ঢাকা, জানুয়ারি ২০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান চেষ্টার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী বিএনপির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার পর এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দল বলেছে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে অন্য কোনো পথে ক্ষমতা হস্তান্তর সমর্থন করে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে। অন্য কোনো পথে নয়। আমাদের সেনা বাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমরা একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী চাই।”
বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অভিযোগ এনেছেন- তা ‘অসত্য’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির ইন্ধনে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন ধর্মান্ধ কর্মকর্তা স¤প্রতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার প্রয়াস চালায়, যা সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রতিহত করা হয়েছে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ এনে বলেন, “তারা আন্দোলনের নামে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সরকারকে হুমকি দিচ্ছে।”
পল্টন বোমা হামলার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর শুক্রবার সকালে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
সেনা সদরের বক্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া চাইলে তিনি বলেন, “বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিশ্বাস করে বলেই আমরা স্বৈরাচার, এক নায়কতন্ত্র ও একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলি, কাজ করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হন্তান্তর হবে- এটাই আমরা চাই।’’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “সব সময় তিনি অসত্য কথা বলেন। সরকার প্রধানের এ ধরনের বক্তব্য গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা এ রকম বক্তব্যের নিন্দা জানাই।”
‘বর্তমান সরকারের সময়ে সেনা সদস্যদের গুম করা হচ্ছে’- গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে সেনা সদরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলও মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও প্রচারমূলক সংবাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিযোগ করে, যা সেনাবাহিনী তথা সচেতন নাগরিকদের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত উস্কানিমূলক বিতর্কের সৃষ্টি করে।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এ রকম বক্তব্য অনভিপ্রেত। যিনি তিন তিন বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, বিরোধী দলীয় নেতা আছেন, দেশের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে তিনি এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কাজ করেছেন, তার সম্পর্কে এ রকম বক্তব্য জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।”
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে বোমা হামলার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে এ রকম আরও কয়েকটি বোমা হামলা হয়েছে। এর কোনোটিরই তদন্ত করেনি তৎকালীন সরকার। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া দরকার।”
এর আগে তিনি বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে পল্টন বোমা হামলায় নিহতদের প্রতি শ্র্রদ্ধা জানান।
সিপিবি সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, দলের পলিট ব্যুরোর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র লীগ, যুব ইউনিয়ন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, বস্তিবাসী ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন, প্রগতিশীল ছাত্র জোট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন সকালে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে পল্টন বোমা হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।