0 সরকারি ব্যাংকের চেয়ে গ্রামীণের সুদের হার কম

আকবর আলি খান
সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে হলে ঘুষ দিতে হয়। এই ঘুষের টাকা যোগ করলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ে সরকারি অন্য যেকোনো ব্যাংকের সুদের হার অনেক বেশি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষা ও দুর্জন প্রতিরোধ রক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘৮৫ লাখ দরিদ্র মহিলাকে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদ’ শীর্ষক এই সভায় আকবর আলি খান আরও বলেন, ‘গ্রামের দরিদ্র মানুষের ঋণের জন্য সরকারের কৃষি ব্যাংক অথবা গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমার হিসাবে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সরকারি যেকোনো ব্যাংকের চেয়ে কম। সরকারি ব্যাংকের ঋণ পেতে হলে যে টাকা ঘুষ হিসাবে দিতে হয়, সেটাও খরচের মধ্যে পড়ে। সুতরাং গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হারই কম। সে জন্য দরিদ্র মানুষ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে।’
আকবর আলী খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাগজে এক কথা বলেন, মুখে বলেন অন্য কথা। ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে ক্ষুদ্রঋণ-সংক্রান্ত বিশ্ব সম্মেলনে তিনি ড. ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের পথিকৃত বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যে বাঙালিরা গর্ববোধ করে। গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় ও সম্ভাবনার। শুধু তা-ই নয়, সরকার এখনো ক্ষুদ্রঋণের ওপর কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। অথচ এখন বলছেন, ক্ষুদ্রঋণ খারাপ, ড. ইউনূস লোকটা খারাপ, রক্তচোষা।’
গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংক আর শেয়ারবাজার থেকে যারা কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হয় না। কারণ সরকারের কাছে তারা সম্মানিত। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার নিবেদন, সরকারের যে তিন ভাগ শেয়ার আছে, সেটা গ্রামীণ ব্যাংক কিনে নেবে। ব্যাংকটিকে তার নিজের মতো করে চলতে দিন।’
গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন উদ্যোগের সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাত্কারে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ। এটি অবিশ্বাস্য। দীপু মনি ও মতিয়া চৌধুরী তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী) পাগল প্রমাণ করার কাজে নেমেছেন। মতিয়া মনে করছেন, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, এ সরকার তাদের দেশপ্রেমিক বলছে। অথচ প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, ড. ইউনূসকে অপদস্ত করার ক্ষমতা এ দেশের কারও নেই। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার ক্ষমতা সরকারের আছে। সুতরাং সরকারের এই তত্পরতায় ড. ইউনূসের কোনো ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে ৮০ লাখ দরিদ্র পরিবারের।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনির-উজ-জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক সাদেক খান, সালমা খান, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক রোজিনা বেগম, তাহসিনা আক্তার প্রমুখ।
বক্তারা গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন-সংক্রান্ত অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান। একই সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি বাতিলের দাবি, গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং নির্বাচিত পরিচালকদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates