সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের কারণে পদ্মা সেতু আর হচ্ছে না।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত
নিলেও বিশ্বব্যাংক তাতে সম্মত হয়নি। গতকাল দুদক ও বিশ্বব্যাংকের
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের আলোচনা কার্যত ভেঙে গেছে। দ্বিতীয় সফরের তৃতীয়
দফা আলোচনা শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর লুই গাব্রিয়েল
মোরেনো ওকাম্পো বলেন, ‘আর কিছু বলার নেই। আমরা বিমানবন্দরে যাচ্ছি।’ এর
পরই রাতে তারা ঢাকা ত্যাগ করেন। প্যানেলের সদস্যরা দুদক কার্যালয় ছাড়ার পর
কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটা
পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। এতে কিছুদিন সময় লাগলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে
না।’
মঙ্গলবার ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গতকাল চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছিল কমিশন। বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের তিন সদস্য দুদকের সঙ্গে গতকাল দু’দফা বৈঠক করেন। প্যানেলের সদস্যরা কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় আসতে না পেরে তারা বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ চান। অর্থমন্ত্রীর হেয়ার রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত হয় জরুরি বৈঠক। ওই বৈঠকে সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাসায় ওই জরুরি বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ। বৈঠক উপস্থিত থাকা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কথা বলবেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ‘নো কমেন্ট’ বলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দফা বৈঠকের পরও মামলায় আসামির প্রশ্নে দুদকের দেয়া আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি প্যানেল। মূলত দ্বিতীয় দফা সফরের তৃতীয় বৈঠকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নিক্সন চৌধুরীকে আসামি করা-না করা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। গতকাল বিকালের বৈঠকেই বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল একজন কমিশনারের আচরণকে চরম অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক বলে মন্তব্য করেন।
বিকালের বৈঠকে দুদক আইন ও বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে প্যানেলকে জ্ঞান দিতে চাইলে কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন দলের প্রধান ম্যারিনো ওকাম্পো। এ সময় প্যানেলের অপর দুই সদস্য টিমথি টং ও রিচার্ড ওন্ডারম্যান উভয়ই বাংলাদেশী আইন সম্পর্কে উল্টো দুদক কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেন যে, এ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব। এছাড়া এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা ও কানাডিয়ান তিন নাগরিককে আসামি করা নিয়েও প্যানেল ও কমিশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। প্যানেলের বক্তব্য ছিল, তাদের আসামি করা হলে বাংলাদেশের আদালতে তাদের বিচারের নিশ্চয়তা কীভাবে হবে; এতে মামলার গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া প্রথম বৈঠক শেষে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনও অনেক বিষয় অমীমাংসিত। কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি। আমাদের আভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বৈঠক শেষে আমরা আবার দুদকে আসব। ওই সময় আমরা বিস্তারিত কথা বলব।’
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিশ্বব্যাংকের প্যানেল সদস্যরা ফের দুদকে যান। কিন্তু ওই বৈঠক ছিল সম্পূর্ণ সৌজন্য রক্ষায়। তারা কমিশনের সঙ্গে দেখা করে ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিদায় নেন। অর্থমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক সমাপ্ত হওয়ার আগেই বের হয়ে যান অ্যালেন গোল্ডস্টেইন। সন্ধ্যায় তার ফের দুদকে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যাননি।
আগেই দুদক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পাওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে আসামির নামের তালিকা থেকে সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল হাসান ও নিক্সন চৌধুরীর নাম বাদ দিয়ে ৭ জনকে আসামি করে এজাহার তৈরি করে দুদক। এ এজাহার গতকালই থানায় দায়েরের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্যানেলের আপত্তিতে এ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কমিশন কার্যালয় ত্যাগ করেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, কমিশনার শাহাবুদ্দীন চুপ্পু ও দুদকের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। সাংবাদিকরা তাদের ঘিরে ধরলে কথা বলেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, কমিশনের অনুসন্ধান দল প্রতিবেদনটি ফের পর্যালোচনা করবে। তারা আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের অবহিত করেছে। পরস্পরের মধ্যে মতামতের আদান-প্রদান হয়েছে। এসব মতামতের আইনি ব্যাখ্যা জানার জন্য আমাদের তদন্ত দল ফের নিরীক্ষা করবেন। তারপর আমরা আইনি মতামত, প্রতিবেদন বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আইনি ব্যবস্থা নেব।’ কমিশনের সঙ্গে প্যানেলের যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো খুবই গোপনীয়। আমাদের প্রতিবেদনে যেসব তথ্য এসেছে, তা সম্পূর্ণভাবে আমাদের আইনের আলোকে হয়েছে। এখানে মতপার্থক্য থাকলেও মতবিরোধ হয়নি।
দু-একদিনের মধ্যেই আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল কমিশন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিশন বলেন, প্রতিবেদনটি পুনঃপর্যালোচনা করে কমিশন আইনি ব্যবস্থা নেবে। তাতে যদি কয়েক দিন সময় লাগে, তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করা আসামির সংখ্যা ১০-এর কম উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, পর্যালোচনা শেষে সেটা বলা হবে না। আমরা পুরো বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করব। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী। সেখানে বিশ্বব্যাংক কী বলল, প্যানেল কী বলল, এতে দুদকের কিছু আসে যায় না।
অনুসন্ধান টিম দীর্ঘ এক বছরের অনুসন্ধানে কমপক্ষে ৩১ ব্যক্তিকে দুই থেকে তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। সর্বশেষ তারা মঙ্গলবার ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলার সুপারিশ করে। তারা হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নিক্সন চৌধুরী, টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব ও সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস, টেন্ডার কমিটির সদস্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় এজেন্ট জিয়াউল হক, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, এসএসনি-লাভালিনের আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক রমেশ সাহা ও একই বিভাগের সাবেক পরিচালক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ ইসমাইল, এসএনসি-লাভালিনের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রধান গোলাম মোস্তফার নামে মামলার সুপারিশ করে।
মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিলের পর গত দু’দিনে দফায় দফায় কমিশনের দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের নানামুখী চাপে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরীর নাম বাদ দিয়ে ওই প্রতিবেদনটি কাটছাঁট করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান টিম ও কমিশনের সঙ্গেও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু অপর কমিশনার শাহাবুদ্দীন চুপ্পু তাতে ভেটো দেন।
সূত্র জানায়, দুদকের তদন্ত দলের প্রতিবেদনে যেসব ধারায় মামলার সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধের জন্য বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০(খ), দুর্নীতির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দণ্ডবিধির ৫১১ ধারা, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও পরস্পর যোগসাজশে অপরাধটি সংগঠনের জন্য দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা।
প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার ডায়েরিতে নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষের বিষয়ে তার নাম রয়েছে। এছাড়া তিনি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায় এড়াতে পারেন না। কয়েকজন তার বিষয়ে পরোক্ষ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আবুল হাসান চৌধুরীর বিষয়ে বলা হয়, তিনি সেতু ভবনে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনি এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তদবিরকারী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে নিয়ে গেছেন। রমেশ সাহার ডায়েরিতে ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দাবির সঙ্গে তার নামটিও জড়িয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় সংসদের হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে বলা হয়, তিনি সরকারি কাজে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নন। অথচ তিনি লাভালিনের পক্ষে দেনদরবার করতে সেতু ভবনে যাতায়াত করতেন। রমেশ সাহার ডায়েরিতে তার নামও রয়েছে। এছাড়া তিনি লাভালিনের কর্মকর্তা ইসমাইলের কাছ থেকে একটি কানাডিয়ান ভিসা নিয়েছেন। সম্প্রতি পদ্মা কেলেঙ্কারির কারণে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, আইনানুগভাবে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি চার চারবার ভাঙা-গড়ার দায়দায়িত্ব তার। তিনি সেতুর পরামর্শক সংস্থার কাজ যাতে এসএনসি-লাভালিন পায়, সেটার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। সেতু প্রকল্পের সাবেক সচিব রফিকুল ইসলামসহ অন্তত চারজন সাক্ষী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে বলেছেন, কানাডিয়ান কারিগরি প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। অথচ তাদের কাজ দিতেই চারবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ভাঙা হয়েছে।
সেতুর টেন্ডার মূল্যায়ন সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌস সম্পর্কে বলা হয়, তিনি কমিটির সব তত্পরতার খবর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গোপনে জানিয়ে দিতেন। এসএনসি-লাভালিনকে কার্যাদেশ দিতে তত্পরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি চার নম্বর কমিটির প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরীকেও প্রথম বিবেচিত হওয়া হলক্রো নামের প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে তার কমিটিকে বিভ্রান্ত করেছেন।
টেন্ডার কমিটির সদস্য ও সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ জাবেরের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশে বলা হয়, তিনিও লাভালিনের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করেছেন। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের পেছনে তারও ইন্ধন ছিল। এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. মোস্তফাকে আসামি করার বিষয়ে বলা হয়, লাভালিনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এলে তিনি মন্ত্রী-সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করানোর কাজটি করেন। লাভালিন অযোগ্য প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এ প্রতিষ্ঠান যাতে কাজ পায়, সেজন্য দেনদরবার করেছেন।
লাভালিনের তিন কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, তারা এদেশে এসে মন্ত্রী-সচিবসহ সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী গ্রুপটির সঙ্গে একান্তে দেখা করেছেন। তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে নিজেদের পক্ষে কাজ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। রমেশের ডায়েরিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ ৬ জনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। বিচার শুরু হলে কানাডিয়ান আদালতের রায়টি সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ অন্তত ৪০ জনকে মামলার সাক্ষী করার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকালে রফিকুল ইসলামের বিষয়ে যদি অধিকতর তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তাকে সাক্ষী করার পরিবর্তে আসামি করা হতে পারে—এমন কথা বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গতকাল চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছিল কমিশন। বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের তিন সদস্য দুদকের সঙ্গে গতকাল দু’দফা বৈঠক করেন। প্যানেলের সদস্যরা কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় আসতে না পেরে তারা বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ চান। অর্থমন্ত্রীর হেয়ার রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত হয় জরুরি বৈঠক। ওই বৈঠকে সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাসায় ওই জরুরি বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ। বৈঠক উপস্থিত থাকা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কথা বলবেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ‘নো কমেন্ট’ বলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দফা বৈঠকের পরও মামলায় আসামির প্রশ্নে দুদকের দেয়া আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি প্যানেল। মূলত দ্বিতীয় দফা সফরের তৃতীয় বৈঠকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নিক্সন চৌধুরীকে আসামি করা-না করা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। গতকাল বিকালের বৈঠকেই বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল একজন কমিশনারের আচরণকে চরম অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক বলে মন্তব্য করেন।
বিকালের বৈঠকে দুদক আইন ও বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে প্যানেলকে জ্ঞান দিতে চাইলে কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন দলের প্রধান ম্যারিনো ওকাম্পো। এ সময় প্যানেলের অপর দুই সদস্য টিমথি টং ও রিচার্ড ওন্ডারম্যান উভয়ই বাংলাদেশী আইন সম্পর্কে উল্টো দুদক কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেন যে, এ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব। এছাড়া এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা ও কানাডিয়ান তিন নাগরিককে আসামি করা নিয়েও প্যানেল ও কমিশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। প্যানেলের বক্তব্য ছিল, তাদের আসামি করা হলে বাংলাদেশের আদালতে তাদের বিচারের নিশ্চয়তা কীভাবে হবে; এতে মামলার গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া প্রথম বৈঠক শেষে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনও অনেক বিষয় অমীমাংসিত। কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি। আমাদের আভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বৈঠক শেষে আমরা আবার দুদকে আসব। ওই সময় আমরা বিস্তারিত কথা বলব।’
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিশ্বব্যাংকের প্যানেল সদস্যরা ফের দুদকে যান। কিন্তু ওই বৈঠক ছিল সম্পূর্ণ সৌজন্য রক্ষায়। তারা কমিশনের সঙ্গে দেখা করে ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিদায় নেন। অর্থমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক সমাপ্ত হওয়ার আগেই বের হয়ে যান অ্যালেন গোল্ডস্টেইন। সন্ধ্যায় তার ফের দুদকে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যাননি।
আগেই দুদক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পাওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে আসামির নামের তালিকা থেকে সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল হাসান ও নিক্সন চৌধুরীর নাম বাদ দিয়ে ৭ জনকে আসামি করে এজাহার তৈরি করে দুদক। এ এজাহার গতকালই থানায় দায়েরের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্যানেলের আপত্তিতে এ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কমিশন কার্যালয় ত্যাগ করেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, কমিশনার শাহাবুদ্দীন চুপ্পু ও দুদকের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। সাংবাদিকরা তাদের ঘিরে ধরলে কথা বলেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, কমিশনের অনুসন্ধান দল প্রতিবেদনটি ফের পর্যালোচনা করবে। তারা আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের অবহিত করেছে। পরস্পরের মধ্যে মতামতের আদান-প্রদান হয়েছে। এসব মতামতের আইনি ব্যাখ্যা জানার জন্য আমাদের তদন্ত দল ফের নিরীক্ষা করবেন। তারপর আমরা আইনি মতামত, প্রতিবেদন বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আইনি ব্যবস্থা নেব।’ কমিশনের সঙ্গে প্যানেলের যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো খুবই গোপনীয়। আমাদের প্রতিবেদনে যেসব তথ্য এসেছে, তা সম্পূর্ণভাবে আমাদের আইনের আলোকে হয়েছে। এখানে মতপার্থক্য থাকলেও মতবিরোধ হয়নি।
দু-একদিনের মধ্যেই আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল কমিশন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিশন বলেন, প্রতিবেদনটি পুনঃপর্যালোচনা করে কমিশন আইনি ব্যবস্থা নেবে। তাতে যদি কয়েক দিন সময় লাগে, তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করা আসামির সংখ্যা ১০-এর কম উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, পর্যালোচনা শেষে সেটা বলা হবে না। আমরা পুরো বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করব। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী। সেখানে বিশ্বব্যাংক কী বলল, প্যানেল কী বলল, এতে দুদকের কিছু আসে যায় না।
অনুসন্ধান টিম দীর্ঘ এক বছরের অনুসন্ধানে কমপক্ষে ৩১ ব্যক্তিকে দুই থেকে তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। সর্বশেষ তারা মঙ্গলবার ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলার সুপারিশ করে। তারা হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নিক্সন চৌধুরী, টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব ও সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস, টেন্ডার কমিটির সদস্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় এজেন্ট জিয়াউল হক, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, এসএসনি-লাভালিনের আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক রমেশ সাহা ও একই বিভাগের সাবেক পরিচালক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ ইসমাইল, এসএনসি-লাভালিনের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রধান গোলাম মোস্তফার নামে মামলার সুপারিশ করে।
মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিলের পর গত দু’দিনে দফায় দফায় কমিশনের দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের নানামুখী চাপে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরীর নাম বাদ দিয়ে ওই প্রতিবেদনটি কাটছাঁট করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান টিম ও কমিশনের সঙ্গেও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু অপর কমিশনার শাহাবুদ্দীন চুপ্পু তাতে ভেটো দেন।
সূত্র জানায়, দুদকের তদন্ত দলের প্রতিবেদনে যেসব ধারায় মামলার সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধের জন্য বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০(খ), দুর্নীতির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দণ্ডবিধির ৫১১ ধারা, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও পরস্পর যোগসাজশে অপরাধটি সংগঠনের জন্য দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা।
প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার ডায়েরিতে নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষের বিষয়ে তার নাম রয়েছে। এছাড়া তিনি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায় এড়াতে পারেন না। কয়েকজন তার বিষয়ে পরোক্ষ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আবুল হাসান চৌধুরীর বিষয়ে বলা হয়, তিনি সেতু ভবনে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনি এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তদবিরকারী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে নিয়ে গেছেন। রমেশ সাহার ডায়েরিতে ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দাবির সঙ্গে তার নামটিও জড়িয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় সংসদের হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে বলা হয়, তিনি সরকারি কাজে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নন। অথচ তিনি লাভালিনের পক্ষে দেনদরবার করতে সেতু ভবনে যাতায়াত করতেন। রমেশ সাহার ডায়েরিতে তার নামও রয়েছে। এছাড়া তিনি লাভালিনের কর্মকর্তা ইসমাইলের কাছ থেকে একটি কানাডিয়ান ভিসা নিয়েছেন। সম্প্রতি পদ্মা কেলেঙ্কারির কারণে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, আইনানুগভাবে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি চার চারবার ভাঙা-গড়ার দায়দায়িত্ব তার। তিনি সেতুর পরামর্শক সংস্থার কাজ যাতে এসএনসি-লাভালিন পায়, সেটার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। সেতু প্রকল্পের সাবেক সচিব রফিকুল ইসলামসহ অন্তত চারজন সাক্ষী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে বলেছেন, কানাডিয়ান কারিগরি প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। অথচ তাদের কাজ দিতেই চারবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ভাঙা হয়েছে।
সেতুর টেন্ডার মূল্যায়ন সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌস সম্পর্কে বলা হয়, তিনি কমিটির সব তত্পরতার খবর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গোপনে জানিয়ে দিতেন। এসএনসি-লাভালিনকে কার্যাদেশ দিতে তত্পরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি চার নম্বর কমিটির প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরীকেও প্রথম বিবেচিত হওয়া হলক্রো নামের প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে তার কমিটিকে বিভ্রান্ত করেছেন।
টেন্ডার কমিটির সদস্য ও সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ জাবেরের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশে বলা হয়, তিনিও লাভালিনের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করেছেন। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের পেছনে তারও ইন্ধন ছিল। এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. মোস্তফাকে আসামি করার বিষয়ে বলা হয়, লাভালিনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এলে তিনি মন্ত্রী-সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করানোর কাজটি করেন। লাভালিন অযোগ্য প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এ প্রতিষ্ঠান যাতে কাজ পায়, সেজন্য দেনদরবার করেছেন।
লাভালিনের তিন কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, তারা এদেশে এসে মন্ত্রী-সচিবসহ সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী গ্রুপটির সঙ্গে একান্তে দেখা করেছেন। তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে নিজেদের পক্ষে কাজ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। রমেশের ডায়েরিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ ৬ জনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। বিচার শুরু হলে কানাডিয়ান আদালতের রায়টি সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ অন্তত ৪০ জনকে মামলার সাক্ষী করার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকালে রফিকুল ইসলামের বিষয়ে যদি অধিকতর তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তাকে সাক্ষী করার পরিবর্তে আসামি করা হতে পারে—এমন কথা বলা হয়েছে।