0 অবরোধে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাতে ২ জনসহ নিহত ৩ : বিরোধী সমর্থক সন্দেহে বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল ছাত্রলীগ

বিরোধী জোটের ডাকে গতকাল রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছে। বিরোধী সমর্থক সন্দেহে রাজধানীর পুরান ঢাকায় শত শত মানুষের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বিশ্বজিত দাস নামের এক যুবককে। স্থানীয় দোকান কর্মী বিশ্বজিতকে বিএনপি তাদের কর্মী দাবি করলেও তার সংখ্যালঘু পরিবার জানিয়েছে কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। কোনো রকম মিছিল-পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণ না করেও কেবল ছাত্রলীগের মিছিলের সামনে পড়ে পথচারী বিশ্বজিতকে প্রাণ দিতে হয়েছে অকালে। পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে টেইলরিং কাজ করতেন তিনি।
এছাড়া অবরোধ চলাকালে ছাত্রলীগ ক্যাডারা সিরাজগঞ্জে এক জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এদিকে অবরোধ ভাঙতে রাস্তায় নামানো মিনিবাসের চাপায় এয়ারপোর্টের সামনে নিহত হয় এক যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ৯টার দিকে ছাত্রলীগ অবরোধবিরোধী মিছিল বের করে। মিছিলটি পার্কের কাছে আসার পরই অবরোধের সমর্থনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের একটি মিছিলের মুখোমুখি হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আইনজীবীদের মিছিলকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ ক্যাডররা। কয়েক আইনজীবীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে তারা। অনেকের পকেট থেকে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিতেও দেখা যায়। ঠিক এ সময় হামলা থেকে বাঁচতে পার্শ্ববর্তী পদ্মা বিপণি বিতানের দোতলায় আশ্রয় নেয় পথচারী বিশ্বজিত দাস। কিন্তু ছাত্রলীগের হাত থেকে সে বাঁচতে পারেনি। বিরোধী দল সমর্থক মনে করে সেখানে গিয়ে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে মৃত ভেবে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এ সময় সে নিজেকে টেইলার এবং বিরোধী জোটের সমর্থক নয় বলে বার বার বলতে থাকলেও উন্মত্ত সন্ত্রাসীরা তাতে কর্ণপাত করেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ ক্যাডার শাকিলের নেতৃত্বে তাকে কোপানো হয়। এরপর মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। বিশ্বজিতের ভাই জানান, শাখারি বাজারের টেইলারের দোকানে যাওয়ার জন্য গতকাল সকালে লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে বের হন তিনি। কিন্তু তার আর দোকানে যাওয়া হয়নি।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু তানভীর সিদ্দিক বলেন, বিশ্বজিতকে গুরুতর অবস্থায় এক রিকশাচালক হাসপাতালে নিয়ে আসে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে ১০ মিনিটের মাথায় মারা যান তিনি। নিহত ব্যক্তির বড় ভাই উত্তম কুমার দাস জানিয়েছেন, তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভবেশ্বর। বাবার নাম অনন্ত চন্দ্র দাস। বিশ্বজিত দাস পুরান ঢাকার ৫৩ নম্বর ঋষিকেশ দাস লেনের বাসা থেকে সকালে শাঁখারীবাজারে তার টেইলারের দোকানে যাচ্ছিলেন। ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় ছাত্রদলের কর্মী মনে করে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে কুপিয়েছে। বিশ্বজিত কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলে তিনি দাবি করেন।
রিকশাচালক রিপন মিয়া জানান, সকাল ৯টার দিকে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা তাকে মাথায় ও বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এমনকি রড দিয়ে তাকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। বিশ্বজিতকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান রিপন মিয়া। ওই সময়ে বিশ্বজিত কথা বলে তার নাম বিশ্বজিত বলে রিকশাওয়ালাকে জানান। রিপন আরও জানায়, ডাক্তারদের অবহেলার কারণে আধাঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সকাল ১০টার দিকে মারা যান।
মিটফোর্ড হাসপাতালে মানষ ঘোষ বাবুরাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, শাঁখারীবাজারে দোকান ভাড়া নিয়েই ‘আমন্ত্রণ টেইলার্স’ নামের একটি দোকান চালাতেন বিশ্বজিত। বিশ্বজিত সকালে বাসা থেকে দোকানে যাচ্ছিল। পথে গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছিল বলে আমি শুনিনি।
লাশের সুরতহাল তৈরির সময় উপস্থিত থাকা সূত্রাপুর থানার এসআই জাহেদুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টার দিকে ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে এ ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা বিশ্বজিতের ডান হাতে ও পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে। নিহতের লাশ সুরতহাল শেষে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বজিতের মৃতদেহ দেখতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাসহ সিনিয়র নেতারা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান এবং লাশ সত্কার করার জন্য তার পরিবারের সদস্যকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বিশ্বজিতের লাশ তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে নেয়া হয়েছে।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates