0 সেদিন বুঝলাম লেখকের মেয়ে হওয়াটা অনেক সুখের’

  • সিলেটে হুমায়ূন আহমেদের স্মরণসভায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন, মেয়ে শীলা আহমেদ� সিলেটে হুমায়ূন আহমেদের স্মরণসভায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন, মেয়ে শীলা আহমেদসহ অন্যরা
    ছবিবহুকাল আগে বাবা হুমায়ূন আহমেদ মেজো মেয়ে শীলাকে চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে লিখেছিলেন, ‘মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। সব সময় মনে রেখো—লেখকের সন্তান হওয়াটা খুব কষ্টের।’ সেই কথা মনে করে শীলা আজ কাঁদলেন। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘শহীদ মিনারে বাবার কফিনের পাশে যখন আমরা সব ভাই-বোন দাঁড়িয়েছিলাম, তখন দেখলাম কত কত মানুষ বাবার প্রিয় কদম ফুলসহ নানা কিছু নিয়ে বাবাকে শেষ দেখা দেখতে এসেছেন। তাঁদের সবাই বাবার কফিনে হাত ছুঁয়েছেন। হাজার-লক্ষ মানুষের নিখাদ ভালোবাসার এ দৃশ্য দেখে আমাদের বুক গর্বে ভরে ওঠে। সেদিন বুঝলাম, লেখকের মেয়ে হওয়াটা অনেক সুখের ও গর্বের। কিন্তু আফসোস, আমাদের সেই অনুভূতিটুকু বাবা আর জেনে যেতে পারলেন না...।’
আজ সোমবার সকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আবেগ-ভালোবাসা-শোক-শ্রদ্ধায় প্রয়াত জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে এভাবেই স্মরণ করলেন আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও লেখক-সাহিত্যিকেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. সালেহ উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রয়াতের ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস। আমন্ত্রিত আলোচকের বক্তব্য দেন লেখক-সাংবাদিক আনিসুল হক।
জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে মিলনায়তনের শ্রোতার সারিতে বসে কাঁদলেন তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ। তাঁদের সঙ্গে বসে নীরবে কেঁদেছেন লেখকের সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন খান, মেয়ে বিপাশা আহমেদ, তিন বোন সুফিয়া হায়দার, রোকসানা আহমেদ ও মমতাজ শহীদসহ পরিবারের সদস্যরা।
বড় ভাইয়ের জীবনের নানা ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘দাদাভাই (হুমায়ূন আহমেদ) জনপ্রিয় ছিলেন জানতাম। কিন্তু মানুষের এতটা ভালোবাসা তিনি অর্জন করেছেন, সেটা জানতাম না। আজ এই মিলনায়তনে এত এত মানুষ বসে রয়েছেন, তাঁরা কেউই একজন আরেকজনের হাত ধরে বসেননি। কিন্তু অদৃশ্য হলেও কিন্তু আপনারা একজন আরেকজনের হাত ধরে আমাদের দুঃখ ও কষ্টের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছেন। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
হুমায়ূন আহমেদকে শক্তিশালী ও জাদুকর লেখক উল্লেখ করে কথাসাহিত্যিক-সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে থেকেই জোছনা ও বৃষ্টি ছিল। কিন্তু লেখার মধ্য দিয়ে সেটাকে হুমায়ূন আহমেদ তরুণ প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন। আমরা তাঁর কল্যাণেই এখন জোছনা ও বৃষ্টিকে ভালোবেসে নিজেদের জীবনের অন্যতম অনুসঙ্গ করে তুলেছি।’
বেলা তিনটার দিকে স্মরণসভা শেষ হয়। স্মরণসভায় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুছের সভাপতিত্বে আলোচকের বক্তব্য দেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সুশান্ত কুমার দাশ, প্রয়াত লেখকের ভ্রাতৃবধূ ইয়াসমিন হক, কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও জফির সেতু। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন আ খ ম মাহবুজ্জামান, শিক্ষক রোকসানা বেগম, আলী ইবনে সিনা ও শিক্ষার্থী সাব্বির আহমদ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষক ফারুক উদ্দিন।
 

BANGLADESHI UPDATE NEWS Copyright © 2011 - |- Template created by O Pregador - |- Powered by Blogger Templates