0 সুরঞ্জিতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি বিএনপির

দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, সুরঞ্জিতের দুর্নীতির কালো বিড়াল বের হয়ে পড়েছে। তার এপিএসের গাড়িচালক আলী আজম খান সব বলে দিয়েছে। সে যা বলেছে, তার একবর্ণও মিথ্যে নয়। রেলের ১০ কোটি টাকা দুর্নীতি ঘটনায় সুরঞ্জিত জড়িত। কিন্তু জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তিনি নানা কথার জাল বুনে চলেছেন। এ বিষয়ে দুদককে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে দুদকের ওপর মানুষ আর আস্থা রাখতে পারবে না।
সম্প্রতি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল আরটিভির সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুকের গাড়ির ড্রাইভার আলী আজম খান স্বীকার করেছেন, ওইদিন সুরঞ্জিত সেনের বাসার উদ্দেশেই গাড়িতে করে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সুরঞ্জিত ড্রাইভারের এ দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ড্রাইভারকে তিনি চেনেন না। এটা মিডিয়ার সৃষ্টি।
গত মঙ্গলবার বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা এবং যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোশাররফ মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করে বলেন, বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী চরিত্রের কথা মানুষ জানে। তারা অন্যায়ভাবে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের তিন দিন অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এভাবেই জনধিকৃত সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এভাবেই হামলা-মামলা এবং মানুষ হত্যা করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের তদন্ত কমিটি দেশে আসছে। আমার প্রশ্ন, এ খাতে দুর্নীতি যদি না-ই হয়, তাহলে তাদের কমিশন আসছে কেন?
ড. মোশাররফ কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেন, এর সঙ্গে সরকারি দল জড়িত। ঘটনার কাছাকাছি পুলিশের থানা থাকলেও তারা সময়মত ঘটনাস্থলে আসেনি। সময়মত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত না। বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ রাখতে সরকার যেভাবে সক্রিয় ছিল, ওই সাম্প্রদায়িকতার তাণ্ডব দমনে তারা ছিল ততটাই নিষ্ক্রিয়।
তিনি ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় শুধু হলমার্ক কর্মকর্তা নয়, সোনালী ব্যাংকের এমডি এবং পরিচালনা পর্ষদসহ জড়িত সরকারদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, শুধু হলমার্কের এমডিসহ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এত বড় জালিয়াতি পরিচালনা পর্ষদ ছাড়া সম্ভব নয়। এর আগে শেয়ারবাজার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তাদের দলের লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি ক্ষমতাসীনরা। কারণ এসব দুর্নীতির সঙ্গে সরকারের প্রধান, তার আত্মীয়স্বজন, মন্ত্রী এবং সরকারি দলের নেতারা জড়িত।
তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অবস্থা নাজুক। দুর্নীতির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কারণ প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সরকার তাদের দলীয় এমন লোকদের বসিয়েছে, যাদের ব্যাংকিং সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি বলেন, রামুর ঘটনা বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কজনক। বিএনপির প্রতিনিধি দল সেখানে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তদন্ত করেনি; নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেছে। প্রকৃত তথ্য দেশবাসীকে শিগগিরই জানানো হবে।
তিনি বিশ্বব্যাংকের তদন্ত দলের ঢাকায় এসে দুর্নীতির তদন্ত করাকে দেশের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করেন। বলেন, এর থেকে লজ্জাজনক ঘটনা আর হতে পারে না। সরকারের লজ্জা থাকলে এতদিনে পতদ্যাগ করত। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কালো বিড়াল বের হয়েছে। এই দুর্নীতির বিচার করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগে এখন অনেক সুরঞ্জিত রয়েছেন। একসময় ভারতে সুর উঠেছিল— ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ এখন বাংলাদেশেও একই সুর— ‘প্রধানমন্ত্রী চোর হ্যায়।’
ঢাকা মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, জয়নুল আবদিন ফারুখ, নাজিম উদ্দিন আলম, হাবিব-উন নবী সোহেল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates