মো. রাসেল নামে একজন গুলিবৃদ্ধ হয়। পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তারা দু’জন ছাত্রদল কর্মী বলে জানা যায়। তাদের বাড়ি যাত্রবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় সকাল ৭টায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। খবর পেয়ে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পিকেটারদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ যোগ দেয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পুলিশ, অবরোধকারী ও যুবদল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
র্যাবের সামনেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুবলীগের মহড়া : এসব সংঘর্ষের পর ওই এলাকায় র্যাব ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে র্যাব নিয়ন্ত্রণে নেয়। ওই এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মোটরসাইকেল এবং লেগুনাতে করে মহড়া দিতে দেখা যায়। সরেজমিন দেখা গেছে, র্যাব যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও ফ্লাইওভারের নিচের এক পাশের সড়কে সব ধরনের যান চলাচল দুপুর পর্যন্ত বন্ধ রাখে। এ সময় যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সরকারি দলের লোকজনকে মহড়া দিতে দেখা গেছে। র্যাবের সামনে মোটরসাইকেলে করে প্রকাশ্যে গজারি কাঠের লাঠি ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুবলীগ ক্যাডাররা মহড়া দেয়। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে তারা প্রকাশ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও এলিট ফোর্স বলে পরিচিত র্যাব কর্মকর্তাদের সামনে মহড়া দিলেও সরকারদলীয় ওই ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নেইনি; বরং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
অবরোধের কারণে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে কোনো গাড়ি বের করেননি মালিকরা। এ ব্যাপারে এক বাস মালিক আওয়াল হোসেন জানান, গাড়ি বের করলে অবরোধকারীরা ভাংচুর করতে পারে। এ জন্য তিনি তার গাড়ির চালককে বাস নিয়ে বের হতে দেননি।
শনির আখড়া : এদিকে সকাল ৭টার দিকে শনির আখড়া এলাকায় ছাত্রশিবির মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রশিবিরি মিছিল নিয়ে রাস্তায় এলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় শিবির নেতাকর্মীরা রাস্তায় ২-৩টি গাড়ি ভাংচুর করে। পরে অবরোধ সমর্থনবকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও সায়েদাবাদ এলাকায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ছাত্রশিবির মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশ ধাওয়া করে শিবিরের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গোলাপবাগ : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোলাপবাগ এলাকায় সালসাবিল পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গোলাপবাগ এলাকায় বিশ্বরোডে কে বা কারা একটি গাড়ির (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৪৯৩) পেছনের সিটে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় রাস্তায় থাকা আরো দুটি গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেয় গাড়ির চালকরা। গাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার রাতে গাড়িটি মেরামত করার জন্য গোলাপবাগ এলাকায় রাস্তার পাশে রাখা হয়। সকালে গাড়ির নিচের দিকে কাজ করছিল হেলপার। এ সময় কে বা কারা হঠাত্ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। দ্রুত ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে গাড়িতে আগুন লাগানোর পরই র্যাব-১০-এর বিপুল সংখ্যক সদস্য এসে মহড়া দিয়ে চলে যায়।
পান্থপথে পুলিশ ভ্যানে আগুন : ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর পান্থপথে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় অবরোধ সমর্থকরা। শেরেবাংলানগর থানার কাভার্ড ভ্যানে কে বা কারা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
কাফরুল : ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি পালনে রাজধানীর কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ায় পৃথক মিছিল বের করেছে অবরোধকারীরা। তারা পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ বেধে গেলে অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে যুবদলের ১৪নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন নেতাকর্মী।
সুপ্রিমকোর্টের সামনে আইনজীবীদের সড়ক অবরোধ : সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদ সুপ্রিমকোর্ট থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় মিছিলকারীরা রাস্তায় বসে পড়ে এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। প্রায় আধাঘণ্টা তারা সেখানে অবস্থান করে। এক পর্যায়ে পুলিশের রমনা জোনের এসি শিবলি নোমান এসে তাদের সরিয়ে দিতে পেট্রোল ইন্সপেক্টর ইমানুলকে নির্দেশ দেন।
এর কিছুক্ষণ পর র্যাবের একটি দল, পুলিশের জলকামান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে গেলে মিছিলকারীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা গেটের ভেতরে গিয়ে সমাবেশ করে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শাহ খসরুজ্জামান, নাসির উদ্দিন অসিম, কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুছ কাজল, গাজি কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
মহাখালীতে রাস্তা অবরোধ, সংঘর্ষ, আটক ১৩ : মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবের সামনে সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে এ অবরোধ শুরু হয়। জামায়াত-শিবিরের ব্যানারে বহু সংখ্যক নেতাকর্মীও এতে অংশ নেয়। অবরোধকারী ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে তেজগাঁও রোডের দিকে গিয়ে শেষ করে। একই সময়ে ছাত্রদলের ব্যানারে রাওয়া ক্লাব থেকে মহাখালীর দিকে এবং বনানী থেকে মহাখালীর দিকে পৃথক দুটি মিছিল বের হয়ে মহাখালী তিন রাস্তার মোড়ে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশ এখান থেকে ১৩ জনকে আটক করে। সকালে এখানে একটি ট্যাক্সিক্যাবে আগুন দেয়া হয়। নাবিস্কো এলাকায় পৃথক মিছিল বের করে বিএনপি। এ সময় বুলেটপ্রুফ গাড়ি নিয়ে পুলিশ ওই রাস্তায় মহড়া দেয়। মহাখালীতে অবরোধকালে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, জেনারেল (অব.) রুহুল আলম, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, লায়ন হারুনুর রশীদ এমপি, তিতুমীর কলেজের সাবেক ভিপি শামছুল হক, নুরুল হুদা নুরু, আবদুল আলিম প্রমুখ। এছাড়া জামায়াতের মহানগরী নেতা এসএম আলাউদ্দিন ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া উপস্থিত ছিলেন।
বাসাবো-খিলগাঁও : সকাল থেকেই বাসাবো এলাকার রাস্তায় কড়া অবস্থান নেয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সকাল ৮টার দিকে বাসাবো স্কুল মাঠ এলাকা থেকে বিএনপি খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে দক্ষিণ বাসাবো মোড়ে সমাবেশ করে। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ওই সড়ক দিয়ে কোনো রিকশা-সাইকেল পর্যন্ত চলতে দেয়া হয়নি। সাড়ে ৮টার দিকে স্কুল মাঠের সামনে থেকে জামায়াত-শিবির একটি মিছিল বের করে। দলের মহানগর সহকারী সেক্রেটারি সেলিমউদ্দিনের নেতৃত্বে মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা ড. রেজাউল করিম, ইয়াছিন আরাফাত প্রমুখ। মিছিল চলাকালে ফ্লাইওভার সংলগ্ন বাসাবো মোড়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব উপস্থিত ছিল। এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খিলগাঁও রেলগেটের কাছে ফ্লাইওভারের নিচে বিআরটিসির একটি দোতলা বাস ভাংচুর ও আগুন দেয়ার চেষ্টা করে অবরোধকারীরা। এ সময় পুলিশ অবরোধকারীদের লাঠিচার্জ শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে পুলিশসহ ১৮ দলের কয়েকজন আহত হয়। ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
টঙ্গীতে সর্বাত্মক অবরোধ, বিএনপি অফিস ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগ : অবরোধ চলাকালে রাজধানীর প্রবেশমুখ শিল্পনগরী টঙ্গী ছিল ১৮ দলীয় জোটের দখলে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ হাসান উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় নেতাকর্মীরা ভোর ৬টা থেকে রাজপথ অবরোধ করে। টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় সকাল ৮টায় র্যাবের একটি গাড়ি ঘন কুয়াশার মধ্যে বিএনপির মিছিলের কাছাকাছি এসে পড়লে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় অবরোধকারীরা র্যাবের গাড়িটি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে।
অবরোধ চলাকালে মহাসড়কজুড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরাফত হোসেন, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ, যুবদল নেতা রফিকুল আজিজ প্রিন্স, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, হাজী বিল্লাল হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শাহনুর ইসলাম রনি সরকারের নেতৃত্বে পৃথক মিছিল মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে।
অবরোধ চলাকালে রোববার সকালে টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় একটি ট্রাক, মোটরসাইকেল ও মিরের বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে সড়ক-মহাসড়কগুলো ছিল ফাঁকা। রিকশা ও বাইসাইকেল চলাচল করতেও দেখা যায়নি। বেলা ২টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, বিপণি বিতান এমনকি চা স্টলও ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। সকাল সাড়ে ৯টায় স্থানীয় হোসেন মার্কেট এলাকা থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটি মিছিল বের করলে অবরোধকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় এক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। বেলা ১১টায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৫০/৬০ জনের একটি জঙ্গি মিছিল স্থানীয় হোসেন মার্কেট এলাকা থেকে বের হয়ে স্টেশন রোড আওয়ামী লীগের অফিসের দিকে চলে যায়। এ সময় তারা পুলিশ ও র্যাবের সামনেই মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, এনসিসি ব্যাংক এবং ট্রাক স্ট্যান্ডে ঢুকে ২০/২৫টি ট্রাক ও টঙ্গী থানা বিএনপি অফিস ভাংচুর করে ।
জামায়াত-শিবিরের তত্পরতা : ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বেশ তত্পরতা ছিল। ১৮ দলীয় জোটের ব্যানার ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক ব্যানার নিয়ে রাস্তা অবরোধ ও মিছিল-সমাবেশ করে জামায়াত-শিবির। সকাল থেকেই গাবতলী এলাকায় জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেয়। এ সময় দলের মহানগর নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আযাদ এমপির নেতৃত্বে মিছিল করে জামায়াত। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীদের কয়েক দফা ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অনেক নেতাকর্মী।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সহকারী সেক্রেটারি সেলিমউদ্দিনের নেতৃত্বে নয়াপল্টনে এক বিশাল মিছিল বের করে। মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পল্টন থানা আমির অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান ও শিবিরের কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ। মিছিলটি ফকিরাপুল থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সাড়ে ৮টায় সবুজবাগে মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। এ সময় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে নেতাকর্মীরা। মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম ভুইয়ার নেতৃত্বে সকালে নয়াবাজারে একটি মিছিল সমাবেশ ও রাস্তা অবরোধ করে নেতাকর্মীরা। যাত্রাবাড়ীতে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ও আবদুস সবুর ফকিরের নেতৃত্বে মিছিল সমাবেশ করে জামায়াত। মহাখালীতে জামায়াত নেতা এএসএম আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে মিছিল সমাবেশ ও অবরোধ করা হয়। মিরপুরে আবদুর রহমান মুসা ও লস্কর মো. তসলীমের নেতৃত্বে মিছিল সমাবেশ করে জামায়াত। এছাড়া সায়েদাবাদ, শনির আখড়া ও কাজলা এলাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিল করার সময় ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।
খেলাফত মজলিস : ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুগ্মমহাসচিব শেখ গোলাম আসগরের নেতৃত্বে, গাবতলীতে মহানগর সভাপতি মাওলানা নোমান মাযহারীর নেতৃত্বে, খিলগাঁও-শাহজাহানপুরে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক অধ্যাপক মো. আবদুল জলিলের নেতৃত্বে মজলিস কর্মীরা অবরোধে অংশগ্রহণ করে এবং বেলা ১টায় যুগ্মমহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দিনের নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এছাড়া সারাদেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন দলের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।
এলডিপি, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপ : সকাল পৌনে ১০টার দিকে এলডিপি, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপের যৌথ মিছিল ফকিরাপুল থেকে শুরু হলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা আবারও পল্টনে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। পরে পুরানা পল্টনে কল্যাণ পার্টি কার্যালয়ে এক যৌথ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পার্টির মহাসচিব আবদুল মালেক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এলডিপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টি যুগ্ম মহাসচিব এম.এম. আমিনুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম. শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে ছাত্রদল, আটক-আহত শতাধিক : অবরোধ সফল করার সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল। এসব মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে। পুলিশ ৫০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। সকাল সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর শাহাবাগ এলাকায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ছাত্রদলের অভিযোগ, এ সময় পুলিশের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ সময় ২৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া ছাত্রদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসহাক সরকারের নেতৃত্বে সকালে মিছিল বের হয়। এতে পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনামুল হক এনামের নেতৃত্বে ফকিরাপুলে বিক্ষোভ হয়। এতে পুলিশের লাঠিচার্জে ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। ছাত্রদল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজল ও সাধারণ সম্পাদক ওমরের নেতৃত্বে কোর্ট কাচারী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জে ১৫ জন আহত হয়। ছাত্রদল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সকালে কাওরানবাজার পেট্রোবাংলার সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে পুলিশের হামলায় ৫ জন আহত হয়। ছাত্রদল ঢাকা কলেজ সভাপতি আল মামুন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিঠুর নেতৃত্বে ওই কলেজের সামনে সকাল ৭টায় অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর সিনিয়র সহ-সভাপতি শরীফ উদ্দিন জুয়েল ও তিতুমীর কলেজ সভাপতি ইসমাইল খান শাহিনের নেতৃত্বে সকালে মহাখালীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের মিরপুর শাখার সভাপতি গাজী ইয়াকুবের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ফজরের নামাজের পরে টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করে। পরে সকাল সাতটার দিকে বাংলা কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে একদল ক্যাডার দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া করলে ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা নিকটবর্তী একটি মসজিদে আশ্রয় নেয়। এরপর স্থানীয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ঐক্যজোটের সঙ্গে যোগ দিলে ছাত্রলীগ আবারও তাদের ওপর হামলা চালায়।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates