আইন
ভেঙে রাজধানীর উত্তরায় সরকারি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজে যুক্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীন
দলের দুই আইনপ্রণেতা। প্রকল্পের ৭৯টি ভবনের (সাড়ে ছয় হাজার ফ্ল্যাট) মধ্যে
৭৭টিরই কাজ পেয়েছে এই দুই সাংসদের প্রতিষ্ঠান।
সাংসদ দুজন হলেন রাজশাহী-৪ থেকে নির্বাচিত এনামুল হক ও ঢাকা-৩-এর নসরুল হামিদ। এদিকে কার্যাদেশ পাওয়ার পরই এনামুল হক সরকারের কাছে ৪০ কোটি টাকা আগাম চেয়েছেন। এ নিয়ে জটিলতার কারণে ৩০ মাসে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এমনিতেই আইন অনুযায়ী কোনো সাংসদ সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারেন না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং থাকার যোগ্য হবেন না।
সাংসদ হয়ে সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করাটা বিধিসম্মত কি না, জানতে চাইলে এনা গ্রুপের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘আমরা তো কোনো লাভ করছি না। কাজেই আমার মনে হয় না আরপিও লঙ্ঘন হয়েছে। আর আপনারা তো আগেও লিখেছেন। কিন্তু এমন কিছু তো প্রমাণ হলো না।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে আগাম টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাঁরা বারবার মৌখিকভাবে ও চিঠি দিয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। তবে এনামুল হকের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনা-ডোঙ্গা বলছে, আগাম টাকা না পাওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ও রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে রাজউকের সম্প্রসারিত উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে তিন শ্রেণীতে মোট ২০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারের মোট খরচ হবে নয় হাজার ৩০ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
প্রাথমিকভাবে ‘এ’ শ্রেণীতে ৭৯টি ভবনে ১২৫০ বর্গফুটের মোট ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট তৈরি হবে। এ জন্য গত বছরের শেষে দরপত্র আহ্বান করা হয়। অর্ধশত দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পেতে দরপত্রে অংশ নেয়। এর মধ্যে সাংসদ এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা প্রপার্টিজ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ডোঙ্গা এএইচ যৌথ কোম্পানি ২০ ভাগে (লট) ৪০টি ভবন তৈরির কাজ পায়। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি কোম্পানি ডিডিজের সঙ্গে যৌথভাবে ১১ ভাগে এনা পেয়েছে আরও ২১টি ভবন তৈরির কাজ।
আরেক সাংসদ নসরুল হামিদের মালিকানাধীন হামিদ কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে বিল্ডিং ফর ফিউচার (বিএফএল) যৌথভাবে আটটি ভাগে পেয়েছে ১৬টি ভবন নির্মাণের কাজ। নসরুল হামিদ আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি রিহ্যাবেরও সভাপতি। আনাম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে বাকি দুটি ভবন নির্মাণের কাজ।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ৭৯টি ভবন নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী, একেক লটে (দুটি ভবন) সরকারের খরচ হবে ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকা। প্রতিটি ভবন ১৬ তলা। বেইজমেন্ট ও কার পার্কিংয়ের জন্য দুটি তলা হবে। বাকি ১৪ তলার একেকটিতে ছয়টি করে মোট ৮৪টি ফ্ল্যাট থাকবে। ৭৯টি ভবনে ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট হবে। রাজউক ও গণপূর্ত অধিদপ্তর যৌথভাবে এই নির্মাণকাজ তদারকি করছে। স্থাপত্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর ভবনগুলোর নকশা তৈরি করছে।
এদিকে আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে ১ মার্চ থেকে এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দের ফরম দেওয়া হচ্ছে। তবে তিন দফায় সময় বাড়ানোর পরও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে আরেক দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক এম হাফিজউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলেছি, আইন প্রয়োগ করুন। কিন্তু কমিশন এ ব্যাপারে উদাসীন। অনেক সাংসদ গোপনে ব্যাবসা করেন। কেউ প্রকাশ্যে। আমার কথা হলো, এভাবে সরকারের সঙ্গে কোনো সাংসদের ব্যবসা করাটা অনৈতিক ও বেআইনি। এই চর্চা বন্ধ হওয়া উচিত।
অগ্রিম টাকা দাবি: রাজউক ও পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মার্চে সরকারের চুক্তি হলেও জানুয়ারি মাসেই তাদের কাজ পাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত আট মাসেও কাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভিত খননই (টেস্ট পাইলিং) চলছে। দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য মন্ত্রণালয় ও রাজউকের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও কাজে গতি নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। এরই মধ্যে জুলাইয়ের শেষে সাংসদ এনামুল হকের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনা-ডোঙ্গা চুক্তিবহির্ভূতভাবে একেকটি লটের জন্য দেড় থেকে দুই কোটি টাকা দাবি করে বসে। রাজউকের কাছে ১০টি লটের জন্য ২১ কোটি টাকা এবং গণপূর্তের কাছে ১০টি লটের জন্য ১৯ কোটি টাকা দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অগ্রিম অর্থ চেয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেটি দেওয়ার সুযোগ নেই। যেটুকু কাজ শেষ হবে, সেটুকুর বিল দিয়ে দেওয়া হবে।’ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে সচিব বলেন, ‘এটি আমাদের অগ্রাধিকার প্রকল্প। এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে কাজের পরিকল্পনা করেছি, সেভাবেই সব এগোচ্ছে।’
এনা-ডোঙ্গা যৌথ কোম্পানির কর্ণধার এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। আমরা এখানে কাজ করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এনেছি। এখন টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ চলছে। অথচ সরকার এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো টাকা দেয়নি। তাই আমরা মোবিলাইজেশন ফান্ড বাবদ পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ অগ্রিম অর্থ চেয়েছি।’ মোট কত টাকা চেয়েছেন জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ‘টেস্ট পাইলিংয়ের বিল ও অগ্রিম বাবদ ৪০ কোটি টাকা চেয়েছি।’
সরকারের সঙ্গে আরও ব্যবসা: এর আগেও আইনবহির্ভূতভাবে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এনামুল হক। তাঁর প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন পাওয়ার সল্যুশন লিমিটেড ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে রাজশাহীর কাটাখালীতে পাঁচ বছরের জন্য ৫০ মেগাওয়াট ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। তাঁর অপর প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ লিমিটেড ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে বহুতল সিটি সেন্টার নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে সিটি সেন্টার নির্মাণের চুক্তিতে সাংসদ নিজেই সই করেন। এ ধরনের ব্যবসা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী হওয়ায় সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংসদ ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিল দুদক।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কাজ পাওয়া অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো টাকা চেয়ে কোনো চিঠি না দিলেও বি ও সি শ্রেণীর ফ্ল্যাট নির্মাণের সময় যেন আগাম বিল দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন বিএফএল-এইচসিএল কোম্পানির কর্ণধার সাংসদ নসরুল হামিদ। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নসরুল হামিদ বলেন, তিনি এখন হজে আছেন। এ বিষয়ে এখন কোনো কথা বলতে পারবেন না।
সাংসদ দুজন হলেন রাজশাহী-৪ থেকে নির্বাচিত এনামুল হক ও ঢাকা-৩-এর নসরুল হামিদ। এদিকে কার্যাদেশ পাওয়ার পরই এনামুল হক সরকারের কাছে ৪০ কোটি টাকা আগাম চেয়েছেন। এ নিয়ে জটিলতার কারণে ৩০ মাসে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এমনিতেই আইন অনুযায়ী কোনো সাংসদ সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারেন না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং থাকার যোগ্য হবেন না।
সাংসদ হয়ে সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করাটা বিধিসম্মত কি না, জানতে চাইলে এনা গ্রুপের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘আমরা তো কোনো লাভ করছি না। কাজেই আমার মনে হয় না আরপিও লঙ্ঘন হয়েছে। আর আপনারা তো আগেও লিখেছেন। কিন্তু এমন কিছু তো প্রমাণ হলো না।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে আগাম টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাঁরা বারবার মৌখিকভাবে ও চিঠি দিয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। তবে এনামুল হকের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনা-ডোঙ্গা বলছে, আগাম টাকা না পাওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ও রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে রাজউকের সম্প্রসারিত উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে তিন শ্রেণীতে মোট ২০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারের মোট খরচ হবে নয় হাজার ৩০ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
প্রাথমিকভাবে ‘এ’ শ্রেণীতে ৭৯টি ভবনে ১২৫০ বর্গফুটের মোট ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট তৈরি হবে। এ জন্য গত বছরের শেষে দরপত্র আহ্বান করা হয়। অর্ধশত দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পেতে দরপত্রে অংশ নেয়। এর মধ্যে সাংসদ এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা প্রপার্টিজ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ডোঙ্গা এএইচ যৌথ কোম্পানি ২০ ভাগে (লট) ৪০টি ভবন তৈরির কাজ পায়। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি কোম্পানি ডিডিজের সঙ্গে যৌথভাবে ১১ ভাগে এনা পেয়েছে আরও ২১টি ভবন তৈরির কাজ।
আরেক সাংসদ নসরুল হামিদের মালিকানাধীন হামিদ কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে বিল্ডিং ফর ফিউচার (বিএফএল) যৌথভাবে আটটি ভাগে পেয়েছে ১৬টি ভবন নির্মাণের কাজ। নসরুল হামিদ আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি রিহ্যাবেরও সভাপতি। আনাম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে বাকি দুটি ভবন নির্মাণের কাজ।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ৭৯টি ভবন নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী, একেক লটে (দুটি ভবন) সরকারের খরচ হবে ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকা। প্রতিটি ভবন ১৬ তলা। বেইজমেন্ট ও কার পার্কিংয়ের জন্য দুটি তলা হবে। বাকি ১৪ তলার একেকটিতে ছয়টি করে মোট ৮৪টি ফ্ল্যাট থাকবে। ৭৯টি ভবনে ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট হবে। রাজউক ও গণপূর্ত অধিদপ্তর যৌথভাবে এই নির্মাণকাজ তদারকি করছে। স্থাপত্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর ভবনগুলোর নকশা তৈরি করছে।
এদিকে আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে ১ মার্চ থেকে এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দের ফরম দেওয়া হচ্ছে। তবে তিন দফায় সময় বাড়ানোর পরও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে আরেক দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক এম হাফিজউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলেছি, আইন প্রয়োগ করুন। কিন্তু কমিশন এ ব্যাপারে উদাসীন। অনেক সাংসদ গোপনে ব্যাবসা করেন। কেউ প্রকাশ্যে। আমার কথা হলো, এভাবে সরকারের সঙ্গে কোনো সাংসদের ব্যবসা করাটা অনৈতিক ও বেআইনি। এই চর্চা বন্ধ হওয়া উচিত।
অগ্রিম টাকা দাবি: রাজউক ও পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মার্চে সরকারের চুক্তি হলেও জানুয়ারি মাসেই তাদের কাজ পাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত আট মাসেও কাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভিত খননই (টেস্ট পাইলিং) চলছে। দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য মন্ত্রণালয় ও রাজউকের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও কাজে গতি নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। এরই মধ্যে জুলাইয়ের শেষে সাংসদ এনামুল হকের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনা-ডোঙ্গা চুক্তিবহির্ভূতভাবে একেকটি লটের জন্য দেড় থেকে দুই কোটি টাকা দাবি করে বসে। রাজউকের কাছে ১০টি লটের জন্য ২১ কোটি টাকা এবং গণপূর্তের কাছে ১০টি লটের জন্য ১৯ কোটি টাকা দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অগ্রিম অর্থ চেয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেটি দেওয়ার সুযোগ নেই। যেটুকু কাজ শেষ হবে, সেটুকুর বিল দিয়ে দেওয়া হবে।’ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে সচিব বলেন, ‘এটি আমাদের অগ্রাধিকার প্রকল্প। এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে কাজের পরিকল্পনা করেছি, সেভাবেই সব এগোচ্ছে।’
এনা-ডোঙ্গা যৌথ কোম্পানির কর্ণধার এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। আমরা এখানে কাজ করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এনেছি। এখন টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ চলছে। অথচ সরকার এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো টাকা দেয়নি। তাই আমরা মোবিলাইজেশন ফান্ড বাবদ পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ অগ্রিম অর্থ চেয়েছি।’ মোট কত টাকা চেয়েছেন জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ‘টেস্ট পাইলিংয়ের বিল ও অগ্রিম বাবদ ৪০ কোটি টাকা চেয়েছি।’
সরকারের সঙ্গে আরও ব্যবসা: এর আগেও আইনবহির্ভূতভাবে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এনামুল হক। তাঁর প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন পাওয়ার সল্যুশন লিমিটেড ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে রাজশাহীর কাটাখালীতে পাঁচ বছরের জন্য ৫০ মেগাওয়াট ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। তাঁর অপর প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ লিমিটেড ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে বহুতল সিটি সেন্টার নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে সিটি সেন্টার নির্মাণের চুক্তিতে সাংসদ নিজেই সই করেন। এ ধরনের ব্যবসা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী হওয়ায় সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংসদ ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিল দুদক।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কাজ পাওয়া অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো টাকা চেয়ে কোনো চিঠি না দিলেও বি ও সি শ্রেণীর ফ্ল্যাট নির্মাণের সময় যেন আগাম বিল দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন বিএফএল-এইচসিএল কোম্পানির কর্ণধার সাংসদ নসরুল হামিদ। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নসরুল হামিদ বলেন, তিনি এখন হজে আছেন। এ বিষয়ে এখন কোনো কথা বলতে পারবেন না।